বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২
ফেডারেল কোভিড রিলিফ কর্মসূচির আর্থিক সহায়তা নিতে গিয়ে এত অধিক সংখ্যক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে যে ফেডারেল তদন্তকারীরা তদন্ত পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। যদিও তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে দুই বছর আগে, কিন্তু তারা বলছেন, তারা কেবল কাজ শুরু করেছেন। করোনা মহামারীর ভয়াবহতা যখন মাঝামাঝি পর্যায়ে তখন তখন ২০২০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল আর্থিক সহায়তার একটি বড় অংশ মৃত, কারাবন্দি ও কল্পিত নামে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। তারা এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ফেডারেল সরকারের প্রায় বিনাসূদে দেওয়া দীর্ঘমেয়াদী ক্ষুদ্র ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই, অথবা শুধু সাইনবোর্ড টানানো আছে। প্যানডেমিক রিলিফ সহায়তার অর্থের বিপুল প্রবাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল প্রতারণা। অর্থ পাওয়ার জন্য শর্ত ছিল সহজ এবং তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে কোনো অনুসন্ধান ছিল না বললেই চলে। যার পরিণতি আমেরিকান ইতিহাসের এই বৃহত্তম আর্থিক প্রতারণা। লক্ষ লক্ষ অসৎ লোক হাতিয়ে নিয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। তদন্তকারীরা অন্তত একজনকে পেয়েছেন, যিনি এই অপরাধকর্ম ঘটিয়ে ইউটিউবে উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলেন। তদন্তকারীরা এখন প্রতারকদের ধরতে ওঠেপড়ে লেগেছেন। দেশজুড়ে ফেডারেল ইন্সপেক্টর জেনারেলের ২১টি অফিসের ৫০০ তদন্তকারী এখন দিনরাত কাজ করছেন, যদিও এ সংখ্যা অপ্রতুল। এর বাইরেও এফবিআই, সিক্রেট সার্ভিস, পোস্টাল ইন্সপেকশন সার্ভিস ও ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) এর তদন্তকারীরা কাজ করে যাচ্ছে।
ফেডারেল সরকার ইতোমধ্যে ১,৫০০ লোকের বিরুদ্ধে প্যানডেমিক রিলিফ সহায়তা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে, যার মধ্যে ৪৫০ জনের বেশি লোককে দন্ড প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রতারকদের সংখ্যা বহুগুণ বেশি। লেবার ডিপার্টমেন্টের ইন্সপেক্টর জেনারেলের অফিসের এজেন্টরা ৩৯,০০০ প্রতারণার মামলার তদন্তে নিয়োজিত বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিস সম্ভাব্য প্রতারণামূলক ২০ লাখ ঋণ আবেদন খতিয়ে প্রতারকদের সানক্ত করার চেষ্টা করছে।
ইতোমধ্যে তদন্তের পর যে মামলাগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে তাতে অনেকে মনে করছেন যে স্বল্প পরিমাণে ডলার চুরি করা হয়েছে এমন মামলাগুলোর ওপর তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বড় বড় অংকের আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা জোরদার করা হবে। চার মাস আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে প্যানডেমিক রিলিফ প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তির শাস্তি পাঁচ বছরের স্থলে ১০ বছরে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “যারা অর্থ প্রতারণা সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, ‘আপনারা লুকিয়ে থাকতে পারবেন না। আমরা অবশ্যই আপনাদের খুঁজে বের করবো।
ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের প্যানডেমিক প্রতারণার মামলা দেখাশোনাকারী প্রধান আইনজীবী কেভিন চেম্বার্স বলেছেন, এই প্রতারণার মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন হতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। দশ বছরও যদি লাগে আমরা প্রতিটি দিন কাজ করার ব্যাপারে আস্থাশীল।”
ক্ষুদ্র ব্যবসা রক্ষার জন্য ‘পে-চেক প্রটেকশন’ কর্মসূচির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে বলে লেবার ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত। ২৯টি স্টেটে এমন অসংখ্য ঘটনা পাওয়া গেছে যে একই ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ প্রদান করা হয়েছে এবং আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিটও দেওয়া হয়েছে। পোস্টাল সার্ভিসের এক কর্মচারি ‘ইউএস পোস্টাল সার্ভিস” এর নামে তার ব্যবসার জন্য ৮২,৯০০ ডলার ঋণ পেয়েছেন, আরেক ব্যক্তি ১০টি অস্তিত্ববিহীন বাথরুম রেনোভেশন সার্ভিসের ব্যবসার নামে ঋণ হাতিয়ে নিয়েছেন। পে-চেক প্রটেকশন কর্মসূতিতে আবেদনকারীদের তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর, যারা অসংখ্য আবেদনকারী সম্পর্কে জানে, কারণ ব্যাংকগুলোতে তাদের অনেকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক একাউন্ট রয়েছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্যানডেমিক সহায়তা লাভের অযোগ্য হয়ে পড়লে সরকার অনলাইন ঋণদাতাদের অনুমতি দেয় ফেডারেল সহায়তা বিতরণ করতে এবং সেখানেই বড় বিপত্তি ঘটেছে।
প্যানডেমিক সহায়তায় প্রতারণা এমন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছিল যে, কোনো রাখঢাকই আর ছিল না। ক্যালিফোর্নিয়ার রক সঙ্গীতশিল্পী ফনট্রেল অ্যান্টোনিও বেইনস উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলেন যে ভূঁয়া আনএমপ্লয়মেন্ট আর্থিক সুবিধা দাবী করে তিনি কিভাবে ধনবান হয়েছেন। তিনি বলেন, “আহা, বেকারত্ব কত মধুর।” কি পরিমাণ অর্থ চুরি করা হয়েছে সে সম্পর্কিত সরকারি কোনো হিসাব না থাকলেও জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কাছে ইতোমধ্যে বিচারাধীন প্রতারণা মামলাগুলোতে অভিযুক্তরা এক বিলিয়ন ডলার চুরি করেছেন। তদন্তাধীন মামলাগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে প্রতারকরা ৬ বিলিয়ন ডলার লুট করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে অসৎ উপায়ে ১৬৩ বিলিয়ন ডলারের অধিক হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। ইকনমিক ইনজুরি ডিজাস্টার লোন প্রোগ্রাম নামে একটি ওয়াচডগের মতে ৫৮ বিলিয়ন ডলার এমন কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে, যারা একই ঠিকানা, ফোন নম্বর, ব্যাংক একাউন্ট অথবা অন্য তথ্য একই ব্যবহার করেছে।
Posted ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh