বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন এতটা কঠিন এর আগে আর কখনো লাগেনি। জুনের গোড়ায় চালানো জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, তিনি জো বাইডেনের চেয়ে মাত্র ছয় পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছেন। এই ঘাটতি সামলে নেওয়া কঠিন কিছু না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ, অর্থনৈতিক সংকট এবং কভিড-১৯-এর সংক্রমণ দুই প্রার্থীর মধ্যকার এই ব্যবধানকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প এখন ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে আছেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘জো বাইডেন হয়তো প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। কারণ কিছু মানুষ আমাকে একেবারেই পছন্দ করে না।’ দি ইকোনমিস্টের নির্বাচনী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা প্রতি ৯ পয়েন্টে একটি করে, যা গত মাসেও ছিল প্রতি ৫ পয়েন্টে একটি করে।
তিনটি কারণে ট্রাম্পকে ভুগতে হচ্ছে। প্রথমত, তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের তীব্র সমালোচনা করতে পছন্দ করেন। গত নির্বাচনে তিনি হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে সফলভাবে কাজটি করতে সক্ষম হন। ইউগভের সমীক্ষা অনুসারে ট্রাম্প ৩৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানের পছন্দে ছিলেন। হিলারি ছিলেন ৪১ শতাংশের। মূলত শ্বেতাঙ্গদের ভোটেই নির্বাচিত হন ট্রাম্প। গতবার ট্রাম্পের সমালোচনার কৌশল কাজে লেগে যায়। একই কৌশল এবারও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। তবে সফল হননি। হিলারির তুলনায় বাইডেনের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। মহামারীর ব্যবস্থাপনায় প্রেসিডেন্টের ব্যর্থতা থেকে বলে দেওয়া যায়, তাঁর উন্নতি করার সুযোগ কম।
দ্বিতীয়ত, কভিড-১৯-এর কারণে এবার আর ট্রাম্পের পাশে নেই বয়স্ক ভোটাররা। ইউগভের তথ্যানুসারে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ভোটাররা এবার বাইডেনের ব্যাপারে আগ্রহী। হিলারি এই অংশের সমর্থন পাননি। পাশাপাশি শ্বেতাঙ্গদের সমর্থনও হারাচ্ছেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে বাইডেন এখন তাঁর চেয়ে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অভিজাত নয় এমন শ্বেতাঙ্গ ভোটারদেরও সমর্থন হারাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাঁরাই ট্রাম্পের জন্য দুর্গ গড়ে তোলেন। তাঁদের সমর্থন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ঝুঁকেছে ৮ শতাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ৬ শতাংশ। সংখ্যায় কম, তবে জয় নিয়ে ঝুঁকি থাকায় এই পরিবর্তনগুলোও ট্রাম্পকে ভোগাতে পারে। খ্রিস্টানদের মধ্যেও ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন কমছে।
অভিজাত নয় এমন শ্বেতাঙ্গদের ভোট কেন কমছে তা স্পষ্ট নয়। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ডেমোক্রেটিক পার্টিতে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী বার্ণী স্যান্ডার্সের প্রতিও এই ভোটারদের আস্তা গত ডিসেম্বর থেকেই কমছিল। বিষয়টি এমন হতে পারে, বাইডেন হয়তো কোনোভাবে তাঁদের প্রভাবিত করতে পেরেছেন, যা ট্রাম্প পারছেন না বা এর আগেরবার হিলারি পারেননি। এই শ্রেণির ভোটাররা রক্ষণশীল। তাঁরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নারী প্রার্থীকে সমর্থন করেন না।
তবে কারণ যা-ই হোক, ট্রাম্পের ভোটের ঘাঁটিতে ভাঙন ধরেছে। তাঁর আমলে বর্ণবিদ্বেষ বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের তৎপরতা এবং মন্তব্য সংকটকে আরো গভীর করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৪ শতাংশের বেশি মানুষ বিষয়টিকে এভাবেই দেখছেন। ট্রাম্প করোনাভাইরাস সংকট সামাল দিতে পারছেন না মনে করেন ২২ শতাংশের বেশি অংশগ্রহণকারী।
ট্রাম্পের সহযোগীদের ধারণা, সিদ্ধান্ত নেননি এমন ভোটারদের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের ঝুলিতে আসতে পারে। আর গতবারের মতোই তাঁদের পক্ষে থাকতে পারে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটগুলো। আবার গতবার যেমন জেমস কমি (এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক) ট্রাম্পের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন, এবারও তেমন কিছু ঘটে যেতে পারে। ভোটের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে কমি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বহু ভোটারের মন তখনই ট্রাম্পের দিকে ঘুরে যায়। এবারও তেমন কোনো চমকের প্রত্যাশা করছেন প্রেসিডেন্টের সহযোগীরা।
এবার সিদ্ধান্ত নেননি এমন ভোটারদের মধ্যে তরুণ, অশ্বেতঙ্গ ও কলেজ পাস করা মানুষের সংখ্যা বেশি (এঁরা ডেমোক্রেটিক পার্টির দিকেই ঝোঁকে)। বর্ণবিদ্বেষ, কভিড-১৯ ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এঁরা ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।
বহু রাজনৈতিক পণ্ডিতের কাছেই গতবার ট্রাম্পের জয় ছিল একটি বিশাল চমক। কমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে একই অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। তবে সে সময় দি ইকোনমিস্টের পূর্বাভাসে বিষয়টিকে চমক হিসেবে দেখানো হয়নি। ট্রাম্পকেই জয়ী হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এবার ঠিক উল্টো ফল এসেছে। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা মাত্র ১১ শতাংশ। ট্রাম্প যদি বর্তমান পরিস্থিতির মোড় ফেরাতে চান, তাহলে তাঁকে কভিড-১৯ নিয়ে কাজ এবং কথাÑদুয়েই পরিবর্তন আনতে হবে, বর্ণবৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে, অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে হবে। এই অসম্ভবগুলো সম্ভব করার পর হয়তো জরিপগুলো তাঁর পক্ষে কথা বলতে শুরু করবে।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
Posted ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh