রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

কথা বলার ধরণ আল্লাহ শিখালেন

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

কথা বলার ধরণ আল্লাহ শিখালেন

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে কথা বলতে হবে তা শিখিয়েছেন। মানুষ সামাজিক জীব হিসাবে তার পুরো জীবন যোগাযোগ নির্ভর। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর আবার ঘুম যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। নিজের প্রয়োজনে বা সমাজের প্রয়োজনে তাকে যোগাযোগ করেতই হয়। যোগাযোগ ছাড়া কোন মানুষ সমাজে টিকে থাকতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ মানুষকে যোগাযোগের ধরণ, কিভাবে কথা বলতে হবে এবং কার সাথে কি ধরনের আচরণ করতে হবে, তা তিনি আল কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে শিখিয়েছেন।

প্রথমত: যোগাযোগের সময় কথা বলার আগে সালাম দিতে হবে। সালাম সামাজিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপুর্ণ আচরণ। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এ জানান দেয়া হয় যে, আমি তোমার একজন প্রকৃত কল্যাণকামী। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“তবে গৃহে প্রবেশ করার সময় তোমরা লোকদের সালাম করো, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়েছে কল্যাণের দোয়া, বড়ই বরকতপূর্ণ ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ তোমাদের সামনে আয়াত বর্ণনা করেন আশা করা যায় তোমরা বুঝে শুনে কাজ করবে।”(সুরা নুর:৬১)

২.দ্বিতীয়ত: কথা বলার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ প্রতিটি কথাই রেকর্ড হচ্ছে। মুখ থেকে যেন এমন কথা যেন বেরিয়ে না আসে পরিণাম যার ভয়াবহ হতে পারে। বিশেষত: মিথ্যা ও অন্যায় কথা যেন বের না হয়। যার সাথে কথা বলা হচ্ছে সে হয়তো জানে না এবং আপনার বাক পটুতা বা মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে কাজটি করে দিচ্ছেন কিন্তু আল্লাহ নিজে সরাসরি মানুষের প্রতিটি গতিবিধি এবং চিন্তা ও কল্পনা সম্পর্কে অবহিত তদুপুরি তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য দু’জন সম্মানিত ফেরেশেতা নিয়োজিত করেছেন। তাঁরা তাদের কথা ও কাজ রেকর্ড করে যাচ্ছেন। সুতরাং কথা বলার সময় সাবধান হোন এবং ন্যায় ও ন্যায্য কথা বলুন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“এমন কোন শব্দ মুখ থেকে বের হয় না যা সংরক্ষিত করার জন্য একজন সদা প্রস্তুত রক্ষক উপস্থিত থাকে না।”(সুরা ক্বাফ:১৮)

৩.তৃতীয়ত: সুন্দর ও উত্তমভাবে কথা বলতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“লোকদেরকে ভালো কথা বলবে।”(সুরা বাকারা:৮৩) একজন মুমিন এমন কথা বলা উচিত নয়, যা একটি মারাত্মক বোমার চেয়েও ক্ষতিকর। একটি বোমা নির্দিষ্ট কিছু লোকের জান-মালের ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু একটি খারাপ কথা সমাজ ভাঙ্গনের কার্যকরী হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে থাকে। সমাজকে বিভিষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখী করে। সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধের স্থান দখল করে নেয় হিংসা-হানাহানি, বিদ্বেষ আর অহংবোধ। আর এর ফলে মানুষ চরম দুঃখ-দূর্দশার সম্মুখীন হয়। অথচ একজন মুমিন কখনো অন্য একজন মু’মিনকে কষ্ট দিতে পারে না। সে কথাটি যদি আবার সঠিক না হয়, কিংবা সেটি লক্ষ লক্ষ মানুষের মনোকষ্টের কারণ হয়, তাহলে ব্যাপারটি আরো মারাত্মক। কারন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্ল­াহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবাণী করা হবে।”(সুরা হুজরাত ঃ ১০) “ মানুষ খারাপ কথা বলে বেড়াক, তা আল্ল­াহ তা’আলা পছন্দ করেন না। তবে কারো জুলুম করা হলে তার কথা স্বতন্ত্র। আর আল্ল­াহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।”(সুরা নিসা ঃ ১৪৮)

৪. চতুর্থত: বাজে ও অর্থহীন কথা থেকে বিরত থাকতে হবে। সফলকাম মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,“যারা বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে।”(সুরা মু’মিনুন:৩) কুরআনের বহু আয়াত ও হাদীসে মন্দ কথা উচ্চারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে যারা আল্ল­াহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান রাখেন, মন্দ কথা থেকে বিরত থাকা তাদের ঈমানী দায়িত্ব। কারণ কালিমা তাইয়েরা পৃথিবীর সর্বোত্তম কথা। এ কালিমাটি যিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করেন, তার চরিত্রে একদিকে ভালো কথা, ভালো চিন্তা ও আচরণ, অন্য দিকে মন্দ কথা, মন্দ চিন্তা বা আচরণ একই সাথে সমান্তরাল বিরাজ করতে পারে না।

৫. কন্ঠ স্বর নিচু রাখতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ এবং নিজের আওয়াজ নীচু রাখো।”(সুরা লোকমান:১৯) আওয়াজ নীচু রাখা এবং গাধার আওয়াজে কথা না বলা স্থান-কালের সাথে সম্পর্কিত। গাধার আওয়াজ বলতে কর্কশ ভাষা বুঝায়। এর দ্বারা অহংকার প্রকাশ, ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যকে অপমানিত ও সন্ত্রস্ত করার জন্য গলা ফাটিয়ে গাধার মতো বিকট স্বরে কথা বলা বুঝায়। আর এটিকেই এখানে মূলত: নিষেধ করা হয়েছে।

৬.. গাধার মতো কর্কশ স্বরে কথা বলবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাঁধার আওয়াজ।” (সুরা লোকমান:১৯) এর মানে এ নয় যে মানুষ সবসময় আস্তে নীচু স্বরে কথা বলবে এবং কখনো জোরে কথা বলবে না। বরং গাধার আওয়াজের সাথে তুলনা করে কোন ধরনের ভাব-ভঙ্গিমা ও কোন ধরনের আওয়াজে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে তা পরিস্কার করে বলে দেয়া হয়েছে। ভঙ্গী ও আওয়াজের এক ধরনের নিম্নগামিতা ও উচ্চগামিতা এবং কঠোরতা ও কোমলতা হয়ে থাকে স্বাভাবিক ও প্রকৃত প্রয়োজনের খাতিরে। যেমন কাছের বা কম সংখ্যক লোকের সাথে কথা বললে আস্তে ও নীচু স্বরে বলবেন। দুরের অথবা অনেক লোকের সাথে কথা বলতে হলে অবশ্যই জোরে বলতে হবে। উচ্চারণভঙ্গীর ফারাকের ব্যাপারটিও এমনি স্থান-কালের সাথে জড়িত। প্রশংসা বাক্যের উচ্চারণভঙ্গী নিন্দা বাক্যের উচ্চারণভঙ্গী থেকে এবং সন্তোষ প্রকাশের কথার ঢং এবং অসন্তোষ প্রকাশের কথার ঢং বিভিন্ন হওয়াই উচিত। অনেক লোকের ভীড়ে তৃতীয় কোন ব্যক্তির সাথে মোবাইলে উচ্চ স্বরে কথা বলা এ পর্যায়ের বিবেচনাহীনতার বহি:প্রকাশ। প্রকৃত আপত্তিকর বিষয়টি হচ্ছে অহংকার প্রকাশ, ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যকে অপমানিত ও সন্ত্রস্ত করার জন্য গলা ফাটিয়ে গাধার মতা বিকট স্বরে কথা বলা।

৭. মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলো না।” (সুরা লোকমান:১৮) মানুষ দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলা আত্মম্ভরী ও অহংকারীর লক্ষণ। আরবী ভাষায় ‘সা’আর’ একটি রোগকে বলা হয়। এ রোগটি হয় উটের ঘাড়ে। এ রোগের কারণে উট তার ঘাড় সবসময় একদিকে ফিরিয়ে রাখে। এ থেকেই —-“অমুক ব্যক্তি উটের মতো তার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” অর্থাৎ অহংকারপূর্ণ ব্যবহার করলো এবং মুখ ফিরিয়ে কথা বললো। তাছাড়া যার সাথে কথা সে ব্যক্তি নিজেকে অপমান বোধ মনে করেন। তাই মানুষের দিক থেকে ফিরিয়ে কথা বলা যাবে না।

৮. বুদ্ধি ও চিন্তা ব্যবহার করে কথা বলতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও।”( সুরা নাহল:১২৫) জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার মানে হচ্ছে, নির্বোধদের মত চোখ বন্ধ করে দাওয়াত প্রচার করবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন-মানস, যোগ্যতা ও অবস্থার প্রতি নজর রেখে এবং এ সংগে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে।

একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নেয়া যাবে না। যে কোন ব্যক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে তারপর এমন যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে যা তার মন মস্তিস্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। সুদপদেশ মানে শুধু যুক্তি প্রমাণ নয় বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে।

৯. মুর্খ ও অজ্ঞদের সাথে ঝগড়া করা যাবে না বরং শান্তভাবে তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“রহমানের বান্দা তরাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয় তোমাদের সালাম।” (সুরা ফুরকান:৬৩) মুর্খ মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবার উদ্যেগ নিয়েছে এবং কোন ভদ্রলোকের সাথে অশালীন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। রহমানের বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। এভাবে প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে তারাও সমানে বেহুদাপনা করে না। বরং যারাই তাদের সাথে এহেন আচরণ করে তাদের সালাম দিয়ে তারা অগ্রসর হয়ে যায়।

Posted ১:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(865 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.