বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
ইমিগ্রান্টরা যদি পাবলিক চার্জ বা সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেন তাহলে তারা গ্রীন কার্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা সুযোগ লাভ করতে পারবেন না। ট্রাম্প প্রশাসন গত বছর এক আদেশে জানিয়েছিল যে যেসব ইমিগ্রান্ট গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন করবেন তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ফুড ষ্ট্যাম্প, নগদ আর্থিক সুবিধা, আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে তাদের গ্রীনকার্ডের আবেদন অনুমোদন করা হবে না। ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করলে গত জুলাই মাসে জর্জ ড্যানিয়েল নামে একজন ফেডারেল জজ করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করার আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি তার স্থগিতাদেশে চিকিৎসক ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছিলেন যে, করেনাজনিত মহামারীর সময় তাদের চিকিৎসা সুবিধা ও সরকারি সহায়তা গ্রহণের কারণে গ্রীনকার্ড আবেদন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে তাদেরকে অযোগ্য বিবেচনা করা হয়, তাহলে সারাদেশে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
তিনি মহামারী বিরাজমান থাকাকালে গ্রীনকার্ড আবেদনকারী ইমিগ্রান্টদের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘পাবলিক চার্জ’ কার্যকর স্থগিত রাখার আদেশ দেন। কিন্তু সেকেণ্ড কোর্ট অফ আপিলস চলতি মাসে ট্রাম্প প্রশাসনকে গ্রীনকার্ডের জন্য ইমিগ্রান্টদের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘পাবলিক চার্জ’ পরীক্ষা পুনরায় কার্যকর করার পক্ষে রায় দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, গ্রীনকার্ড অনমোদনের জন্য তারা ‘পাবলিক চার্জ’ পরীক্ষা পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে। ইমিগ্রান্ট অধিকার প্রবক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বিপর্যস্ত ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির উপর এখন এই বিধি আরোপ করা হলে তারা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে। ২০১৯ সালের এই বিধি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের অধিকতর ক্ষমতা দান করে, যাতে তারা পাবলিক চার্জ ওয়েলথ টেস্টের নামে সরকারি সুবিধা গ্রহণকারী ইমিগ্রান্টদের গ্রীনকার্ডের আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারে। ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) এর ওয়েবসাইটে গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, ২০১৯ এ জারি করা পাবলিক চার্জ টেস্ট ২০২০ সালের পর দাখিল করা সকল বিবেচনাধীন গ্রীনকার্ড আবেদন এবং ভবিষ্যত আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ইউএসসিআইএস সুপ্রীম কোর্টের গ্রীন লাইট পাওয়ার পরই এ বিধি অনুসারে আবেদন বিবেচনা করবে। গত জুলাই মাসে বিচারক জর্জ ড্যানিয়েলের স্থগিতাদেশের পর যেসব গ্রীনকার্ড অনুমোদন করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাবলিক চার্জ ইস্যু সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অন্তর্ভূক্ত করা হয় ১৮৮০ দশকের প্রথম দিকে, যখন আমেরিকান সরকার ইমিগ্রেশনকে ফেডারেল পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ আরোপের আওতায় নিয়ে আসে, যার মধ্যে কিছু কিছু আমেরিকান কমিউনিটিকে বিপন্ন করার অভিযোগে চাইনিজ ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে ‘পাবলিক চার্জ’ অভিধা বলতে ব্যাপক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বহু দশক ধরে এ আইনকে স্বল্প আয় বিশিষ্ট ইমিগ্রান্ট এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে ডিপোর্ট করার জন্য প্রয়োগ করা হলেও ট্রাম্প প্রশাসন পাবলিক চার্জের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ করে ক্লিনটনের সময়ের এ সংক্রান্ত নির্দেশনার কাঠামোকেও ছাড়িয়ে যায়, এবং ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয় যে, যেসব ইমিগ্রান্ট সরকারের নগদ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদী প্রাতিষ্ঠানিক সেবা গ্রহণ করছে তাদের গ্রীনকার্ড আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে পাবলিক চার্জ বিধি প্রয়োগের জন্য। ২০১৯ এর পাবলিক চার্জ বিধিতে কোনো ইমিগ্রান্ট, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান তাহলে তিনি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে কি পরিমাণ সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেছেন সেসব নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের। এর মধ্যে স্ন্যাপ বা সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিষ্ট্যান্স প্রোগ্রাম, ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে কিছু কিছু মেডিকেইড বেনিফিট, আবাসনে ক্ষেত্রে সেকশন ৮ ভাউচারসহ বিভিন্ন ধরনের সরকাররি ভতুর্কিপ্রাপ্ত হাউজিং অন্তর্বুক্ত।
ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তারা এই নীতির তীব্র সমালোচনা করে নীতি নিধারকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, এই নীতি প্রয়োগ করার ফলে ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলো, যাদের সরকারি সুবিধা গ্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তারা সরকারি সুবিধা গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। এমনকি যেসব পরিবারে গ্রীনকার্ডধারী অথবা আমেরিকান ন্যাচারালাইজড সিটিজেন রয়েছে, সেসব পরিবার এবং স্থায়ী বাসিন্দা ও সিটিজেনও এর আওতায় পড়বেন, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য যুক্তি দিয়ে আসছে যে, এই বিধি প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটিকে স্বনির্ভর করে তোলা, যাতে তাদেরকে সরকারি সুবিধার মুখাপেক্ষী না হতে হয়।
Posted ১:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh