বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের বোয়িং-৭৮৭ নিউইয়র্কের জনএফ কেনেডি বিমান বন্দরে এসেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করে এনেছে বিমানটি। এটি নিয়মিত কোন ফ্লাইট নয়। এটি বাংলাদেশ বিমানের একটি চাটার্ড ফ্লাইট। জেএফকে এয়ারপোর্টে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটের গ্রাউন্ড পারমিশন বা অবতরণ অনুমতি না থাকায় দেড় দশকেরও অধিক সময় ধরে ঝুলে আছে বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্কের নিয়মিত ফ্লাইট। যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল এভিয়েশন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রেড-১এ পর্যায়ে উন্নীত হতে না পারায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট অবতরণের বিধি নিষেধ এখনও বলবৎ রয়েছে। ফেডারেল এভিয়েশন এড মিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ইউএসএ’র সেফটি অডিট থেকে যতদিন না ছাড়পত্র পাবে ততদিন এই রুটে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের কোন নিয়মিত ফøাইট চালুর সম্ভাবনা নেই। বিমান জেএফকে বিমান বন্দরে অবতরণের অনুমতি হারালে গ্রাউন্ড পারমিশনের জন্য অপেক্ষামান মধ্যপ্রাচ্যের একটি এয়ার লাইন্স তা লুফে নেয়।
বিমান ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট চালু হয় ১৯৯৩ সালে। তখন ন্যাদারল্যান্ডের আমস্টার্ডাম হয়ে নিউইয়র্ক আসতো বিমান। পরবর্তীতে বিমানের ডিসি-১০ এয়ার ক্রাফট দুবাই ও ব্রাসেলস হয়ে নিউইয়র্ক যাতায়াত করত সপ্তাহে একাধিকবার। ২০০৬ সালের মার্চে সপ্তাহে একটি মাত্র ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বিমান। একই বছর ২৯ জুলাই ঢাকা নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। লোকসানের কারণে রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্সের নিউইয়র্ক ফ্লাইট বন্ধের অজুহাত দেয়া হলেও এর নেপথ্যে ছিল অন্য কারণ।
সেই থেকে বিমানের চাকা আর জেএফকে’র রানওয়ে স্পর্শ করেনি। এনিয়ে নানাধরণের দেন-দরবার হয়েছে। দেশ ও প্রবাস থেকে বিমানের ফ্লাইট চালুর দাবি উঠেছে বার বার। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পুনরায় বিমানের নিউইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের বিমান মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তাগণ বার কয়েক ওয়াশিংটনে এসে বৈঠক করেন ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সাথে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নিকটও আবেদন জানান প্রবাসীরা। শেষ পর্যন্ত বিমান নিউইয়র্কের মুখ দর্শণ করেছে। বিমানের অত্যাধুনিক একটি এয়ারক্রাফট প্রধানমন্ত্রীকে বহন করে নিয়ে এসেছে নিউইয়র্ক। বিমানের চাটার্ড বা বিশেষ ফ্লাইট নির্ধারিত মাশুল গুনে বিশ্বের যেকোন এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি সেই সুযোগটি নিয়েছে মাত্র। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পড়ন্ত বিকেলে অবতরণকারী বিমানটি এখন জেএফকের হ্যাঙ্গারে আছে বিশ্রামরত অবস্থায়। যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন বাংলাদেশ এয়ার লাইসেন্সের উপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে এমন কোন খবর এখনো পাওয়া যায়নি। ফলে সহসাই ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট নিয়মিত চালু হবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখেরও অধিক বাংলাদেশীর বসবাস। এদের সিংহভাগই বছর জুড়ে নিজ দেশে বেড়াতে যান। এজন্য তারা শীত গ্রীষ্মের অপেক্ষায় থাকেন না। বাংলাদেশ বিমানের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো। বিশেষ করে এমিরেটস, কাতার, কুয়েত, টার্কিস এয়ারলাইন্স। নভেম্বর থেকে এদের সাথে সামিল হতে চলেছে ইজিপ্ট এয়ারলাইন্স। এসব এয়ার লাইন্স প্রতিদিনই নিউইয়র্ক-ঢাকা-রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। মুনাফা করছে মোটা অংকের অর্থ। অথচ বাংলাদেশ বিমান লোকসানের অজুহাতে বসে আছে হাত গুটিয়ে।
বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট নিয়ে অতীতেও মন্ত্রীরা নানা ধরণের আশার বাণী শুনিয়েছেন। এবারো একই ধরণের আওয়াজ দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের হাতে কোন অনুমতি পত্র নেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিজ দেশের লাল সবুজের পতাকাবাহী বিমানে ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। বিমানেই ভ্রমণ করতে চান তারা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের নিউইয়র্ক উদাহরণ তুলে ধরে প্রবাসীদেরকে মিথ্যে আশ্বাস দেয়া আর ঠিক হবে না। প্রবাসী বাংলাদেশীর গ্যারান্টি চান ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটের।
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট চালু হবে -পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমেরিকাবাসী খুব খুশি হবে যদি বাংলাদেশ থেকে এখানে বিমানের ফ্লাইট চালু হয়। প্রধানমন্ত্রী বিমানে এসেছেন। সুখবর, তারা বিমানকে অ্যালাউ করেছে। চার্টার্ড ফ্লাইট হতে পারে, কিন্তু তারা বিমানকে অ্যালাউ করেছে। আশা করি আগামীতে নিউইয়র্ক-ঢাকা বিমান চালু হবে। গত ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে হোটেল লোটে প্যালেসে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ আশা প্রকাশ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আগে নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যেতাম বাংলাদেশ বিমানে করে, বহু বছর আগে। তারপর বিমানটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমাদের বিমান এখানে এসেছে। আমাদের প্রত্যাশা যে, আগামীতে বাংলাদেশ বিমান নিউইয়র্ক টু ঢাকা এই লাইনটা চালু হবে। ফ্লাইট চালুর অগ্রগতি সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন, ইতোমধ্যে এখানকার ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছে এবং এটা বেশ ভালো পর্যায়ে রয়েছে। সে জন্য আমরা আশাবাদী হতে পারি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উড়োজাহাজের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত ইমেজ, বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Posted ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh