বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
নিউইয়র্কের বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন আইনজীবী, ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিষ্ট্রিক্ট লিডার এটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত ইমিগ্রেশন বিলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ বা আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দেয়ার যে আভাস দেয়া হয়েছে তাতে সকল ইমিগ্রান্টের গ্রীনকার্ড পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে না। বিশেষ করে যারা ট্যুরিষ্ট ভিসা নিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এদেশে রয়ে গেছেন, যারা স্টুডেন্ট ভিসায় এসে পড়াশোনা শেষ করার পর দেশে ফিরে না গিয়ে বৈধতা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন ক্যাটাগরির আওতা আবেদন করেছেন এবং কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে, তারা জো বাইডেনের প্রস্তাবিত ইমিগ্রেশন আইনের মধ্যে পড়বেন না। গত চার বছর ধরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক ইমিগ্রান্ট বিরোধী পদক্ষেপে চরম ভীতি ও নিদারুন অস্বস্থির মধ্যে কাটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ ইমিগ্রান্টরা।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযান পরিচালনার সময় থেকে অবৈধদের বৈধতা দেয়ার ব্যাপারে যে আশার বাণী শুনিয়ে আসছিলেন তাতে অবৈধ ইমিগ্রান্টরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আলোর মুখ দেখতে পেয়েছেন এবং বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তারা বৈধতা লাভের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইমিগ্রেশন বিষয়ক নির্বাহী আদেশ জারি করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতি থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। নি:সন্দেহে বাইডেনের ঘোষণা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের প্রতি সহানুভূতি ও উদার মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। তবে তাঁর আদেশে সকল অবৈধ ইমিগ্রান্টের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে এমন নয়।
নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন যাবত ইমিগ্রেশন আইন নিয়ে কাজ করছেন ও ইমিগ্রান্টদের পক্ষে আইন লড়াই লড়ে আসছেন এটর্নি মঈন চৌধুরী।
আইনজীবী ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাহী আদেশের উপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী যেসব ইমিগ্রান্টের এদেশে বসবাসের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই শুধু তাঁরা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের আওতায় আসবেন। যাঁদের ইমিগ্রেশনের আবেদন সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) অথবা ইমিগ্রেশন জজের আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে তারা প্রেসিডেন্টের আদেশ থেকে কোনো সুবিধা পাবেন না।
তিনি জানান ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা, এমনকি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়সহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গ্রিনকার্ডের কয়েক লাখ আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে তারা এর আওতাধীন হবেন না। যাঁদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন আদেশ রয়েছে বা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার পর বৈধতা লাভের জন্য আবেদন করেননি, তেমন লোকজনকে নির্বাহী আইনে সুবিধা পাবেন। এটর্নি মঈন বলেন, ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তা ও যারা ইমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করে, সে গ্রুপগুলো প্রেসিডেন্টের আদেশে সুবিধাভোগী হিসেবে অন্যদেরও অন্তর্ভূক্ত করার জন্য কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এটর্নি মঈন নিজেও গত ২১ জানুয়ারি সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শুমারের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি আরো বলেন, যাদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই তাদেরকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আদেশ বলে বৈধতা দেয়া হলে তা থেকে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো এবং সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশগুলো থেকে আগত ইমিগ্রান্টরাই বৈধতা লাভের সুবিধা পাবে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট এতে কোনো সুবিধা পাবেন না। কারণ বাংলাদেশ থেকে খুব কম সংখ্যক লোকই মেক্সিকো সীমান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এ কারণে মঈন চৌধুরী চান যে, যাঁদের ইমিগ্রেশন আবেদন ও মামলা বিবেচনাধীন তাঁরা যাতে তাদের আগের আবেদন প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচিতে আবেদন করতে পারে, প্রেসিডেন্টের আদেশে সেই সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট বসবাস করছেন। ইমিগ্রেশন আইনের নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি বা এর আগে থেকে কাগজপত্র বিহীন ইমিগ্রান্টরা পাঁচ বছরের জন্য কাজের অনুমতি পাবেন। তাঁরা পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রিনকার্ড ও এর তিন বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রস্তাব অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় আসা ব্যক্তিরাও কোনো সুবিধা পাবেন না।
সিএসএস-লুলাক কর্মসূচিতে গ্রিনকার্ড না পাওয়া ব্যক্তিরাও নথিপত্রহীন হিসেবে সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া, যাঁরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার পর শুধু কাজের অনুমতি পেয়েছেন, তাঁরা বহিষ্কারের আদেশের বাইরে থাকলেও এই বিলের সম্পূর্ণ সুবিধা পাবেন কি না, তা বিলটি পাস হলে জানা যাবে। কংগ্রেসে ওই বিল পাস হলেও গুরুতর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরাও সুবিধা পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ইমিগ্রান্ট বসবাস করছে বলা হলেও অবৈধদের সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য কারও কাছেই নেই।
Posted ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh