নিউইয়র্ক স্টেট করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ ভাড়াটিয়া ও বাড়ি মালিকদের সহায়তা প্রদানের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, অর্থাভাবে তা মাঝপথে বাধাগ্রস্থ হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নতুন কোন আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না। গত শুক্রবার নিউইয়র্ক স্টেটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ফেডারেল তহবিল থেকে এই খাতে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা ছিল তা না পাওয়ার কারণে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে তা পুনরায় বিবেচনা করা যেতে পারে। বলা হয় যে চলতি সামারে বাড়ি ভাড়া, বকেয়া বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের জন্য সহায়তার উদ্দেশ্যে ২.৪ বিলিয়ন ডলার কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার পর এ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ২৮০,০০০ টি আবেদন লাভ করেছে, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ আবেদনই এসেছে নিউইয়র্ক সিটি থেকে এবং গত সপ্তাহ পর্যন্ত আবেদনের বিপরীতে ১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। আরো ১.১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট বাড়ি মালিকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার পর দাবীর যথার্থতা প্রমাণ করার করা হবে।

বিবেচনাধীন আবেদন ছাড়াও আরো এক লাখ আবেদনপত্র পাওয়া যেতে পারে বলে নিউইয়র্ক স্টেট সরকার ধারণা করছে, যার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার আবেদনকারী সহায়তা নাও পেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন স্টেট কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, সেজন্য ছোটখাট কাউন্টিগুলো ছাড়া গত রোববার থেকে সমগ্র স্টেটে বাড়ি ভাড়া সহায়তা সংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ বন্ধ ঘোষণঅ করা হয়েছে। ছোট কাউন্টিগুলোতে আবেদনপত্র গ্রহণ বন্ধ না করার পেছনে কারণ হলো, ওইসব কাউন্টির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এখনো বিতরণ করা শেষ হয়নি। অন্যদিকে তারা বলছেন যে স্টেট গত জুন মাসের শেষ দিকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করার পর আবেদনপত্র আসতে শুরু করে মন্থও গতিতে, যার ফলে আগস্ট মাস পর্যন্ত তারা কোন আবেদনকারীর আবেদনের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করেনি। কিন্তু এরপর বন্যার তোড়ের মত আবেদন আসতে থাকে, যা সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। নিউইয়র্ক সিটি করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ আমেরিকান সিটিগুলোর অন্যতম ছিল, ভাড়াটিয়াদের আর্থিক দুরবস্থাও ছিল চরমে, যেখানে মাঝারি আয়ের পরিবারগুলোকে আয়ের অর্ধেক এবং অনেকক্ষেত্রে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয় বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে।

কংগ্রেস সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে বাড়িভাড়া ও ইউটিলিটি বিলের সহায়তার জন্য ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে। কিন্তু জনবহুল স্টেট বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির মত স্টেটের জন্য বরাদ্দ যথেষ্ট ছিল না। টেক্সাসের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি হয়েছে, যে কারণে তারা গত সপ্তাহ থেকে নতুন আবেদন গ্রহণ করা বন্ধ করেছে। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফেডারেল সরকার বিবেচনা করছে যে, যেসব স্টেটে ক্ষতিগ্রস্থ ভাড়াটিয়া বা বাড়ি মালিকদের আবেদনে দাবীকৃত অর্থের তুলনায় স্টেটগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ অধি কবা উদ্ধৃত্ত থাকবে, সেসব স্টেটের উদ্ধৃত অর্থ ওইসব স্টেটের জন্য বরাদ্দ করা হবে, যেখানে দাবীর পরিমাণ বেশি। নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল গত শুক্রবার বলেছেন যে ভাড়াটিয়াদের সহায়তার জন্য তিনি ফেডারেল সরকারের কাছে অতিরিক্ত প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করার অনুরোধ জানিয়েছে। নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যানদের অনেকে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টকে চিঠি লিখেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন যে আবেদন গ্রহণ বন্ধ করার আগে প্রতি সপ্তাহে নিউইয়র্ক স্টেট প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় দশ হাজার আবেদনপত্র পাচ্ছিল।

করোনাভাইরাস মহামারীর দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে ফেডারেল সরকারকে দফায় দফায় ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মরাটরিয়াম বৃদ্ধি করতে হয়েছে। ফলে ভাড়াটিয়াদের অপরিশোধিত ভাড়ার পরিমাণ স্তুপীকৃত হয়ে গেছে, যা পরিশোধের জন্য সরকারী সহায়তা ছাড়া উপায় ছিল না। শমজীবী অনেক মানুষের কর্মস্থলে লেঅফ ঘোষণা করায় তাদের পক্ষে শুধু বাড়িভাড়া নয়, খাদ্যসহ নিত্যদিনের সামগ্রীর জন্য সরকারি সহায়তার উপর নির্ভর করতে হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অনেকের পক্ষে সাবেক অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। নিউইয়র্ক সিটিতে বার্ষিক ৯৫,৪০০ ডলার এবং এর চেয়ে নিচের আয়ের চার জনের পরিবারের জন্য ভাড়া সহায়তা ঘোষণা করেছিল সরকার।

ফেডারেল সহায়তার জন্য আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হলেও ভুক্তভোগীরা স্টেটের দুটি কর্মসূচি থেকে বাড়িভাড়া সহায়তা লাভের জন্য আবেদন করতে পারেন, যার মধ্যে মধ্য আয় সম্পন্ন ভাড়াটিয়াদের জন্য ১২৫ মিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি এবং ১২৫ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি কর্মসূচি, যার আওতায় ওইসব বাড়ি মালিকরা সহায়তার জন্য আবেদন করার যোগ্য, যাদের ভাড়াটিয়ারা করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ভাড়া সহায়তার জন্য আবেদন করেননি।