বাংলাদেশ অনলাইন : | শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ব্রঙ্কস এলাকায় ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকালে বৃষ্টিভেজা আবহাওয়ার মধ্যে ‘ট্যাপস’ বাদ্যের করুণ সুর যখন বেজে উঠেছিল, তখন ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তা কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের নিহত সহকর্মী দিদারুল ইসলামের কফিন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দিদারুলের জানাজা শেষে পার্কচেস্টার জামে মসজিদ থেকে তার মরদেহ বের করে আনা হয়, যেখানে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য নীরবভাবে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ২৮ জুলাই (সোমবার) ম্যানহাটনের মিডটাউনে সংঘটিত এক বন্দুক হামলায় নিহত চারজনের একজন ছিলেন দিদারুল ইসলাম।
জানাজার সময় যখন বাদ্য বাজছিল, তখনই বৃষ্টির ফোঁটা ঘন হয়ে পড়ে ঝরতে শুরু করে। দিদারুলের কফিনের ওপর ঢাকা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) সবুজ, নীল ও সাদা রঙের পতাকার রঙ বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেন আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। এই আবেগঘন দৃশ্যের ভিডিও ও ছবি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঘটনাস্থল ছিল পার্কচেস্টারে অবস্থিত জামে মসজিদ ও দিদারুলের নিজ এলাকা।
দিদারুলের জানাজা চলাকালে এনওয়াইপিডি ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত হাজারও সদস্য বেশ কয়েক ব্লক জুড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, টানা বৃষ্টিতে ভিজলেও তারা ছিলেন যেন নিথর মূর্তির মতো।
এদিকে, নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি দিদারুলের পরিবারের সঙ্গে বসে মসজিদে প্রার্থনায় অংশ নেন। ৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ছিলেন দুই সন্তানের বাবা ও তৃতীয় সন্তানের অপেক্ষায় ছিলেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার মৃত্যু পার্কচেস্টারের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
দিদারুলকে স্মরণ করতে ও তার প্রতি সম্মান জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন স্বজনরা, মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা ও নিউইয়র্ক শহরের উল্লেখযোগ্য কিছু নেতা। তারা তাকে একজন নিবেদিতপ্রাণ বাবা ও নাগরিক হিসেবে স্মরণ করেন যিনি, তার সহনাগরিকদের সুরক্ষায় কাজ করতেন।
গত ২৮ জুলাই (সোমবার) ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি আকাশচুম্বী ভবনের লবিতে ২৭ বছর বয়সী এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন দিদারুল ইসলাম। সে সময় তিনি অফিসে ছিলেন না, তবে ভবনটিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন।
জানাজার সময় নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমিশনার জেসিকা টিশ ঘোষণা দেন যে, দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর ‘ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড’ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বক্তব্য শুরু করার আগে তিনি দিদারুলের স্ত্রীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসেন ও তাকে আলিঙ্গন করেন।
টিশ বলেন, দিদারুলের নিজের ভাষায়, পুলিশ ছিল সমাজের জন্য একটি কম্বল, যা সান্ত্বনা ও সহানুভূতি দান করে। তার সবকিছুই ছিল এই শহরের জন্য, নিজের পরিবার, বাংলাদেশের আত্মীয়দের জন্য ও তার এই মসজিদের (পার্কচেস্টার জামে মসজিদ) জন্য কিছু করে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সবাই ছিল তার দায়িত্বে ও তাদের বেড়ে উঠা দেখেই দিদারুল শান্তি খুঁজে পেতেন। কমিশনার আরও জানান, ২০১৯ সালে স্কুল সেফটি এজেন্ট হিসেবে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে দেন দিদারুল ও ২০২১ সালে পুলিশ কর্মকর্তা হন।
এনওয়াইপিডির ৪৭তম প্রিসিনক্টের কমান্ডিং অফিসার ডেপুটি ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, দিদারুলের কাজের প্রতি নিষ্ঠা তার কমিউনিটির প্রতি ভালোবাসারই প্রতিফলন। দিদারুল শুধু একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন না, তিনি ছিলেন এই শহরের ও আরও একটি দেশেরও সন্তান। বাংলাদেশ থেকে আগত এক গর্বিত অভিবাসী, যিনি এই দেশে আশা নিয়ে এসেছিলেন ও সম্মানের সঙ্গে শহরটিকে সেবা দিয়েছিলেন।
পার্কচেস্টারের কমিউনিটি নেতা ফয়সল আহমেদ বলেন, এই কর্মকর্তা তার সাদামাটা সেবার মাধ্যমে কমিউনিটিতে গর্বের প্রতীক হয়েছিলেন। আমাদের কেউ যখন নিউইয়র্কের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট কিংবা ফায়ার ডিপার্টমেন্টের মতো সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করেন, তখন আমরা গর্ব অনুভব করি। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, দিদারুলের মৃত্যু এক ‘দগদগে ব্যথা’। এই ব্যথা অত্যন্ত তীব্র ও কিন্তু আমি আশা করি, এই শহরের নাগরিকরা একে অপরকে আগলে রাখবে। গভর্নর ক্যাথি বাংলাদেশি কমিউনিটিকে নিউইয়র্কারদের ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানান।
নিহতের ভায়রা ও নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা কামরুল হাসান পরিবারের পক্ষে কথা বলেন ও দিদারুলকে তার ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও রক্ষক’ হিসেবে স্মরণ করেন। কামরুল বলেন, দিদারুল ছিলেন গর্বিত এক বাবা, একজন মামা, একজন ভাই এবং এক নির্ভরযোগ্য মানুষ। তিনি ছিলেন একজন সৎ নেতা। কেউ কিছু চাইলেই তিনি সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেন।
ডেপুটি ইন্সপেক্টর আশরাফ বলেন, দিদারুল ছিলেন এমন একজন, যাকে সহকর্মীরা সংকটে পাশে চাইতেন। তার এক সহকর্মী বলেছিলেন, দিদারুল যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারতেন ও সবসময় হাসিমুখে উপস্থিত হতেন। তিনি ছিলেন নম্র, স্থির ও নির্ভরযোগ্য। এই শোকের কোনো ভাষা নেই। তবে এটি এক সাহসিকতা, কর্তব্য ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনের সম্মান জানানোর মুহূর্তও বটে। তিনি মুসলিম বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য ও নিশ্চয় তাঁর কাছেই ফিরে যাবো। সূত্র : সিএনএন
নিউইয়র্ক পুলিশে মরণোত্তর পদোন্নতি পেলেন গুলিতে নিহত বাংলাদেশি দিদারুল
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানালেন তার সহকর্মী, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং স্বজনেরা। উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দিদারুল নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে (এনওয়াইপিডি) কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) জানাজা শেষে তাকে নিউ জার্সির টটোয়ার একটি বেসরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার জামে মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশ নেন এনওয়াইপিডির কমিশনার জেসিকা টিশসহ বহু কর্মকর্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশি। জানাজা ঘিরে পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ব্যারিকেড বসানো হয়।
জানাজার আগে এনওয়াইপিডির পক্ষ থেকে দিদারুল ইসলামকে মরণোত্তর পদোন্নতি দিয়ে ‘ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড’ পদে উন্নীত করা হয়। এনওয়াইপিডির এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে বলা হয়, ‘নগর রক্ষায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে গেছেন দিদারুল ইসলাম।’
কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ‘দিদারুল ছিলেন এক সত্যিকারের নায়ক। তিনি নায়কোচিতভাবেই আমাদের ছেড়ে গেছেন। শুধু নিউইয়র্ক নয়, বাংলাদেশও গর্ব করতে পারে তার ওপর।’ তিনি আরও বলেন, ‘দিদারুল দুই শহরের সন্তান—বাংলাদেশে তার শৈশব কেটেছে আর নিউইয়র্কে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ সেবামূলক জীবন। মাত্র ২০ বছর বয়সে নিউইয়র্কে আসেন এবং নিজের নিষ্ঠা, সাহস ও পরিশ্রমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।’
দিদারুলের পুলিশ ক্যারিয়ার শুরু হয় স্কুল সেফটি এজেন্ট হিসেবে। পরে তিনি পেট্রল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সহকর্মীদের মতে, তিনি ছিলেন নির্ভীক, সৎ ও সবার প্রিয়। নিহত দিদারুলের বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, দুই সন্তান ও অসংখ্য গুণগ্রাহীকে। কিছুদিন পরই তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা ছিল।
Posted ২:২৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh