বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
দ্বিতীয় স্টিমুলাস প্যাকেজ নিয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে এতোদিন ধরে যে দেনদরবার চলছিল হঠাৎ করেই তা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি সম্পর্কে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানের সতর্কতা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত স্টিমুলাস বিলম্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার এক টুইটার বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমি আমার কংগ্রেসনাল প্রতিনিধিসহ সকলকে ডেমোক্রেটদের সাথে স্টিমুলাস নিয়ে যে কোন ধরনের আলোচনা বা কথাবার্তা বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করছি। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত এ আলোচনা বন্ধ থাকবে। নির্বাচনে আমিজয়লাভ করার পর অবিলম্বে আমরা বড় আকারের একটি বিল পাস করবো, যাতে কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকান ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়। সিনেট মেজরিটি লিডার মিটচ ম্যাককনেল, হাউজ মেজরিটি লিডার কেভিন ম্যাককার্থি ও ট্রেজারি সেক্রেটারী যখন একটি প্রাইভেট কনফারেন্স কলে হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সাথে আলোচনার বসার জন্য কথা বলছিলেন, তার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দলীয় কর্মকতাদের নির্দেশ দেন আলোচনা বন্ধ রাখতে। ট্রেজারি সেক্রেটারী মুনকিনস ও স্পিকার পেলোসির মধ্যে আলোচনার জন্য কমপক্ষে দুটি ভিন্ন সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে তা আর হচ্ছে না।
ট্রাম্প তার টুইটে বলেন যে, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সদুদ্দেশ্যে আলোচনা করছেন না এবং সিনেট মেজরিটি লিডারের উদ্দেশ্যে বলেন যে এখন তার সকল মনোযোগ হচ্ছে নির্বাচনের আগে ইউএস সুপ্রীম কোর্টে মনোনীত অ্যামি কোনি ব্যারেটের মনোানয়ন নিশ্চিতকরণ। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর তিনি পুনরায় একটি টুইট করেন, যাতে মনে হয় যে, তিনি স্টিমুলাস আলোচনা বন্ধ করার জন্য তার প্রতিনিধিদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তা থেকে একটু পিছিয়ে এসেছেন। তিনি কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানান তার কাছে “স্ট্যাণ্ড এলোন বিল ফর স্টিমুলাস চেকস (১,২০০ ডলার)”- যা নির্বাচন পূর্ব সময়ে আমেরিকানদের কাছে সরাসরি পৌছানোর ইঙ্গিত, যা এতোদিন ধরে স্পিকার পেলোসি ও হোয়াইট হাউজের মধ্যে টানাপোড়েনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। পেলোসি বরাবর কোভিড সহায়তার ব্যাপারে হোয়াইট হাউজের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। ট্রাম্প তার টুইটে বলেন, “আমি যদি ‘স্ট্যান্ড এলোন বিল ফর স্টিমুলাস চেকস (১,২০০ ডলার)’ প্রেরণ করি তাহলে অবিলম্বে তা মহান লোকদের কাছে চলে যাবে। আমি এ মুহূর্তেই তা স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। ন্যান্সি, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?” তিনি কংগ্রেসের প্রতিও আহবান জানান এয়ারলাইসগুলোর জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের সহায়তায় ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের পে চেক প্রটেকশন প্রোগ্রামের অনুমোদন দিতে।
এই অনাকাঙ্খিত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ট্রাম্পের পুন:নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনায় বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে, এমনকি তার প্রশাসন ও ক্যাম্পেইনেও বিপর্যয় আসতে পারে। কোভিড পজেটিভ হওয়ার কারণে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন এবং গত ক’দিনের বিভিন্ন জরিপে তাঁকে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন দেখা যাচ্ছে। এ বিপর্যয়ের অর্থ হচ্ছে, যেসব ভোটার ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা স্টিমুলাস চেক না পেয়ে ভোট প্রদানে বিরত থাকবে অথবা ডেমোক্রেট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেবে। বিশেষ করে জাতীয় বেকারত্বের হার এখন ৮ শতাংশ এবং বাড়ি ভাড়া দিতে অপারগ হওয়ার কারণে বহু ভাড়াটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মুখে পড়েছে। নির্বাচনে বিপর্যয়ের আশংকা প্রকাশকারী মেইনের রিপাবলিকান সিনেটর সুজান কলিন্স বলেছেন, পরবর্তী কোভিড ১৯ এর সহায়তা পাওয়ার জন্য ঐকমত্যে পৌছতে নির্বাচনের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত বড় ধরনের ভুল। ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন. কোনো ভুল করবেন না, আপনাদের যদি কাজ না থাকে, আপনাদের ব্যবসা চালু না থাকে, আপনাদের সন্তানদের স্কুল যদি বন্ধ থাকে, আপনার কমিউনিটিতে যদি একের পর এক প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই দেখতে পান, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াতে পারে? কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব কোনোকিছু বিবেচনায় গ্রহণ করছেন না, তার কাছে এসব বিষয় গুরুত্বহীন।
কংগ্রেসে শীর্ষ রিপাবলিকান নেতাদের সাথে আলোচনার পরপর ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এসব নেতা অত্যন্ত উদ্বিগ্নভাবে স্পিকার পেলোসি ও ট্রেজারি সেক্রেটারী স্টিভেন মুনচিনের মধ্যেকার আলোচনা লক্ষ্য করছিলেন। অনেক সিনেট রিপাবলিকান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তারা এক ট্রিলিয়ন ডলারের ওপর যে কোনো স্টিমুলাস প্যাকেজ নিয়ে আইন তৈরিতে প্রস্তুত। কিন্তু রিপাবলিকানরা নিজেদের মধ্যে একান্ত আলোচনায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধী ছিলেন। গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াল্টার রীড ন্যাশনাল মিলিটারি সেন্টারে চিকিৎসাধীন থাকাকালে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “আমাদের মহান আমেরিকা স্টিমুলাস চায় এবং এর প্রয়োজন রয়েছে। এক সাথে কাজ করে এটি সম্পন্ন করুন।” কিন্তু পেলোসির উদ্যোগে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবে শীর্ষ রিপাবলিকানরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছিল যে করোনা মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়া ব্যক্তিদের প্রতি সপ্তাহে ৪০০ ডলার দেয়ার প্রস্তাবের প্রতি তারা অনুকূল মনোভাব পোষণ করে। কিন্তু এতে ফেডারেল সরকারকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ১.৬ ট্রিলিয়ন ড্রলার। কিন্তু পেলোসি এই প্রস্তাব বাতিল করে আলোচনায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তার প্রবল দাবী ছিল গত মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ২৫৪ বিলিয়ন ড্রলারের যে বিজনেস ট্যাক্স ব্রেক দিয়েছে তা বাতিল করা।
নতুন ঘোষণা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের চমকে দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দীর্ঘ সময় ধরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের মধ্যে করোনার স্টিমুলাস প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা চলছিল। নির্বাচনে জেতার পরপরই আমরা বড় আকারের স্টিমুলাস বিল পাশ করাবো। এতে পরিশ্রমী আমেরিকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার ওপর গুরত্ব দেওয়া হবে।
ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তে সবাই হতবাক। আগামী ৩ নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। না জিতলে নির্বাচনের ফল যে মানবেন না তার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে লড়ছেন ডেমোক্রেট নেতা ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh