বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
সীমিত আয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবন চালাতে নাকাল হয়ে পড়ছেন নিউইয়র্ক সিটির অর্ধেক মানুষ। সিটির অর্ধেক বাসিন্দার কাছেই নিউইয়র্ক তাদের আর সাশ্রয়ী বা অ্যাফোর্ডেবল সিটি নেই। বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নিউইয়র্ক সিটি অর্থনৈতিক বিচারে গত দুই দশকের মধ্যে বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী সিটিতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় সিটির জনসংখ্যার অর্ধেকের পক্ষেই নিউইয়র্ক সিটিতে বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাস করার অবস্থা নেই এবং অনেকে ইতোমধ্যে সিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে অথবা যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা হ্রাসের মধ্য দিয়ে এর প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী সিটির কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নিউইয়র্ক সিটি ত্যাগ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এসব কারণে সিটির জনসংখ্যার চিত্রও পাল্টে যাচ্ছে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং স্টেট গভর্নর ক্যাথি সি হকুল সিটির সাশ্রয়যোগ্যতা বা অ্যাফোর্ডেবিলিটি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাতে সিটির সাশ্রয়ী হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং বাড়ি ভাড়াকে কেন্দ্র করে তারা অর্থবহ কিছু করতে সমর্থ হচ্ছেন না তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সিটিতে অ্যাফোর্ডেবল বাড়ির চরম ঘাটতি রয়েছে। বাড়িভাড়া পরিশোধে আগে নিউইয়র্কাররা যেখানে তাদের আয়ের ৩০ শতাংশ ব্যয় করতো, মহামারী কাটিয়ে উঠার পর বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে আয়ের কোনো সঙ্গতি দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ পরিবারকে, বিশেষ করে মাঝারি ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোকে তাদের আয়ের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্যয় করতে হচ্ছে বাড়ি ভাড়া পরিশোধে। নিউইয়র্কারদের প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবার জীবনযাত্রার ন্যূনতম ব্যয় নির্বাহের মতো প্রয়োজনীয় আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে কিভাবে নির্ধারিত আয়ের সাধারণ কারো পক্ষে এত ব্যয়বহুল সিটিতে বাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সরকারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শ দানকারী সংস্থা ‘ফান্ড ফর দ্য সিটি অফ নিউইয়র্ক’, যে সংস্থা ১৯৬৮ সালে গঠন করা হয়েছিল ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায়, তারা বিভিন্ন সময়ের আদমশুমারি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে গত মঙ্গলবার এক রিপোর্টে বলেছে যে, ২০২১ সালে মহামারীকালে নিউইয়র্ক সিটির পরিবারগুলোর যতটা অ্যাফোর্ডেবিলিটি ছিল, এখন তা থেকে আরো হ্রাস পেয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, যা থেকে বের হয়ে আসা খুব সহজ হবে বলে কেউ মনে করেন না।
সিটির ৫ বরোতে জরিপ জালিয়ে দেখা গেছে যে, যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় অন্তত ১ লাখ ডলার, তারা কোনোভাবে বসবাসযোগ্য একটি বাড়িতে থাকতে পারে, খাদ্য ও পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য আবশ্যিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। এমনকি তারা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও গ্রহণ করতে সক্ষম। কিন্তু এই সিটিতেই যারা ম্যানহাটানের ব্যয়বহুল এলাকাগুলোতে বাস করেন, তাদের ক্ষেত্রে দুটি সন্তানসহ চার সদস্যের পরিবারের ভালোভাবে চলার জন্য বার্ষিক অন্তত দেড় লাখ ডলার আয় করতে হবে। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সেন্সাস ডাটা অনুসারে সিটির মাঝারি আয়ের পবিারগুলো বার্ষিক সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করে।
নিউইয়র্ক সিটির কর্মজীবীদের মধ্যে যারা হোম হেলথ এইড হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের পক্ষে বাড়িভাড়া মিটিয়ে অন্য প্রয়োজন পূরণ করা কঠিন হয়ে উঠে। হোম হেলথ এইডে এর চাকুরি সিটিতে দ্রুত বিকাশমান চাকুরিতে পরিণত হয়েছে। এই চাকুরিতে ঘন্টায় ন্যূনতম ১৫ ঘন্টা এবং সর্বোচ্চ ২২ ঘন্টা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে যে, এখনো সিটিতে হোম হেলথ এইডের ঘাটতি রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই কাজে কর্মীর চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান হারে বেতনেও তাদের পক্ষে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। একই অবস্থা চলছে গ্রোসারি, রেস্টুরেন্ট কর্মী, জেনিটর, স্কুলে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টের মত স্বল্প বেতনের চাকুরিতে। তাদেরকে সিটিতে জীবন কাটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকেই সিটি ছেড়ে যেখানে বাড়ি ভাড়া কম সেসব সিটিকে বেছে নিচ্ছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে কি বাড়ি ভাড়া ১৬% বৃদ্ধি পাবে?
সিটির প্রায় ১০ লাখ রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া ১৫.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে দুই বছরের লিজে ভাড়া বৃদ্ধির এই হারকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অতিরিক্ত বলে উল্লেখ করেছে ‘রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড’ নামে ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি সিটি প্যানেল। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নিউইয়র্ক সিটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে নিউইয়র্কাররা তাদের আয়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না। সেক্ষেত্রে দুই বছরের লিজে রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড বাড়ির ভাড়া এত বৃদ্ধি অশুভ প্রভাব ফেলবে। গত প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। নিউইয়র্ক সিটিতে রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টগুলো অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং এর গুরুত্বপূর্ণ খাত। আগামী মাসের শেষ নাগাদ ভাড়া বৃদ্ধির বিষয় চূড়ান্ত হবে।
‘রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড’ অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখে প্রায় এক দশক যাবত রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের এক বছরের লিজে বার্ষিক ৩.২৫ শতাংশ এবং দুই বছরের লিজে বার্ষিক ৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি অনুমোদন করছে। বর্তমানে ভাড়া বৃদ্ধির যে হার প্রস্তাব করা হয়েছে, রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড শেষ পর্যন্ত এর উপর স্থির থাকতে পারবে বিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বোর্ড এত অধিক বৃদ্ধি অনুমোদন করবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। সিটি মেয়র কর্তৃক মনোনীত ৯ সদস্যের ‘রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ডে’ বাড়ি মালিক, ভাড়াটের প্রতিনিধিরাও থাকেন। প্রতিবছর তারা ভাড়া বৃদ্ধি স্থির করে থাকে।
প্রচুর আলোচনা ও বিতণ্ড হলেও শেষ পর্যন্ত ‘রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড’ সিটি মেয়রের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির আলোকেই ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভাড়াটের আয় ও সামর্থ্যরে দিকও বিবেচনায় রাখা হয়, বিশেষত যারা ইতোমধ্যে অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বসবাস করছেন, তাদের সামর্থের বিষয়টি। বোর্ড আইন অনুযায়ী রিয়েল এস্টেট শিল্পের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাও বিবেচনায় রাখে যে তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। চলতি বছর বোর্ড সর্বনিম্ন ভাড়া বৃদ্ধি প্রস্তাব করেছে এক বছরের ক্ষেত্রে ৫.৩ শতাংশ এবং দুই ভচরের লিজের ক্ষেত্রে ৬.৬ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ এক বছরের লিজে ৮.২৫ শতাংশ এবং দুই বছরের লিজের ক্ষেত্রে ১৫.৭৫ শতাংশ।
চলতি বছরের সর্বোচ্চ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। কারণ বাড়ি মালিকদের জ্বালানি, ইনস্যুরেন্স, রক্ষণাবেক্ষণ, ট্যাক্স ও ইউটিলিটি খাতে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরিমাণে ব্যয় করতে হচ্ছে, যার প্রতিফলন বাড়িভাড়ার মধ্যে ঘটবে, এটাই স্বাভাবিক।
যেমন, জ্বালানিতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, ইন্স্যুরেন্সের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ।ভাড়াটেদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রবক্তারা রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের যেকোনো পরিমাণে ভাড়া বৃদ্ধির পরিপন্থী। কারণ যেকোনো বৃদ্ধি প্যান্ডামিকের চাপে পিষ্ট নিউইয়র্কারদের উপর বোঝা। গত বছর তারা বরং রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ডের প্রতি আহবান জানিয়েছিল বিদ্যমান ভাড়ার পরিমাণ হ্রাস করতে। কারণ নিম্ন আয়ের সিটিবাসীরা চরম আর্থিক কষ্টে রয়েছে এবং অধিকাংশই তাদের করোনা পূর্ব আয়ে পৌছতে পারেনি। এক জরিপ অনুযায়ী রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী ৪০ শতাংশকেই তাদের আয়ের ৫০ শতাংশ ব্যয় করে বাড়ি ভাড়া পরিশোধে।
Posted ৩:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh