নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াতকারী মুখচেনা অতিথিদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গত ১২ নভেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকর্মী ও প্রবাসীদের সাথে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতাকর্মীসহ চিরাচরিত মুখচেনা তথাকথিত অতিথিদের উপস্থিতি দেখে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ যখন ভয়াবহ আর্থিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসছে ডলারের রিজার্ভ। রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচনের আহবানসহ দুর্ভিক্ষের আগাম বার্তা দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী । ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে রাষ্ট্রদূতের সাথে মতবিনিময় সভাশেষে ব্যবস্থা করা হয় নৈশ্যভোজের । বাংলা প্রেস, নিউইয়র্ক
এতে অংশ নেন কথিত নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মীরা। শুধু নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়েই নয়, এমন দৃশ্য দেখা যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের নানা অনুষ্ঠানাদিতেও। এ নিয়ে নিউইয়র্কের সর্বত্রই চলছে আলোচনার ঝড়। গত ১২ নভেম্বর শনিবার নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে সরকার ও দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, তার দূতাবাসের দরজা সকল প্রবাসীর জন্য খোলা। পাশাপাশি দেশের ভাবমর্যাদা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরার জন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।তিনি বলেন,সকল প্রবাসীকে দলমতের উর্ধ্বে সকলকেই একজন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করতে হবে। গত সেপ্টেম্বরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে এটাই প্রথম মতবিনিময়।
এদিকে, গত কয়েক বছর যাবত নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে প্রতিমাসেই নানা ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। এতে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশ্যভোজের ব্যবস্থা। এসব অনুষ্ঠানে বরাবরাই আমন্ত্রণ জানানো হয় দলীয় নেতাকর্মীসহ তথাকথিত অতিথিদের । ঘুরে ফিরে প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাদের চেহারাই দেখা যায়। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের আওতাধীন ৮টি অঙ্গরাজ্য থাকলেও বাকি ৭টি অঙ্গরাজ্যের কোন অতিথিকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়না কোন অনুষ্ঠানে । এমনকি এসব অঙ্গরাজ্যের গণ্যমান্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি আজও পরিলক্ষিত হয়নি। শুধু তাই নয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বেলায়ও একই ধরনের কর্মকান্ড চলে আসছে।
নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মেইন, কানেকটিকাট, রোড আইল্যান্ড ও ভারমন্টের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাবান শিল্পী ও কলা কুশলীদের কখনই আমন্ত্রণ জানানো হয় না। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কের দু’টি সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস (বিপা) ও বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) দিয়েই দায়সারা গোছের অনুষ্ঠান করা হয়। প্রবাসীদের ধারনা যে এ দু’টি সংস্থার সাথে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের শত বছরের চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের খাতায় কবে অতিথিদের তালিকা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে তালিকায় রয়েছে তথাকথিত অনেক গণমাধ্যমকর্মী, কমিউনিটি ও দলীয় নেতাকর্মী, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রবাসী ভবঘুরে ব্যক্তিবর্গ। এসব লোকদেরকে কনস্যুলেট ও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অনুষ্ঠানে দেখলে অনেকেই হাসাহাসি করেন। তবে অতিথিদের তালিকা সংশোধনের জন্য অনেকবার মিডিয়াকর্মীরা তাদেরকে তাগিদ দিয়েছিলো তাতে কোন কাজ হয়নি। পত্রপত্রিকার খবর, লোকাল টিভি এবং সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে এসব মানুষের চেহারা দেখতে পাচ্ছেন অনায়াসে।রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তারা কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদেরকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বারবার আমন্ত্রণ জানান তা কারো বোধগম্য নয়। এ নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা ।
জনৈক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিউইয়র্কে লাখ লাখ বাংলাদেশির বসবাস। এদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ, যারা নিয়মিত মোটা অংকের অর্থ দেশে প্রেরণ করে থাকেন। এমন ব্যক্তিদের কখনই বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় ও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। যারা কালেভদ্রে দেশ টাকা পাঠান তাদেরকেই বারবার কেন কনস্যুলেট জেনারেলে ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়াতে হবে তা নিয়েও প্রবাসীদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? মধ্যাহ্নভোজ কিংবা নৈশ্যভোজ ব্যতিরেকে বাংলাদেশ কনস্যুলেট কার্যালয় ও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সকল প্রকার অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন সচেতন প্রবাসীরা। তাদের মতে অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে গুটিকয়েক তথাকথিত অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা না করে বড় পরিসরে জাতীয় অনুষ্ঠানগুলির আয়োজন করলে প্রবাসীরা বেশি আনন্দ পেতো। তেমনি প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মী ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের মতবিনিময় সভা প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মী ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে খাবারের ব্যবস্থা না করে বড় পরিসরে একটি অনুষ্ঠান করলেই সরকারি অর্থব্যয় কমানো যেতো বলে অনেক মত দিয়েছেন প্রবাসী । এতে অধিক সংখ্যক প্রবাসীর সাথে মতবিনিময় করতে পারতেন রাষ্ট্রদূত। একই সাথে তাঁকে একনজর দেখারও সৌভাগ্য হত প্রবাসীদের।
নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস ও কানেকটিকাটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নানা প্রয়োজনে তারা প্রতিমাসে লাখ লাখ ডলার দেশে প্রেরণ করে থাকেন ব্যক্তিগত কিছু প্রজেক্টের কাজ করার জন্য। কিন্তু তারা কখনই নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি। যারা মোটা অঙ্কের রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন তারা যদি সরকারি অনুষ্ঠানাদির আমন্ত্রণ না পান তাহলে যারা নিউইয়র্কে ভবঘুরে তারাই কেন বারবার কনসুলেটে অতিথি হয়ে আমন্ত্রন পান এটাই অনেকের প্রশ্ন।
উল্লেখ্য বিহির্বিশ্বে বাংলাদেশ কনসুলেটগুলোর মধ্যে জেদ্দার পরেই নিউইয়র্কের স্থান। পাসপোর্ট, ভিসাসহ যাবতীয় কনসুলেট সেবার কাজে বড় ধরণের আয় করে থাকেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল। রাষ্ট্রীয় এ তহবিলের অর্থ তথাকথিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্য নয়। এতে সকল প্রবাসীদের সমান অধিকার রয়েছে। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় অনুষ্ঠানাদির ওসিলায় মোটা অঙ্কের অর্থের অপচয়ের বিষয়টিও এসেছে প্রবাসীদের নানা আলোচনায়।
Posted ১:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh