বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীরা তাদের আবেদনের সমর্থনে সত্য বিবৃতি দেয়নি মর্মে যদি কোনো ইমিগ্রেশন জজ সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দেন, তাহলে প্রার্থীদের বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য ধরে নেয়া হবে বলে ক্যালিফোর্নিয়ার নাইনথ সার্কিট কোর্টের রায়কে খারিজ করেছে। সুপ্রীম কোর্ট। সুপ্রীম কোর্ট বিচারপতিরা গত ২৫ মে মঙ্গলবার ৯-০ রায়ে বলেছেন যে, কংগ্রেস প্রণীত আইনে ইমিগ্রেশন জজদের প্রায়শ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য যাচাই করে আবেদনকারী আশ্রয় লাভের যোগ্য কিনা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে তা সঙ্গত বলে মনে করা যায় না।
বিচারপতি নীল এম গরসাচ তার রায়ে লিখেছেন, “বহু বছর ধরে এবং অনেক আপত্তির পর নাইনথ সার্কিট কোর্ট এই ধারণায় উপনীত হয়েছে যে, “‘আবেদনকারীর বক্তব্যে সুস্পষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতির আমাদেরকে অবশ্যই আবেদনকারীর বক্তব্যকে সত্য অথবা কমপক্ষে ব্শ্বিাসযোগ্য বলে ধরে নেব।’” কিন্তু আইনটি যথাযথ নয় এবং এর দ্বারা এসাইলাম আবেদনকারী ইমিগ্রান্টরা ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ অর্থ্যাৎ সন্দেহ থেকে সুবিধা পেতে পারে। ইমিগ্রেশন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচারিক পর্যালোচনাকে কংগ্রেস অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সীমাবদ্ধ রেখেছে।” ‘গারল্যান্ড বনাম মিং দাই’ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সার্কিট কোর্ট এর ওপর রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি গরসাচ একথা লিখেন।
সাধারণত একজন ইমিগ্রেশন জজ এসাইলাম আবেদনকারীর বক্তব্য এবং সরকার পক্ষের বক্তব্য শোনেন। সরকার পক্ষ আবেদনকারীর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় লাভের জন্য দেখানো কারণগুলোর ওপর সন্দেহ পোষণ করে এবং প্রশ্ন তোলে। ইমিগ্রেশন জজ সবকিছু যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেন যে আবেদনকারী এসাইলাম পাওয়ার যোগ্য কিনা এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তিনি তার সিদ্ধান্তে একথা বলেন না যে আবেদনকারীর বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য অথবা বিভ্রান্তমূলক কিনা। ইমিগ্রেশন জজ এবং বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিল যদি এসাইলাম আবেদন নাকচ করে সেক্ষেত্রে আবেদনকারী আপিল কোর্টে তার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন। নাইনথ সার্কিট কোর্ট মিং দাইয়ের মামলায় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে যে, ইমিগ্রেশন কোর্টে অনুকূল সিদ্ধান্ত লাভে ব্যর্থ কোনো এসাইলাম আবেদনকারীর বক্তব্য যদি পরস্পর বিরোধীও হয়, এবং ইমিগ্রেশন জজ ও বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিল যদি তার বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত না দেয়, সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য বলে বিবেচনা করা হবে।
মামলার বিবরণী অনুযায়ী, চাইনিজ নাগরিক মিং দাই একজন শরণার্থী হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন এবং তার আবেদনের সমর্থনে দেয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, তিনি ও তার পরিবার চীনের বাধ্যতামূলক গর্ভপাতের নীতির কারণে নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন যে তার ২০০৯ সালে তার স্ত্রী দ্বিতীয়বার গর্ভধারণ করলে তার স্ত্রীকে অপহরণ করে মারধোর করা হয়। তিনি নিবেদন করেছিলেন যে, “অনুগ্রহ করে আমার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন অনুমোদন করুন, যাতে আমি আমার স্ত্রী ও কন্যাকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে পারি।” বিচারপতি নীল গরসাচ লিখেছেন, “মিং দাইকে যখন প্রশ্ন করে তাকে ‘প্রকৃত সত্য’ বলতে চাপ দেয়া হয়, তখন তিনি স্বীকার করেন যে, তার কন্যা স্কুলে যাওয়ার জন্য চীনে ফিরে গেছে এবং তার স্ত্রী চীনে তার চাকুরিতে যোগ দেওয়া ও তার পিতার দেখাশোনার জন্য চীনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। চীনে মিং দাইয়ের কোনো চাকুরি ছিল না, সে কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যান।”
একজন ইমিগ্রেশন জজ মিং দাই এর এসাইলাম আবেদন বাতিল করেন। বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিল তার এসাইলাম আবেদন মঞ্জুর করতে সম্মত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দাই এর আবেদনের মূল কাহিনিতে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে মর্মে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। মিং দাই নাইনথ সার্কিট কোর্টে আপিল করার পর সার্কিট কোর্ট উল্লেখ করে যে, দাই যেসব কারণ দর্শিয়ে এসাইলামের জন্য আবেদন করেছেন সেগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য বলে বিবেচনা করা যেতে পারে, এবং তার এসাইলাম অনুমোদন করা হয়।
দ্বিতীয় এক মামলার বিবরণী অনুযায়ী মেক্সিকান নাগরিক সিজার আলকারজ-এনরিকুয়েজ যখন অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন তখন তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান যে তিনি যদি মেক্সিকো ফিরে যান তাহলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে। ইমিগ্রেশন এজেন্টরা একটি প্রবেশন রিপোর্ট থেকে জানতে পারেন যে, সিজার ক্যালিফোর্নিয়ায় তার বান্ধবীকে অপহরণ ও প্রহার করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তিনি ইমিগ্রেশন এজেন্টদের বলেন যে আসলে তিনি মেয়েটিকে খুব জোরে আঘাত করেননি এবং মেয়েটির হাত থেকে তার কন্যাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। দলিল প্রমাণ যাচাইয়ের পর ইমিগ্রেশন জজ তাকে ডিপোর্ট করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। কিন্তু নাইনথ সার্কিট কোর্ট তার আবেদন মঞ্জুর করে। উভয় মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্ট লক্ষ্য করেছে যে সার্কিট কোর্ট বিচারকরা এসাইলাম মঞ্জুরের ব্যাপারে অসম্মতি জানায়। ইমিগ্রেশন ইস্যুতে সুপ্রীম কোর্ট গত দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা নাইনথ সার্কিট কোর্টের সিদ্ধান্তকে সর্বসম্মতভাবে খারিজ করলো।
Posted ৪:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh