বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
নিউইয়র্ক স্টেট আইনসভায় প্রণীত আইনে আগামী ১ মে’র পূর্ব পর্যন্ত নিউইয়র্কের ভাটাটেদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাউজিং কোর্টগুলোতে বিচারাধীন উচ্ছেদ মামলার প্রক্রিয়া ৬০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে কি পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে? উচ্ছেদের পর পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবে বিপুল সংখ্যক নিউইয়র্কার- স্কুল, হোমলেস শেলটার অথবা ফুড প্যান্টিগুলোতে? করোনা ভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় যে বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সিটিবাসীদের পক্ষে বাড়িভাড়াসহ পরিশোধসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে পারেনিনি বহু ভাড়াটে এবং অনেকে আংশিক পরিশোধ করেছেন। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রথমে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উচ্ছেদ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও মহামারীর তাণ্ডব না করার কারণে মানুষের কর্মহীন পরিস্থিতির কোন উন্নতি ঘটেনি; বরং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন যে শীতের মাসগুলোতে মহামারী পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। এ পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক নতুন করে আইন পাস করার মাধ্যমে ১ মে’র পূর্বে ভাড়াটেদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে, করোনা পরিস্থিতি অবসানের পরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ও শ্রমবাজার স্থিতিশীল হতে দীর্ঘদিন লেগে যাবে; মানুষের আয় পরিস্থিতির সহসা কোন উন্নয়ন ঘটবে না। নিউইয়র্ক সিটির অধিবাসীদের সিংহভাগই ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন এবং তাদের আয়ের সিংহভাগই বাড়িভাড়া পরিশোধের পেছনে ব্যয় হয়। কিন্তু গত মার্চ মার্চ থেকে মানুষের কর্মহীনতা এত বৃদ্ধি পেয়েছে অথবা আয় হ্রাস পেয়েছে যে, খুব কম মানুষের পক্ষেই পুরো বাড়িভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। এ পরিস্থিতির অনিবার্যতা হচ্ছে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ।
উচ্ছেদ হয়ে কোথায় যাবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ। স্কুলগামী অসংখ্য শিশুকে এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে স্থানান্তর করতে হবে এবং অনেকে নি:সন্দেহে পিছিয়ে পড়বে। ফুড পেন্ট্রিগুলোতে এখনই দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে মানুষকে খাবার সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে। উচ্ছেদের পর যদি ভিড়াক্রান্ত পাবলিক হাউজিং বা শেলটার হোমে আশ্রয় নিতে হয়, সেখানেও থাকবে নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় আশঙ্কা এবং বিশেষ করে তখনো যদি কোভিড ১৯ পরিস্থিতি থাকে তাহলে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা আরো বৃদ্ধি পাবে। পুরো নগরী জুড়ে এখন ভাড়াটেদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছেদ আতঙ্ক। ব্রুকলিনের এক স্কুল সহকারী দীর্ঘ সময় হোমলেস শেলটারে কাটানোর পর এক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন, যেখানে তার ভালোই কাটছিল, কিন্তু করোনা মহামারী তাকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে যে, ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় তাকে অ্যাপর্টমেন্টটি হারাতে হবে এবং আবারও হোমলেস শেলটারে ফিরে যেতে হবে, যেখান থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত তাঁর ছেলেকে ডাক্তারের কাছে নিতে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে তাকে। ইস্ট হারলেমে ৬৫ বছর বয়স্ক ইমিগ্রান্ট গত এপ্রিলে তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন এবং সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে স্ত্রীর মৃতদেহ সেনেগালে পাঠানোর পর থেকে তার পক্ষে আর বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
একটি গ্রোসারিতে কাজ করতেন তিনি, কাজ হারিয়ে কোনোমতে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। নিউইয়র্ক সিটির উত্তর দিকে এক বেকার মহিলা ভ্রাম্যমান হোম পার্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যেখানে অবস্থান করে তার সন্তান ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারবে বলে আশাবাদী ছিলেন তিনি। কিন্তু এখন তাকে উচ্ছেদের কবলে পড়তে হচ্ছে এবং তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন যে তার ছেলের শিক্ষার ভবিষ্যত কি? বাড়ি মালিকরাই বা কি করবেন? যাদের ভাড়া দেয়ার মত বাড়ির সংখ্যা খুব বেশি নয়, তারা মর্টগেজ পরিশেধের চিন্তায় অস্থির থাকেন। বিগত মাসগুলোতে খুব কম সংখ্যক বাড়ি মালিকের পক্ষেই নিয়মিত মর্টগেজ পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে, এর পরিণতি হচ্ছে বাড়ির ফোরক্লোজার বা বাড়ি ঋণ প্রদানকারকারীর ব্যাংকের হাতে চলে যাওয়া।
উচ্ছেদের পরবর্তী সমস্যাগুলো প্রবল হয়ে দেখা দেবে আগামী বসন্তকালে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের কারণে যখন করোনা মহামারীর প্রকোপ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেসব উচ্ছেদ মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, সেগুলোর নিস্পত্তির পর বড় ধাক্কা আসবে ১ মে থেকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করার দ্বিতীয় পর্যায়ের মামলা। ১ মে’র কয়েক সপ্তাহ পরই অনুষ্ঠিত হবে সিটি মেয়রেরর প্রাইমারি নির্বাচন এবং আশংকা করা হচ্ছে যে যিনি পরবর্তী মেয়র নির্বাচিত হবেন তার পক্ষে মহামারীর কারণে জড়ো হয়ে উঠা সমস্যাগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। কারণ সমাজে অসাম্য বেড়ে ওঠেছে দারুণভাবে এবং মহামারীর কারণে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে নিউইয়র্ক ষ্টেটে ১২ লাখ মানুষকে উচ্ছেদের কবলে পড়তে হবে বলে ‘স্টাউট’ নামে এক পরামর্শক সংগঠন আশংকা ব্যক্ত করেছে। কমিউনিটি সার্ভিস সোসাইটি অফ নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট ডেভিড আর জোনস বলেছেন যে, করোনা মহামারীর আগে থেকেই অনেক নিউইয়র্কার তাদের আয়ের অর্ধেক ব্যয় করছিলেন বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে।
বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলে তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র যে মহামন্দাগুলো পেরিয়ে এসেছে, বর্তমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীও অনুরূপ মহামন্দার অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে দেশকে এবং নিউইয়র্কের বিশাল নগরীকে আরো বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কারণ এখানে শুধু নগরবাসীর কথা নয়, নগরবাসীর ব্যবহৃত প্রতিটি সুযোগ সুবিধা ও স্থাপনার সাথে জড়িত, যেগুলোকে স্বাভাবিকভাবে পরিচালনযোগ্য করতেও বিপুল ব্যয় করতে হবে। জাতীয়ভাবে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ১ কোটি ৪০ লাখ ভাড়াটে উচ্ছেদের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা এবং ন্যাশনাল লো ইনকাম হাউজিং কোয়ালিশনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী এই বিপুল সংখ্যক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া কার্যকর করা হলে সমাজ সেবা খাতে ১২৮ বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয় হবে।
লিগ্যাল এইড সোসাইটির এটর্নি জুডিথ গোল্ডিনার বলেছেন, সিটি কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা রয়েছে কেউ গৃহহীন হয়ে পড়লে তার জন্য বাস্থানের ব্যবস্থা করা এবং এটি বেশ ব্যয়বহুল, পরিবার পিছু ৩,০০০ ডলারের অধিক এবং একক ব্যক্তির জন্য ২,০০০ ডলার। সিটির জন্য এটি সহনযোগ্য ব্যয় নয়। সিটির বাইরে উচ্ছেদের কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপর এতটা চাপ সৃষ্টির কারণ ঘটে না। ফেডারেল রিলিফ বিলে বাড়ি ভাড়া সহায়তা হিসেবে ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে, যার মধ্যে নিউইয়র্ক স্টেটের ভাগে বরাদ্দ পড়েছে ১.৩ বিলিযন ডলার। কিন্তু উদ্ভুত সংকট উত্তরণে এ পরিমাণ অর্থ সমুদ্রে এক ফোটা পানির মত। ভাড়াটে ও বাড়ি মালিকরা আরো অধিক পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ করার দাবী তুলছেন।
ব্রুকলিনের এক অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন দুই সন্তানেন জননী সাতচল্লিশ বছর বয়স্কা হালিমা আবদুল ওয়াহাব আবারও গৃহহীন হওয়ার আশ্কংা করছেন। তিনি গত মাসগুলোতে বাড়িভাড়া পুরো পরিশোধ করতে পারেননি এবং হাউজিং মরাটরিয়ামের মেয়াদ শেষ হলে বাড়ি মালিক তাকে উচ্ছেদ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সে সম্পর্কে তিনি নি:সন্দেহ। তাঁর কিশোর পুত্রের হৃদপিন্ডে সমস্যা রয়েছে এবং তিনি তার চিকিৎসকের আওতার মধ্যে থাকতে চান যাতে তার পুত্রের চিকিৎসায় কোন সংকট সৃষ্টি না হয়।
Posted ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh