বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনা মহামারীর কারণে আমেরিকার বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে ফেডারেল সরকার ও স্টেট সরকারগুলো একাধিক প্রনোদনার ব্যবস্থা করার পর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।
ফেডারেল প্রনোদনা শেষ হয়েছে গত ৫ সেপ্টেম্বর। দেশে এখন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুবাতাস বইছে। গত এক মাস থেকেই ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার তাদের পরিসংখ্যানে দেশে এক কোটি কাজের সুযোগের কথা বলছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন যে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা সত্বেও এখনো দেশে বেকার রয়েছে ৮৪ লাখ মানুষ এবং তারা কাজের সন্ধান করছে। মাঝারি ও বড় বড় নিয়োগদাতারা অভিযোগ করছেন যে তারা পর্যাপ্ত লোক পাচ্ছেন না। লোক নিয়োগ করতে না পারায় কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চেইন কোম্পানিগুলোতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে ধৈর্য ধরে লাইনে থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। প্রায় সর্বত্র সাইন ঝুলছে, ‘আমাদের লোকবল কম।’
মহামারীর প্রকোপ গত জুন-জুলাই মাসে কমে এলেও ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিথিল করা বিধিনিষেধগুলো পুনরায় বলবৎ হয়েছে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। এসব সত্বেও জনগণের মধ্যে গত বছরের করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের মৃতের ঘটনা মানুষকে যেভাবে আতঙ্কিত করতো, এখন আর সেই আতঙ্ক বোধ করছে না। যানবাহন ভর্তি যাত্রী, রেস্টুরেন্ট পূর্ণ মানুষ, আগের মতই চলছে সবকিছু সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা সত্বেও এত বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষ কাজে যোগ দিচ্ছে না কেন তা গবেষক ও অর্থনীতিবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকে ধারণা করছেন যে সরকারের দেয়া প্রনোদনা বন্ধ হয়ে গেলে লোকজন কাজের সন্ধানে বের হবে এবং শ্রমবাজারে যে চাহিদা রয়েছে তা অচিরেই পূরণ হবে। মহামারী শুরু হওয়ার আগে যারা যে কাজ করতেন, তারা এখন বেশি বেতনে কাজ পেতে পারেন এমন সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টেও এক রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা মহামারীর কারণে শ্রমবাজারে নতুন একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা হলো, “ওয়ার্ক ফ্রম হোম।” অনেকের জন্য এটি একটি ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। লকডাউনের কারণে কাজ থেমে থাকেনি। প্রায় সবাই বাড়ি থেকে কাজ করেছেন। মানুষ তাদের সেবা লাভ করেছে। অনেকে এখন অফিসে বা কর্মস্থলে না গিয়ে সবসময় বাড়িতে বসেই কাজ করতে চাইছেন, এতে পরিবারকেও অধিক সময় দেয়া যায়। অনেকে কিছুটা শিথিল সময়সূচি চান অথবা অধিকতর অর্থবহ পেশাদারিত্ব। কোম্পানিগুলোও তাদের কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করায় সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে এবং তাদের অটোমেশন বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং পুরো সরবরাহ লাইন নতুন করে সাজানো হচ্ছে, যাতে ক্রেতা বা সেবাপ্রার্থীরা হতাশ না হয়, বরং সন্তোষজনক সেবা লাভ করে। বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রেও নতুন প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। পদত্যাগকারী জনশক্তিও বেড়েছে। করোনা পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে পদত্যাগ ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে, মহামারী পূর্ব সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ৪৯ লাখ এমন সক্ষম জনশক্তি রয়েছে, যারা কাজ করছে না অথবা কাজের সন্ধানও করছে না। অবসর গ্রহণকারীর সংখ্যাও বেড়েছে, মহামারীর মধ্যে ৩৬ লাখ লোক অবসর গ্রহণ করেছে বা অবসর নেয়ার পর্যায়ে রয়েছে, যা কাঙ্খিত সংখ্যার চেয়ে ২০ লাখ অধিক। নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য চলতি বছর আবেদনের সংখ্যাও অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি।
২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান বেন বারনাকে বলেছেন, অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। আমরা যেখানে কাজ করতে চাই এবং কিভাবে কাজ করতে চাই তার উপর ভিত্তি করে সবকিছু সাজানোর প্রয়োজন হবে। লোকজন চেষ্টা করছে তাদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে। কর্মসংস্থানের ছড়াছড়ি থাকলেও ঠিক এ মুহূর্তে তাতে কোন সুফল হবে না। মহামারীর আগে মানুষ যে কাজ করতো বা যেখানে কাজ করতো, এখন তাদের অধিকাংশই সে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। মৌলিক যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে, তা হলো কোন্ ক্ষেত্রে অধিক কর্মসংস্থান রয়েছে এবং মহামারী পরবর্তী সময়ে কত সংখ্যক বেকার লোক ওইসব স্থানে কাজ করতে আগ্রহী। যেমন, হোটেল ও আতিথেয়তা শিল্পে প্রায় ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে ১৫ লাখের কম সংখ্যক লোকে অতি সাম্প্রতিক চাকুরি এই শিল্পে। এই খাতে এখনো ২০ লাখ লোকের পদ শূন্য পড়ে আছে।
ন্যাশনাল চাইল্ডকেয়ার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লেহনহফ বলেছেন, আমরা বছরের এই সময়ে নিয়োগ করি। কিন্তু বাস্তবেই আমরা প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোক পাচ্ছি না। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, “আপনি যদি একজন ভালো প্রার্থী পান, তাহলে দেখা যাবে একই ব্যক্তির সঙ্গে আরও দশটি প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করছে। এটি যথার্থই একটি সংকটকাল। কিন্তু শিশুসেবার মত খাত ছাড়া সমাজ চলতে পারে না।” তিনি অবশ্য স্বীকার করেন যে, চাইল্ডকেয়ার টিচিং অ্যাসিষ্ট্যান্ট পদে যেখানে ঘন্টাপ্রতি বেতন ১২ থেকে ১৩ ডলার, সেক্ষেত্রে ফাস্টফুড রেষ্টুরেন্ট ও খুচরা দোকানে বেতন ১৪ থেকে ১৫ ডলার।
লোকজন বেশি বেতনের কাজ বেছে নেবে এটিই স্বত:সিদ্ধ। ফর্কলিফট ড্রাইভার ব্রানডন হার্ভে ও তার স্ত্রী আটলান্টার বাইরে এক ওয়্যারহাউজে কাজ করতেন, যেটি মহামারীর সময় বন্ধ হয়ে যায় এবং এখনো চালু হয়নি। হার্ভে দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন। তিনি প্রতিঘন্টা ১০-১২ ডলারের অনেক চাকুরি দেখেছেন, কিন্তু তিনি সেসব চাকুরিতে যোগ দেননি। কারণ মহামারীর আগে তিনি ঘন্টাপ্রতি ১৭ ডলারে কাজ করতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি একটি বড় ওয়্যারহাউজে ঘন্টায় ২১ ডলারের একটি চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। আতিথেয়তা, রেস্টুরেন্ট খাতে কর্মীদের বেতন বেড়েছে ৮.৮ শতাংশ, ওয়্যারহাউজ কর্মীদের বেতন বেড়েছে ৬.১ শতাংশ। দৃশ্যত কর্মীদের কাজের প্রতি আকৃষ্ট করতেই বেতন বৃদ্ধিতে বাধ্য হয়েছে নিয়োগদাতারা। যেসব প্রতিষ্ঠান বেতন বৃদ্ধিতে ইত:স্তত করছে তারাই কর্মীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
Posted ৬:৪১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh