শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলাদেশ ডেস্ক :   |   বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের ‘টিনএজার’ বলা হয়। ১৯৫০ এর দশকে বেশ জনপ্রিয় হয় ‘টিনএজার’ শব্দটি। এই বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুতর পরিবর্তন ঘটে ও প্রভাবিত হয়। বিল ব্রাইসন তার স্মৃতিকথা ‘দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অব থান্ডারবোল্ট কিড’ এ লিখেছেন, এই বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা বাড়ির বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ে। মাতাল হওয়া, গর্ভধারণ করা বা গাড়ি দুর্ঘটনা এসব আমেরিকান নাগরিকদের টিনএজারদের নিয়ে মূল আতঙ্কের বিষয়।

আজকাল, আমেরিকান কিশোর-কিশোরীরা যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তা ভেতর থেকে আসে। ছেলেদের এখন দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার চেয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে মেয়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। দেশটিতে দুর্ঘটনার পর এখন ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মৃত্যু হয় আত্মহত্যা করার কারণে। অর্থাৎ মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।


কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা তরুণ বয়সে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধিতে প্রবল ভূমিকা রাখে। করোনা মহামারির আগে কম থাকলেও দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই প্রবণতা। ২০২১ সালে প্রায় অর্ধেক আমেরিকান মাধ্যমিক পড়ুয়া বলে তারা বিগত বছরে ক্রমাগত দুঃখ ও হতাশা অনুভব করেছে, যার পরিমাণ ২০০৯ সালের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

পাঁচজনের মধ্যে একজনের আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করে এবং এই হার প্রায় ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ৬ শতাংশের চেয়ে ৯ শতাংশের জীবন শেষ করে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে। তবে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের জন্য এই প্রবণতা অভূতপূর্ব ঘটনা নয়। তবে দশ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের জন্য আত্মহত্যার প্রবণতার হার আগের চেয়ে অনেক বেশি।


তরুণদের কাছে তাদের অনুভূতি নিয়ে আলোচনা করা আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যদি তাদের মধ্যে হতাশা বেড়ে যায় তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সেই হতাশা কম হয়। এটি আরও বৃহ্ত্তর স্বার্থে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সতর্কবার্তা হচ্ছে, গত কয়েক দশকে আমেরিকান তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হার, চেষ্টা, আহত ও মৃত্যু বেড়ে যাচ্ছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রাথমিক তথ্য বলছে, গত বছর, কোনো বয়সের বা গোষ্ঠীর মৃত্যু ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষদের চেয়ে বৃদ্ধি পায়নি।

আত্মহত্যার প্রবণতার কারণগুলো স্পষ্ট বোঝার এটি শুরু মাত্র। স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হয়, শৈশবে দারিদ্র্য, পিতামাতার অসুলভ আচরণ বা পিতামাতার হতাশা এসবের কারণে কিশোর-কিশোরীদের আচরণে পরিবর্তন ঘটে। যদিও প্রকৃতপক্ষে, শৈশবের দারিদ্র্যতা হ্রাস পেয়েছে। কীভাবে তাদের জীবনমান বদলে যায় সেটি একটির সঙ্গে আরেকটির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব মূলত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।


কীভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা যায় এবং আরও ভালোভাবে টিনএজারদের রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের যুক্তিসঙ্গত ধারণা রয়েছে। সব তরুণ-তরুণী সমান ঝুঁকির মধ্যে থাকে না। যদিও আমেরিকার মেয়েরা তাদের জীবন শেষ করার চিন্তা করে বা এটি করার চেষ্টা করার জন্য নিজেকে আহত করার শঙ্কা বেশি, তবে কিশোর ছেলেদের আত্মহত্যা করে মারা যাওয়ার প্রবণতা প্রায় তিনগুণ বেশি। বিশেষ করে যেসব তরুণ-তরুণী সমকামী তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা তিনগুণ বেশি। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন যে শিশুরা গুরুতর প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল, যেমন অপদস্ত বা অবহেলা, তাদের সুখী শৈশব থাকলেও আত্মহত্যার প্রবণতা ২৫ গুণ বেশি।

ভৌগোলিক কারণও দায়ী তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতার পেছনে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, গ্রামীণ পরিবেশে বসবাসকারী শিশুরা যত্নের অভাবে উচ্চতর ঝুঁকিতে থাকে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে। উপজাতি সম্প্রদায়ের যুবকরা অন্য যে কোনো গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়। আলাস্কায় প্রতি লাখে তরুণদের বার্ষিক আত্মহত্যার হার ৪২ শতাংশ। যে কোনও রাজ্যের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ এবং জাতীয় হিসাবে গড়ে চারগুণ বেশি।

শুধু আমেরিকাতে নয়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও মেক্সিকোসহ আরও অনেক দেশেই গত কয়েক দশকে তরুণদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে নিয়ে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছয়জনের মধ্যে একজনের মানসিক-স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা আছে। যেখানে ২০১৭ সালে তা ছিল নয়জনের মধ্যে একজনের। বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কিত একটি জার্নালের তথ্য বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কিশোরদের একাকীত্ব বেড়েছে ৩৭টি দেশের মধ্যে ৩৬টিতে।

দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলেও ব্যতিক্রমী ঘটনা হচ্ছে, আমেরিকায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। যদিও ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। ২০২১ সালে সেখানে প্রতি এক লাখ যুবকদের মধ্যে ৬ দশমিক ৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যেখানে আমেরিকান তরুণ ১১ দশমিক ২ শতাংশ এ ধরনের পথ বেছে নেয়।

আমেরিকায় বন্দুক হাতে পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আত্মহত্যার জন্য ছেলেদের একটি সাধারণ ব্যাপার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা। যে কারণে সহজে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কেন ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি বন্দুক হামলায় মারা যায়। সুইজারল্যান্ডে, ২০০৩ সালের পর সামরিক-সার্ভিসে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার দ্রুত কমে যায় যখন দেশটি তার সেনাবাহিনীর আকার অর্ধেক করে দেয়। যেখানে প্রায়শই সৈন্যদের অস্ত্র বাড়িতে নিয়ে যেতে হতো। মহামারি চলাকালীন আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে। যার দরুণ ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ, যাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু এবং বাড়িতে বন্দুক আছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে আমেরিকানদের আত্মহত্যা বৃদ্ধির জন্য বন্দুকই দায়ী।

তবে এই গল্পে শুধু বন্দুকই একমাত্র অংশ নয়। অন্যান্য কারণ যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব, জলবায়ু-পরিবর্তন নিয়ে হতাশাও প্রভাব ফেলে এতে। তাছাড়া আরও কিছু কারণ আছে, তরুণরা তাদের পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত সেটিও মুখ্য হয়ে ওঠে। সিডিসি বলছে, যে সব শিশু স্কুলে অবাধে মেলামেশা করে তাদের মানসিক জটিলতার মধ্যে পড়ার শঙ্কা ক্ষীণ এবং আত্মহত্যার প্রবণতাও ৫০ শতাংশের কম।

এই প্রতিরক্ষামূলক স্তর ভীতি তৈরি করতে পারে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাথরিন কেইস বলেন, ‘কিশোরকালীন কার্যক্রমের ধরন যা সেই সামাজিক সংযোগের নির্দেশক হয়, বা আপনার সামাজিক বৃত্তে আশপাশের পরিবেশ ও অনুভূতি এমনভাবে তৈরি করবে যা কাঠামোগতভাবে পরিবর্তিত হয়।

আগে টিনএজাররা সনাতন পদ্ধতিতে যোগাযোগ বজায় রাখতো, যেমন খেলাধুলা, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। ১৯৭০ এর দশকে ১২তম ক্লাসের শিক্ষার্থী প্রতিদিনই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতো। ডক্টর কেইস গবেষণায় নিম্ন স্তরের সামাজিক কার্যক্রম ও বিষণ্নতার রিপোর্টের মধ্যে একটি সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন।

একটি বিতর্ক জিইয়ে আছে, তা হলো সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের বিচ্ছিন্ন করে নাকি সংযোগের জন্য একটি নতুন বিকল্প তৈরি করে। স্কুলের পরিবেশের মতোই, অনলাইন অভিজ্ঞতা শিশুদের সাহায্য বা ক্ষতিও করতে পারে। সিডিসির তথ্য বলছে, কোভিডের সময় সহকর্মী, পরিবার বা অন্যান্যদের সম্পৃক্ততা স্কুলে লোকদের সঙ্গে সংযুক্ত অনুভূতির মতোই প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলেছিল। সামাজিক মাধ্যমগুলো সে সময় তাদের কম একা বোধ করা থেকে বিরত রেখেছিল। তবে এটি আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যেমন ১৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ মলি রাসেলের আত্মহত্যার সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। সামাজিক-মিডিয়ার ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু তার মৃত্যুর জন্য দায়ী, বলে উপসংহারে এসেছে।

advertisement

Posted ৩:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.