বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
সিটির জ্যামাইকায় হিলসাইড এভিনিউ এর পাশে ১৬৭ স্ট্রিটেগত ৫ এপ্রিল শুক্রবার দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত জাকের হোসাইন খসরু পাঁচ দিন পর্যন্ত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ১০ এপ্রিল ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।) তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি তার স্ত্রী শামীমা আখতার শিউলি, বহু আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী জনাব খসরু গত চার দশক যাবত নিউইয়র্কে বসবাস করছিলেন। ১০ এপ্রিল বাদ মাগরিব জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে নামাজে জানাজার পর গত ১১ এপ্রিল তাকে নিউ জার্সির মার্লবরো গোরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে শামীমা আখতার শিউলি জানিয়েছেন যে, তার স্বামী জাকের হোসাইন খসরু ৫ এপ্রিল শুক্রবার জু’মা নামাজ শেষে বিকেল তিনটার দিকে ট্যাক্স ফাইল করার জন্য ১৬৭ স্ট্রিটে মান্নান গ্রোসারির উল্টো পাশে সিপিএ মাহমুদুল হকের অফিসে যান।
সিপিএ এ সময় অফিসে না থাকায় তিনি সাইডওয়াকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় এক দুর্বৃত্ত গাড়ি থেকে নেমে উত্তেজিত অবস্থায় বিনা কারণে প্রচণ্ড জোরে জনাব খসরুকে ধাক্কা দেয়। তিনি ধাক্কা সামলাতে না পেরে সাইডওয়াকে পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত লাগার ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ও মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
ইতোমধ্যে সিপিএ মাহমুদুল হক এসে পৌছেন এবং তার অফিসের সামনে জাকের হোসাইন খসরুকে আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯১১ এ ফোন করেন। পুলিশ ও ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে জনাব খসরুকে সেখান থেকে নিয়ে জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
জনাব খসরুর স্ত্রী শামীমা আখতার শিউলি এ সময় তার কর্মস্থলে ছিলেন। সিপিএ মাহমুদুল হক তাকে ফোনে তার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করার খবর জানালে তিনি তার অফিস থেকে জ্যামাইকা হাসপাতালে গিয়ে স্বামীকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। তিনি ধারণা করেছিলেন যে তার রোজা থাকার কারণে ব্লাড সুগার লেবেল কমে অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন।
তাছাড়া তার শিরায় কয়েকটি রিং পরানো আছে। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে জানান যে, তার স্বামীর মাথায় গুরুতর আঘাতজনিত কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং তিনি কোমায় চলে গেছেন। পুলিশের গোয়েন্দারা তাকে জানান যে, অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তের প্রচণ্ড ধাক্কার কারণে জাকের হোসাইন খসরু সাইডওয়াকে পড়ে যাওয়ায় কংক্রিটের আঘাতে গুরুতর আহত ও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন।
তারা ঘটনাস্থলের পাশেই কিউট ডেন্টালের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছেন যে, দুর্বৃত্ত তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পর কিউট ডেন্টালের সামনে এক মহিলার সাথে কথা বলেন এবং এরপর তার গাড়িতে উঠে সেখান থেকে কেটে পড়েন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে গাড়ির নম্বরও পুলিশ শণাক্ত করেছে বলে জানা গেছে।
শামীমা আখতার শিউলি জানান যে, ৫ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ১০ এপ্রিল বুধবার বিকেলে তার অনুপস্থিতিতে ও তার অনুমতি না নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খসরুর লাইফ সপোর্ট খুলে নেয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে শামীমা হাসপাতাল থেকে জরুরী প্রয়োজনে তার জ্যামাইকা হিলসাইডের বাসায় আসার পর খসরুর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণণা করা হয়। উল্লেখ্য, জাকের হোসাইন খসরু ময়মনসিংহ শহরের আনন্দমোহন কলেজ রোডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি শেরপুর শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আখতারুজ্জামানে কন্যা শামীমা আখতার শিউলিকে বিয়ে করেন।
তারা জ্যামাইকার হিলসাইড রোডের পাশে ১৭৩ স্ট্রিটে নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন। আলাপকালে শামীমা আখতার শিউলি এ ধরনের ঘটনার যাতে আর কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে, কারও প্রিয়জনকে যাতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ না করতে হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার স্বামীর হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। শেরপুর জেলা সমিতি ইউএসএ’র সভাপতি আনোয়ার হোসেন ঘটনার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ করে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রতি আহবান জানান জনাব খসরুকে হত্যার জন্য দোষী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার এবং এ ব্যাপারে মূলধারার রাজনীতিবিদরা যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেজন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী দুর্বৃত্ত কর্তৃক জাকের হোসাইন খসরুর হত্যাকান্ডের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা দাবি জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসরু সাহেবকে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য দাবী জানাবেন।
জ্যামাইকায় বৃদ্ধাকে আঘাতকারী কিশোর গ্রেফতার
গত সপ্তাহের ৭ এপ্রিল রোববার সকালে জ্যামাইকা হিলসে ৬৮ বছর বয়স্কা এক নারী যখন প্রার্থনা করার জন্য গির্জার সিড়ি দিয়ে উঠছিলেন, তখন ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ৩০০ ডলার, সেলফোন ছিনতাই করেছিল। গোয়েন্দা পুলিশ চার দিন পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্দেহভাজন কিশোরকে জ্যামাইকার ৮৯ এভিনিউয়ে তার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে আক্রমণের অপরাধ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ফ্রেশ মিডোজের ১০৭ তম প্রিসিনক্টের গোয়েন্দারা চার দিনের ম্যানহন্টের পরে জ্যামাইকার ৮৯ তম অ্যাভিনিউতে তার বাসভবনের সামনে থেকে কিশোরটিকে আটক করে। ঘটনাটি ঘটে যখন আইরিন তাহলিয়াম্বুরিস ৭ এপ্রিল সকালের গণসংযোগে যাচ্ছিলেন।
জানা গেছে, কিশোরের আচমকা হামলায় মাটিতে পড়ে গিয়ে বৃদ্ধা গুরুতর আহত হন। তার নাম আইরিন তাহলিয়ামবোরিস। তিনি সেন্ট ডেমেট্রিওস গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কিশোর তাকে ধাক্কা দিয়ে হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। মহিলা নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার মাথার খুলি ভেঙে যায় এবং এর ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
হামলাকারী কিশোর হ্যান্ডব্যাগ ছিনিয়ে নেয়, যাতে $৩০০ নগদ ছিল, তার সেল ফোন, ক্রেডিট কার্ড এবং তার গাড়ির চাবি ছিল। তাকে নিউইয়র্ক প্রেসবাইটেরিয়ান কুইন্স হাসপাতালে নেয়ার পর আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। ডাক্তাররা তার অবস্থা সংকটজনক, তবে স্থিতিশীল বলে জানান। পুলিশ মহিলার নিশান আলটিমা গাড়িটি ঘটনাস্থল থেকে তিন মাইল দূরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পায়। পুলিশ জানায় যে গ্রেফতারকৃত কিশোর এর আগেও বেশ ক’বার গ্রেফতার হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সিটির ওজোন পার্কে পুলিশ উইন রোজারিও নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বাংলাদেশী তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। পুলিশের বক্তব্য ছিল যে ওই তরুণ একটি কাঁচি হাতে পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাবে এগিয়ে আসছিল। পুলিশ তাকে নিস্ক্রীয় করার জন্য তার শরীরের অন্য কোথাও গুলি করতে পারত। কিন্তু তা না করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে। তরুণকে হত্যার ঘটনায় এ প্রশ্নটি উঠলেও বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষ থেকে গুরুতর কোনো আপত্তি না উঠায় ঘটনাটি ধামাচাপাপ পড়ে যায়। এসব ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ না উঠলে একটির পর আরেকটি ঘটনা ঘটতেই থাকবে। যা ওই ঘটনার মাত্র আট দিন পর জাকির হোসাইন খসরুর ক্ষেত্রে ঘটেছে।
জাকের হোসাইন খসরু দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়ে পাঁচদিন পর্যন্ত হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তার ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংগঠনকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশীদের সংগঠনগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরনের আনন্দ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে এবং বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের পদ দখল করার প্রতিযোগিতায় জড়িত থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিপদ আপদে সংঘবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী আমেরিকান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাদের পৃথক সংগঠনও রয়েছে। সেখানেও একই ধরনের প্রতিযোগিতা ও পদোন্নতি লাভের চেষ্টা ছাড়া কমিউনিটির সদস্যদের সমস্যায়, বিশেষ করে বাংলাদেশীদের প্রতি কোনো অন্যায় আচরণ হলে, তারা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ও সহায়তা করতে কোনো ভূমিকা রেখেছেন, এমন দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে না। প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেভাবে হামলার শিকারে পরিণত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে এবং দোষীরা অবলীলায় পার পেয়ে যাচ্ছে, পুলিশ সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের গ্রেফতারে উদ্যোগী পর্যন্ত হচ্ছে না, বাংলাদেশীদের সমন্বিত ও সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ উঠলে এমন ঘটতো না বলে অনেকে মনে করেন।
জাকের হোসাইন খসরুর ওপর দুর্বৃত্তের হামলা প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাদের কাছে দুর্বৃত্তের গাড়ির নম্বর থাকা সত্ত্বেও তারা গাড়ির হদিস করতে পারেনি। এর কারণ হতে পারে যে, বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের ওপর সংঘবদ্ধ কোনো চাপ নেই বা তারা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়নি। অথচ পুলিশ সক্রিয় হলে কি না হতে পারে! জনাব খসরুর ওপর হামলা দুদিন পর গত ৭ এপ্রিল রোববার সকালে জ্যামাইকা হিলসে ৬৮ বছর বয়স্কা এক নারী যখন প্রার্থনা করার জন্য গির্জার সিড়ি দিয়ে উঠছিলেন, তখন ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ৩০০ ডলার, সেলফোন ছিনতাই করেছিল। তার গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিল।
গোয়েন্দা পুলিশ চার দিন অনুসন্ধান চালিয়ে গত ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্দেহভাজন কিশোরকে জ্যামাইকার ৮৯ এভিনিউয়ে তার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করে। ভুক্তভোগী মহিলার কমিউনিটি থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, যে কারণে তারা সক্রিয় হয়ে উঠে এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হামলাকারী কিশোরের মাথা হুডে ঢাকা থাকা সত্ত্বেও তাকে পুলিশ গ্রেফতার ও তার ব্যবহৃত গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেক্ষেত্রে পুলিশ কর্তৃক জাকের হোসাইন খসরুর হামলাকারীকে আটক করতে না পারার যৌক্তিক কোনো কারণ থাকতে পারে না। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
Posted ১:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh