বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
নিউইয়র্কে সহসাই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে এলামনাই এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিজ। বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নূতন এই সংগঠনের প্রাথমিক বিন্যাস ও কার্যক্রম এখন প্রক্রিয়াধীন। বৈশ্বিক মাত্রার এই সংগঠনের উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যত কর্মপন্থা সম্পর্কে ধারণা দিতে ইতোমধ্যেই আয়োজন করা হয় একটি অনুষ্ঠান। বীর মুুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ’র উদ্যোগে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী। নিউইয়র্ক সিটির উডসাইডস্থ গুলশান ট্যারেসে ‘এলামনাই এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিসিট ইভেন্ট’ এর ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্নধর্মী।
গত ১ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক এলামনাই। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেন আহ্বায়ক আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদের একটি বড় অংশ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী। তাদের বিভিন্ন এলামনাই এসোসিয়েশন রয়েছে। প্রবাসে নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করছেন তারা। কিন্তু সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একক কোন এলামনাই এসোসিয়েশন গড়ে উঠেনি এখনো। সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি আমব্রেলা সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নিউইয়র্কের অত্যন্ত পরিচিত মুখ বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার’র প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট আবু জাফর মাহমুদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই পুনর্মিলনী উন্মুক্ত করে দিবে নূতন দিগন্তের দুয়ার। তিনি বলেন, শিক্ষিত গবেষক প্রাক্তণ শিক্ষার্থীগণ প্রবাসে নিজ ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে পারবেন প্রস্তাবিত এই সংগঠনের মাধ্যমে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমুহের সকল শিক্ষার্থীকে এই সংগঠনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান আবু জাফর মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা দেশ, জাতি ও নূতন প্রজন্মের জন্য অবদান রেখে যেতে চাই। বিশেষ করে বর্তমান আবাসস্থল আমেরিকা এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের জন্য রয়েছে আমাদের অপরিসীম দায়িত্ব বোধ। এই দায়িত্ব বোধ থেকে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা এখনো যুদ্ধ করে যাচ্ছি, দারিদ্রতা ও সংকীর্নতার বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধ জ্ঞানের অন্বেষায়। এ যুদ্ধ সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার। আর যুদ্ধে সবাইকে অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে আসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা গবেষক ও বিশেষজ্ঞদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্যই হবে এই সংগঠন।
তিনি স্বাধীনতা পূর্ব বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুরের গণ অভ্যুত্থান, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সকল আন্দোলনসংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকাকারী পালন করেছেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষার্থীদের কথা স্মরণ করেন। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ শিক্ষার পাশাপাশি দেশের আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখতে নেমে এসেছেন রাজপথে। সামাজিক বৈষম্য দূর করে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দান করতে কখনোই পিছপা হননি তারা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন বহু শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান এলামনাই এসোসিয়েশন দিয়ে কোন ফেডারেশন নয়। এটা হবে সম্পূর্ন নূতন বিশ্বমানের, সার্বজনীন, অরাজনৈতিক ও অলাভজনক একটি সংগঠন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আবু জাফর মাহমুদকে পরিচয় করিয়ে দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর ডিকেন্স। জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স আবু জাফর মাহমুদকে অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উজেলার সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান। আবু জাফর মাহমুদ সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধে মাউন্টেন ব্যাটেলিয়ন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই’র উপদেষ্টা আবু জাফর মাহমুদ একজন লেখক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক। সফল ব্যবসায়ী আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কে হোম কেয়ার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পাইওনিয়ারের ভূমিকা পালন করেন। কমিউনিটির বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষে গড়ে তুলেন বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিস। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠান দু’টির প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট বলে জানান জাহাঙ্গীর ডিকেন্স। তিনি বলেন, আবু জাফর মাহমুদ দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। একই সমান্তরালে অবস্থান করছেন তিনি মূলধারার রাজনীতিতে। আবু জাফর মাহমুদ কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড নাম্বার-৪ এর অন্যতম সদস্য।
অনুষ্ঠান আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব সাঈদ তারেক, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, বিশিষ্ট অভিনেত্রী রেখা আহমেদ, ডা. আকতার হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহমুদ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কবির কিরণ, শেরেবাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই মনোয়ার ইসলাম প্রমুখ।
বক্তাগণ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ আর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র সমাজের ভূমিকা সহ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন। আবু জাফর মাহমুদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তারা। বক্তাগণ বলেন, দেশের পবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছি তাদের দেশ ও জাতির প্রতি রয়েছে দায়বদ্ধতা। বক্তাগণ দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দলীয় লেজুর বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠে অনুষ্ঠানে। আমরা প্রবাসীরা দেশের কাছে ঋনী। তাই সবাই ঐক্যবব্ধ হলে দেশ-জাতির জন্য যেকোন কল্যাণকর কাজ করা সম্ভব। তাই ঐক্যবব্ধ প্ল্যাটফর্ম দরকার বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। বক্তাগণ পরামর্শ দেন সময় নিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন ও কার্যকর সংগঠন গড়ার।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী কালা মিয়া, প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী চন্দন চৌধুরী, চন্দ্রা রায় ও ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত শিল্পী নীলিমা শশী। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই হাসান মাহমুদ ও প্লামী দাস সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। আবৃত্তি করেন গোলাম মোস্তফা ও সৈয়দা পারভীন আক্তার।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোলাম মোস্তফা ও কবি রওশন হাসান। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন আর বাইবেল থেকে পাঠের পর বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মওলানা সাদিক আর বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায়। এপর সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সবশেষে ছিলো নৈশ ভোজ। অনুষ্ঠানটির মঞ্চ সজ্জা ছিলো আকর্ষনীয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রতিকৃতি মুক্তিযুদ্ধ ও আন্দোলন সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন সংবলিত মঞ্চ সকলের প্রশংসা কুড়ায়। সমাপনী বক্তব্যে আবু জাফর মাহমুদ সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অচিরেই সবার পরামর্শ নিয়ে একটি সংগঠনের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।
Posted ৩:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh