বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
দ্বিতীয় প্যান্ডামিক প্যাকেজ বিল নিয়ে হোয়াইট হাউস প্রশাসন ও কংগ্রেশনাল রিপাবলিকানদের মাঝে জোর বিতণ্ডা চলছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে হোয়াইট হাউসের মধ্যাহ্নভোজে এ নিয়ে রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দের সাথে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভ মুনচিনের সাথে বেশ বিতর্ক হয়। বিশেষ করে স্টিমুলাস চেক পাওয়ার যোগ্য কারা হবে-এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যাদের বাৎসরিক আয় ৪০ হাজার ডলার তারাই দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেক পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ এমন দরিদ্র মানুষের জন্য আসছে দ্বিতীয় স্টিমুলাস প্যাকেজ। ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল এ রিলিফ প্যাকেজ বিল আকারে এ মাসেই আইনে পরিণত হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা মে মাসের মাঝামাঝি দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিলটি উত্থাপন করলে এর বিরোধিতা করেন কংগ্রেশনাল রিপাবলিকানরা এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প । সম্প্রতি করোনা ভাইরাস গোটা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় টনক নড়েছে তাদের। রিপাবলিকানরাও এখন অনুভব করছেন দ্বিতীয় স্টিমুলাস প্যাকেজের প্রয়োজনীয়তা। গত ২০ জুলাই দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিল নিয়ে বৈঠক হয় রিপাবলিকন কংগ্রেশনাল ও হোয়াইট হাউস প্রশাসনের সাথে। ইতিবাচক এ বৈঠকে এক ট্রিলিয়ন ডলার ছাড় দেয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিলটি আলোর মুখ দেখলে ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হবে বলে ট্রেজারি সেক্রেটারী মনুচেন মন্তব্য করছেন। বিলটি পাশ হলে তিনটি খাতে ভাগ করা হবে সমুদয় অর্থ। যার বড় একটি অংশ যাবে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেক হিসেবে।
করোনা ভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সহসা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীন হয়ে আসছে। এমাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত প্যানডেমিক ভাতা। বেকার শ্রেনী প্রতি সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে পেয়ে আসছিলো মার্চ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে কোন কোন রাজ্যে করোনা ভাইরাসের আক্রমন কমছে। সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে ব্যবসায় বাণিজ্য। কিন্তু অধিকাংশ রাজ্যে নূতন করে মারাত্নক আকার ধারণ করেছে করোনা মহামারি। ফলে দিন দিন বেকারত্বের হার বাড়ছেই। বেকারত্বেও হার এখনো ১১.১ শতাংশ। সবকিছু বিবেচনা করে রিপাবলিকান জন প্রতিনিধিগণ গত সোমবার সমবেত হন ওয়াশিংটনে। পরবর্তী স্টিমুলাস বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন তারা। এর আগে ডেমোক্র্যাটরা দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিলের পক্ষে প্রস্তাব দেন। স্টিমুলাস বিলটি দ্রুত পাশের ব্যাপারে গত সোমবার দুই প্রভাবশালী হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ট্রেজারি সেক্রেটারী মুনচেন এর সাথে এ বিষয়ে বৈঠক করেন। এরা হলেন রিপাবলিকান কেন্টাকি থেকে নির্বাচিত ইউএন সিনেটর ম্যাককনেল ও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাাচিত কংগ্রেসম্যান কেভিন ম্যাকার্থি। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন করোনা টেস্টিং, ট্রেসিং এবং ফেডারেল হেলথ এজেন্সির তহবিলের জন্য রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত বিলিয়নস ডলারের বিল আটকে দেয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন রিপাবলিকান কংগ্রেশনালগণ। গত বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসন ও রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ মোট এক ট্রিলিয়ন ডলারের একটি তহবিলে ছাড় দেয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌছেছেন। এ ব্যাপারে রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ দেন দরবার করবেন ডেমোক্র্যাটদের সাথে। প্রস্তাবিত এক ট্রিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হবে তিনটি খাতে। প্রথম অংশ যাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে। দ্বিতীয় অংশ যাবে দেশের স্কুল ও হাসপাতাল সমূহে। তৃতীয় ভাগের ৪০০ বিলিয়ন ডলার দ্বিতীয় দফা স্টিমুলাস চেক হিসেবে দেয়া হবে সাধারণ মানুষকে। বেকার ভাতা সম্প্রসারণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীতে ট্যাক্স সুবিধা এবং পেরুল ট্যাক্স হলিডে’র ব্যবস্থা রাখা হবে প্যাকেজ। স্টিমুলাস বিল নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মাঝে কয়েকটি বিষয়ে মত বিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে বেকারভাতা, ব্যবসায়ের জন্য লায়াবেলিটিস প্রটেকশন, স্থানীয় এবং স্টেট সরকারের জন্য সহায়তা এবং আমেরিকানদের জন্য সরাসরি পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখা।
প্রথম স্টিমুলাস প্যাকেজে ছিল ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ। এই প্যাকেজেও ঋণ সুবিধা পায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বরাদ্দ দেয়া হয় হাসপাতাল ও করোনা চিকিৎসার জন্য। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্টিমুলাস চেক পান প্রায় ১৬ কোটি মানুষ । মোটা দাগে এতে নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এককালীন ১২০০ ডলারের চেক পান আই আর এস থেকে। ১৭ বছর বয়সের কম এমন সন্তানদেরকে দেয়া হয় ৫০০ ডলার করে।
কারা দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেক পাওয়ার যোগ্য?
প্রস্তাবিত স্টিমুলাস বিল পাশ হলে এবারো এতে থাকবে বড় ধরণের রিলিফ প্যাকেজ। আইআরএস আরেক দফা স্টিমুলাস চেক পাঠাবে ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য। এ মাসের শেষ দিকে স্টিমুলাস চেক ছাড়া হবে বলে ধারণা অভিজ্ঞ মহলের। স্টিমুলাস চেক নিয়ে এখন চলছে নানা ধরণের বিশ্লেষণ। বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেকের জন্য ধার্য্যকৃত অর্থের পরিমাণ কত হবে। আইআরএস কবে পাঠাবে এসব চেক। তৃতীয়ত কারা এবারের চেক পাওয়ার যোগ্য হচ্ছে। এসবই এখন রয়েছে বিতর্কের মধ্যে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে যাদের বাৎসরিক আয় ৪০ হাজার ডলার তারাই দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেক পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন।যারা প্রথম স্টিমুলাস চেকে ১২০০ ডলার পেয়েছিলো তারা পুনরায় একই পরিমাণ ডলারের চেক পাবে বা আদৌ কোন চেক পাবে কিনা তা হলপ করে বলার সময় আসেনি। হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলো’র মতে বেকার এবং অতিশয় নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে এবার ব্যক্তিগত পারিবারিক স্টিমুলাস চেকের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হবে। অপর একটি প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে উল্লেখিত শ্রেনী ছাড়াও প্রথম স্টিমুলাস চেক যারা পায়নি তাদেরকে আনা হবে দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেকের আওতায়। এছাড়া এবার সুক্ষ্নভাবে বিবেচনায় নেয়া হবে ব্যক্তির আয়, বয়স, সিটিজেনশীপ, বৈবাহিক অবস্থা ও পরিবারের উপর নির্ভরশীল এমন সদস্য সংখ্যা। প্রথম স্টিমুলাস চেকে পরিবারের সন্তানদের বয়স ও নির্ভরশীল সদস্য নিয়ে অনেকটা বিভ্রান্তি ছিলো। এবার তা দূর করা হবে বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেক প্রদানের আওতায় আরো কয়েক শ্রেনীর মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার একটা প্রস্তাবনা বিবেচনায় রয়েছে। এই প্রস্তাব ‘হিরোস এ্যাক্ট’ নামে পরিচিত। মে মাসের মাঝামাঝি ডেমোক্র্যাটরা এই প্রস্তাব টেবিলে আনলে রিপাবলিকান সিনেটরগণ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর তীব্র বিরোধিতা করেন। শেষ মূহুর্তে এই প্রস্তাব বিবেচনায় নিলে ২০১৮ বা ২০১৯ সালে ট্যাক্স রিটার্নে যাদের গ্রস আয় ৯৯ হাজার ডলারের নীচে এমন ব্যক্তি। অক্ষম আত্মীয় বা করদাতা বাবা-মা’র ১৭ বছর বয়সের উর্ধ্বে অথচ পরিবারের উপর নির্ভরশীল এমন কলেজ ছাত্র। পাঁচ সদস্যের পরিবার এবং আমেরিকার নাগরিক নন, সোস্যাল সিকিউরিটি নাম্বার নেই। অথচ নিয়মিত ট্যাক্স দেন এমন ব্যক্তি দ্বিতীয় স্টিমুলাস চেক পাওয়ার যোগ্য হতে পারে। এদিকে ডেমোক্র্যাটরা চাচ্ছে জুলাই মাসে অতিরিক্ত ৬০০ ডলার হিসেবে প্যান্ডেমিক ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্বল্প পরিমাণে হলেও তা অব্যাহত রাখা। এই মুহূর্তে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে না হলেও অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার হিসেবে বেকার ভাতা চালু রাখার প্রস্তাব করছে ডেমোক্র্যাটরা।
হিরোস এ্যাক্টের পক্ষে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশন: দ্বিতীয় স্টিমুলাস প্যাকেজে ইমিগ্রাণ্টদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশন ও এনওয়াই আইসি অ্যাকশন। গত ২১ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা অতীতের তিনটি স্টিমুলাস প্যাকেজে ইমিগ্র্যান্টদের বঞ্চিত করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে। আর এসব বিল পাশের ক্ষেত্রে নিউইয়র্কের ইউএস সিনেটর চাক শুমার ইতিবাচক কোন ভূমিকা পালন না করায় সমালোচনা করা হয় তার। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের মিডিয়া প্রচারিত বিজ্ঞাপন ৫৫ শতাংশ মানুষ ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস নির্বিশেষে সবাইকে প্যানডেমিক রিলিফ প্যাকেজের আওতায় আনার পক্ষে মত দেয়। দ্বিতীয় স্টিমুলাস প্যাকেজে যাতে নিউইয়র্কের ১২ লাখ ইমিগ্র্যান্ট পরিবার এই সুবিধা পায় সেজন্য তারা হিরোস এ্যাক্ট কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।
Posted ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh