বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ওমিক্রন ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও এ বিষয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে নিউইয়র্কে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, যা একমাস বলবৎ থাকবে।
এছাড়া যেসব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছিল বা শিথিল করা হয়েছিল, সেগুলোকে নতুন করে কার্যকর করা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের ২২টি দেশে ওমিক্রন ভাইরাসে বেশ কিছু লোক সংক্রমিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক যাত্রীদের কোভিড টেস্ট কঠোর করেছে সিডিসি : করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সম্ভাব্য বিস্তার রোধের উদ্দেশ্যে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে আগত সকল আন্তর্জাতিক যাত্রীদের তাদের যাত্রা শুরুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে করোনা টেস্ট নেগেটিভ ফলাফল নিয়ে যাত্রা শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগের বিধি অনুযায়ী পূর্ণ ভ্যাকসিন নেওয়া যাত্রীদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রারম্ভের ৭২ ঘন্টা আগে করোনাভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ ফলাফল গ্রহণযোগ্য ছিল। সিডিসি’র একজন মুখপাত্র বলেছে যে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণের আশঙ্কা দূর করতে সিডিসি ভ্রমণকারীদের জন্য আন্তর্জাতিক করোনা ভাইরাস টেস্ট এর বর্তমান নিয়ম পরিবর্তন করতে কাজ করে যাচ্ছে। যাত্রা শুরুর ৭২ ঘন্টা আগে করোনা টেস্ট করার পরিবর্তে ২৪ ঘন্টা আগে টেস্ট করানোর বিষয় যারা ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ করেছে তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এন্টিজেন বা র্যাপিড পিসিআর পদ্ধতির টেস্ট প্রযোজ্য। তবে কোন ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিন না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর সুযোগ কোন আন্তর্জাতিক যাত্রীর নেই।
এছাড়া প্রশাসন এটাও চিন্তা করছে যে আন্তর্জাতিক যাত্রীরা, আমেরিকান হোক বা বিদেশি হোকা, তারা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার তিনদিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে পুনরায় তাদের কোভিড টেস্ট করানোর এবং টেস্ট ফলাফল যাই হোক না কেন, সাত দিনের জন্য তাদের সেলফ-কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। এ বিধান চূড়ান্ত হলে লংঘনকারীদের ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে এ ধরনের কোনো বিধি জারি করা হলে আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে কিনা সেদিকগুলোও মাথায় রেখে কাজ করছে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮ লাখ লোক মারা গেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ কোটি ৩৪ লাখের অধিক। নিউইয়র্কে মারা গেছে প্রায় ৬০ হাজার লোক। সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৫২ লাখের অধিক এবং আক্রান্ত হয়েছে ২৭ কোটি।
নিউইয়র্কে ইনডোর মাস্ক পরিধান আবারও বাধ্যতামূলক
করোনা ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রণে সংক্রমণের আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় নিউইয়র্কে ৩ ডিসেম্বর থেকে জরুরী অবস্থা জারি করা ছাড়াও রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন, দোকানপাটসহ যেসব স্থানে জনসমাগম ঘটে সেসব স্থানে মাস্ক পরিধান করার উপর বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছে। শণাক্তকৃত নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ প্রবণতা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানিরা নিশ্চিত হতে না পারলেও তারা এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা অব্যাহত রেখেছেন এবং নিশ্চিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকলকে সতর্কভাবে চলাফেরা ও বিধিনিষেধ মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। এরই আলোকে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ও সিটি মেয়র ইতপূর্বে শিথিল করা বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা এবং বিশেষভাবে জনসমাগমের স্থানে মাস্ক পরিধান করার আহবান জানিয়েছেন।
স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল বলেছেন সবাই যদি মাস্ক পরিধান করেন তাহলে নিউইয়র্ক স্টেট প্রতিরোধহীন থাকবে না। যারা এখনো ভ্যাকসিন নেননি তিনি তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং সন্দেহ হলে কোভিড টেস্ট করানো, নিয়মিত হাত ধৌত করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি ছেড়ে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গত সোমবার হকুল বলেছেন, আগামী পাঁচটি দিন অপেক্ষা করুন, আমরা দেখতে চাই যে এর মধ্যে নতুন ভেরিয়েন্টের কোন প্রভাব পড়ে কিনা। মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, যদিও এখন পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার কোন রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, কিন্তু আমরা আশঙ্কামুক্ত হতে পারি না। সেজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করা জরুরী।
হেলথ কমিশনার ডা: ডেভ চোকশি বলেছেন যে, তিনি সকল নিউইয়র্কারকে সবসময়, বিশেষ করে জনসমাগমের স্থানগুলোতে গেলে মাস্ক পরিধানের জন্য সুপারিশ করছেন। সুপারিশগুলো করা হয়েছে ফেডারেল সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেশনের পরামর্শের প্রেক্ষিতে। চোকশি বলেছেন, বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটিতে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ৯৮ শতাংশই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত।
উল্লেখ্য, ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট দিন দশেক আগে দক্ষিন আফ্রিকায় সর্বপ্রথম শণাক্ত হয়েছে। এটি করোনাভাইরাসের অন্যান্য ভেরিয়েন্ট এর চেয়ে অধিক সংক্রামক কিনা অথবা করোনার ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ এড়ানোর মত এ সম্পর্কে গবেষকরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস এর মত দেশে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
নিউইয়র্কে জরুরি অবস্থা
করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে উদ্বেগের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ফের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর শুক্রবার এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। নিউ ইয়র্কের গভর্নরের আদেশে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার ফলে আগামী ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল বলেছেন, এখনো করোনার উদ্বেগজনক ধরন ওমিক্রন নিউইয়র্কে শনাক্ত হয়নি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগকে হাসপাতালের জরুরি প্রয়োজন নয় এমন এবং কম জরুরি কাজগুলো সীমিত করতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো সরবরাহ করার বিষয়ও থাকছে তাতে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত নতুন ধরনকে প্রাথমিকভাবে ওমিক্রন বি.১.১.৫২৯ নামে ডাকা হচ্ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। শুক্রবার ডব্লিউএইচও দক্ষিণ আফ্রিকা ও বসতোয়ানায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকে। বৈঠকে নতুন ধরনের নামকরণ করা হয়। ডব্লিউএইচও এক বিবৃতিতে বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বি.১.১.৫২৯ ধরনকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করছে। এটার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ওমিক্রন। প্রাথমিকভাবে হাতে আসা তথ্য বলছে, এই ধরনটির মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নতুন করে বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে।
নতুন শনাক্ত হওয়া ধরনটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ধরনটির সংক্রমণের ক্ষমতা এবং শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন এনেছে কিনা তা এ সময়ের মধ্যে খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি করোনার প্রচলিত চিকিৎসা ও টিকার ওপর কোনো প্রভাব আসবে কিনা তাও জানার চেষ্টা করা হবে। এদিকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও বসতোয়ানা, ইসরায়েল ও হংকংয়ে করোনার নতুন ধরনটির সন্ধান মিলেছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বেলজিয়ামে এখন পর্যন্ত একজনের শরীরে এ ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
২২ দেশে ছড়িয়েছে অমিক্রন
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন এ পর্যন্ত ২২ দেশে ছড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, সর্বশেষ সৌদি আরবে শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ২২ দেশে ছড়িয়ে পড়ল করোনার নতুন এই ধরন। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অমিক্রন ধরন প্রথম শনাক্ত হয় আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায়। এরপর আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ইসরায়েল, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, নাইজেরিয়া।
নতুন ধরন ছড়ানো শুরুর পর থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে বিভিন্ন দেশ। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, এই রেজিমেন্টের বিস্তার ঠেকাতে কমপক্ষে ৭০টি দেশ ও অঞ্চল আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, করোনার নতুন ধরন নিয়ে উদ্বেগ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) করোনার নতুন এ ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এই ধরন প্রসঙ্গে আফ্রিকার সেন্টার ফল এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও টি আলজেরিয়া বলেন, অস্বাভাবিকভাবে এটি রূপান্তরিত হয়েছে এবং অন্য যেকোনো ধরন থেকে এটি আলাদা। তিনি বলেন, ‘এই ধরন আমাদের হতবাক করেছে।’ টি আলজেরিয়া বলেন, সব মিলে ৫০ বারের মতো জিনবিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে নতুন অমিক্রন ধরন রূপ পেয়েছে। আর এর স্পাইক প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য বদলেছে ৩০ বারের বেশি।
ওমিক্রনে আতঙ্কিত বিশ্ব
দুই বছর ধরে বিশ্বকে ওলটপালট করে দেয়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নতুন নতুন রূপ ধারণ করে বিশ্বকে উতঙ্কিত করে তুলছে। ভারতীয় ডেল্টার প্রকোপ অনেকটা কমে আসায় মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টাকালে ফের ভ্যাকসিন প্রতিরোধী নতুন ধরন দ্রুত বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গবেষকরা করোনাভাইরাসের এ নতুন ভ্যারিয়েন্টকে চিহ্নিত করছেন বি.১.১.৫২৯ নামে। তবে আলোচনার সুবিধার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দিয়েছে ‘ওমিক্রন’। জাতিসংঘের এই সংস্থা ওমিক্রনকে তালিকাভুক্ত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে। করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর মতো নতুন ধরনটির একটি গ্রিক নাম দেওয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। সর্বশেষ পুরো পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো ধরনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডেল্টা’। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫১ লাখ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২৬ কোটির বেশি রোগী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনার নতুন এ ধরনটির প্রচুর পরিমাণে মিউটেশন হয়েছে এবং পূর্বের ধারণা থেকে বলা যায় যে এটিতে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকায় গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার খবর জানতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য বলছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। বতসোয়ানা, ইসরাইল, বেলজিয়াম ও হংকংয়েও এ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণ নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং এসওয়াতিনি থেকে ভ্রমণকারীরা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে ইউকে বা আইরিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য এ শর্ত প্রযোজ্য নয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, এসওয়াতিনি, মোজাম্বিক এবং মালাউই থেকে ফ্লাইটগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য এর আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়াও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে লাশের সারি দেখা ভারত নয়া ধরনে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠক করেছে। ওমিক্রন আতঙ্কে বাতিল করে দেয়া হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও’র সম্মেলন। এদিকে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসলেও জার্মানি এখন সংক্রমণ এবং রাশিয়া মৃত্যুর শীর্ষে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় বিগত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৯৪৬ জন নতুন শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ১ হাজার ২৩৯ জন। আর জার্মানিতে গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৪ জন মারা গেছে এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৭২ হাজার ১৫৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর একটি প্যানেল দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত ধরনটিকে ‘ওমিক্রন’ নাম দিয়েছে এবং এটিকে উদ্বেগের একটি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য ভাইরাস হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও একই শ্রেণিভুক্ত, যাতে ইউরোপে এখনও অসুস্থতা ও মৃত্যুর উচ্চতর হার বিরাজ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বি.১.১.৫২৯ নামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশনের একটি ‘খুব অস্বাভাবিক কনস্টেলেশন’ আছে। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে এবং এটিকে আরো রূপান্তরযোগ্য করে তুলতে সহায়তা করতে পারে। ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির প্রাথমিক লক্ষণগুলোর ইঙ্গিত অনুযায়ী, গাউটেংয়ের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশে এ ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে দেশটির অন্যান্য ৮টি প্রদেশে এটি ছড়িয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় ১০০টি নমুনাতে বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া নিশ্চিত করেছে। তবে, এ ভ্যারিয়েন্টটি বতসোয়ানা এবং হংকংয়েও পাওয়া গেছে। হংকংয়ের শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ভ্রমণকারী। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে বেলজিয়ামে শনাক্ত হয়েছে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। গত ২৬ নভেম্বর বেলজিয়ামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ভ্যানডেনব্রোকি। তিনি জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি করোনার টিকা নেয়নি। বিদেশ থেকে ফেরার পর তার শনাক্ত পরীক্ষা হয়। এতে তার দেহে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ই.১.১.৫২৯ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত ২২ নভেম্বর তার করোনা পজিটিভ আসে এবং আর আগে তিনি সংক্রমিত হননি।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, গাউটেংয়ে নতুন শনাক্তদের ৯০ শতাংশ বি.১.১.৫২৯ হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ এক বিবৃতিতে বলেছে, যদিও তথ্য সীমিত, তারপরেও আমাদের বিশেষজ্ঞরা নতুন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে জানতে অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। তারা সম্ভাব্য প্রভাবগুলো কী হতে পারে তা জানার চেষ্টা করছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা বলেছেন, সরকার এই ভ্যারিয়েন্টের প্রতিক্রিয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করবে কিনা তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এর আগে, গত বছর প্রথম দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাতে বেটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছিল।
Posted ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh