বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৭ নভেম্বর একদিনেই প্রাণহানি ঘটেছে ১হাজার ৭০০ মানুষের। এদিন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখের অধিক। গত শনিবার একদিনে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ২২ হাজার, যা এযাবত একদিনে আক্রান্ত হওয়ার সর্বাধিক সংখ্যা। গত মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ষাট হাজার। সোমবার একদিনে ৭৩ হাজার রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর এসেছে। সেদিন মারা গেছে ১,১৪৫ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তে বিস্তার রোধের জন্য বিভিন্ন ষ্টেট দ্বিতীয় দফা লকডাউনের চিন্তাভাবনা করছে। বেশ কয়েকটি ষ্টেটে মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর কাড়াকরি আরোপ করেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৫১ জন এবং সংক্রমণের ভয়াবহতা রোধের জন্য এক ডজনের বেশি ষ্টেট নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ লোকজনকে নিজ বাড়ি অবস্থানের জন্য বলা হয়েছে।
নিউইয়র্কে ৫,৮৯৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত : গত শনিবার নিউইয়র্কে ৫,৮৯৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। সোম ও মঙ্গলবার নিউইয়র্কে গড়ে ৪০০০ করে রোগী সনাক্ত হয়। নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো এবং সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন যে নিউইয়র্কের যেসব স্থানে কোভিড ১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ৩ শতাংশের কম সেখানে লকডাউন হবে না এবং পাবলিক স্কুলগুলো খোলা থাকবে। আক্রান্তে সংখ্যা ৩ শতাংশের বেশি হলে সেসব স্থান লকডাউনের আওতায় পড়বে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর বলেছেন যে তার স্টেটে ৫৮টি কাউন্টির মধ্যে ৪১টি কাউন্টিতে ষ্টেটের ৯৪ শতাংশ মানুষের বসবাস। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে লোকজনের সীমিত চলাচল, রেষ্টুরেন্টগুলোতে শুধু আউটডোর টেকআউট সার্ভিস চালু রাখা হবে। জর্জিয়ার ইমোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের সহযোগী ডিন ডা: কার্লোস ডেল রিয়ো বলেছেন, প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে, আর আমরা শুধু ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় থাকতে পারি না। মুখে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেন্ট লুইস সিটির কর্মকর্তারা বলেছেন যে তাদের সিটির হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ এর ধারণ ক্ষমতা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। এভাবে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাদের আইসিইউ এর ধারণ ক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া মন্টানা, ইউতাহ ও ডাকোটার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বেড এর সংখ্যা অতি সীমিত। চিকিৎসা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
আইওয়ার গভর্নর কিম ব্যানোল্যান্ড তার স্টেটে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ রাখার জন্য নতুন যেসব বিধিনিষেধ জারি করেছেন তার মধ্যে রয়েছে রেষ্টুরেন্ট ও বার, প্লেগ্রাউন্ড, রিঙ্গো হল বন্ধ রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিনোদন কেন্দ্রগুলোর ইনডোর সার্ভিস রাত দশটার মধ্যে বন্ধ করে দেয়া, প্রাইভেট পার্টিতে ১৫ জনের অধিক সমবেত না হওয়া। ম্যাসাচুসেটসে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত লোকজনকে বাড়িতে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।মিশিগান, মিসিসিপি, নিউ জার্সি, নর্থ ডাকোটা, ওহাইয়ো, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা, ওরিগন, রোডস আইল্যান্ড, ইউতাহ, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ষ্টেট ও ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়ায় প্রায় একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এসব ষ্টেটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দ্বিতীয় দফা লকডাউন আরোপ করার আভাস দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস রোধের জন্য ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হলেও তা ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ৬৫ বছর বয়সের উর্ধে লোকজন ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে প্রয়োগের জন্য রেশনিং পদ্ধতিতে বন্টন করা হবে। কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত নয়, কিন্তু কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছতে সামনের স্প্রিং বা সামার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল দুই রাজ্য, ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসেই সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই দুই রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ২১ লাখ; রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এ সংখ্যা দেশটির মোট আক্রান্তের ১৯ শতাংশ। তবে জনসংখ্যার তুলনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে নর্থ ডেকোটা, সাউথ ডেকোটা, উইসকনসিন, আইওয়া ও নেব্রাস্কায়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে এই পাঁচটি রাজ্যের মহামারী পরিস্থিতিই সবচেয়ে নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটির অনেকগুলো রাজ্য মাস্ক পরা, বাড়িতে অবস্থান করা সহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে।
মিশিগানে স্কুল-কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা : যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই বেড়ে চলছে। এ কারণে সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ ও সিনেমা হলসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ১৮ নভেম্বর থেকে আবারও তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় মিশিগান স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ রাজ্যে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে রাজ্য গভর্নর গ্রিচেন হুইটমার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে বিধিনিষেধগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। গ্রিচেন হুইটমার বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজ্যের বার-রেস্তোরাঁর ইনডোর ডাইন ইন পরিষেবা, ক্যাসিনো, সিনেমা হল, স্টেডিয়াম, থিয়েটার, বোলিং অ্যালি, আইস স্কেটিং, বিঙ্গো হল (হাউজি, বাম্পার), হাইস্কুল অ্যাথলেটিকস, ইনডোর ওয়াটার পার্ক এবং হাইস্কুল ও কলেজের ক্লাস সাময়িক বন্ধ থাকবে। তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা, চুল কাটার সেলুন, মুদি দোকান, চাইল্ড কেয়ার, পাবলিক ট্রানজিট, জিম, পার্ক, আউটডোর বিনোদনসহ বেশ কিছু পরিষেবা খোলা থাকবে। রেস্তোরাঁ ও বারের বাইরের পরিষেবা খোলা থাকবে, ঘরের ভেতর ১০ জনের বেশি এবং ঘরের বাইরে ২৫ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ করা যাবে না। কারও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ২৫ জনের বেশি মানুষ অংশ নিতে পারবে না। এই বিধিনিষেধ ১৮ নভেম্বর থেকে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
মিশিগান স্টেট সূত্রে জানা গেছে, ১৪ নভেম্বর রাজ্যে ৭ হাজার ৭২ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। আগের দিন ১৩ নভেম্বর সংক্রমিত হয়েছেন ৮ হাজার ৫১৬ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ। রাজ্যে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৯৯৪ জনের এবং সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ জনের। মিশিগানে এখন গড়ে প্রতিদিন ৪৫ হাজার মানুষের করোনার পরীক্ষা করানো হয়। এর মধ্যে ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের পজিটিভ রিপোর্ট আসছে। রাজ্যে গত সাত দিনে গড়ে প্রতিদিন ৫ হাজার ৪৮৮ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। রাজ্যের চিফ মেডিকেল এক্সিকিউটিভ জে. খালদুন বলেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ২০ শতাংশ শয্যা ইতিমধ্যেই করোনা রোগীদের দ্বারা পূর্ণ। রাজ্যের হাসপাতালের ৭৮ শতাংশ শয্যা ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়ে আছে।
অরেগন, নিউ মেক্সিকোতে কঠোর বিধিনিষেধ : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সংক্রমণের নতুন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে অরেগন ও নিউ মেক্সিকোতে কোভিড-১৯ এর বিস্তারে লাগাম টানতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রাজ্যদুটির কর্তৃপক্ষ। নিউইয়ক কর্মকর্তারা এই দুই রাজ্যেই অপরিহার্য নয় এমন বেশির ভাগ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। বাসিন্দাদেরকে সামাজিক যোগাযোগ সীমিত করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গত ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ায় শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যাও ১০ লাখ অতিক্রম করেছে। দেশটিতে এখন প্রতিদিন গড়ে ৯০০-এর বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে প্রাণ হারাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে অরেগনের গভর্নর কেট ব্রাউন ১৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব বিধিনিষেধ দিয়েছেন তার মধ্যে আছে রেস্তোরাঁর কার্যক্রম সীমিত করা এবং জিম ও সব ধরনের বিনোদনের স্থাপনা বন্ধ রাখা।নিউ মেক্সিকোর গভর্নর লুজান গ্রিশাম মুদি দোকান, ফার্ম, শিশুসদন, ব্যাংক, কারখানা ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসহ অপরিহার্য নয় এমন সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দুই সপ্তাহ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন কোভিড-১৯-এর জন্য দুটি টিকা ও দুটি চিকিৎসা পদ্ধতির অনুমতি দিতে যাচ্ছে বলে গত ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে।
Posted ১০:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh