বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
করোনা ভাইরাস মহামারীতে ভাড়াটিয়াদের আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ না করার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে নির্দেশ দিয়েছেন, এই মেয়াদ অবসানে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান উচ্ছেদের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এনিয়ে দেশব্যাপী আতঙ্কে আছেন দরিদ্র ভাড়াটিয়ারা। ইউএস টুডের এক রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে এবং করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর তাদের মধ্যে প্রায় চার কোটি আমেরিকানকে ভাড়া পরিশোধ না করতে পারলে উচ্ছেদ রহিত করা বা মরাটরিয়াম দ্বারা উচ্ছেদ থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন কোন স্থানে স্থানীয় ও ষ্টেটের আইনে উচ্ছেদ রহিতকরণ এপ্রিলের শেষ সময় পর্যন্ত বর্র্ধিত করা হয়েছে। কিন্তু মরাটরিয়ামের মেয়াদ অবসানে তারা নিশ্চিতভাবে উচ্ছেদের শিকার হতে যাচ্ছেন। কারণ এখনো মহামারী শেষ হয়নি এবং বহু আমেরিকান এখনো কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে।
সাবেক হাউজিং এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারী জুলিয়ান ক্যাষ্ট্রো বলেন উচ্ছেদ রহিতকরণ আইনের মধ্যে বেশ ফাঁকফোকড় রয়েছে, যার ফলে বাড়ি মালিকরা ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করার সুযোগ নিতে পারেন। কোন কোন ষ্টেটে ইতিমধ্যে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছে এবং তা রহিত করতে হতে বাইডেন প্রশাসনের প্রয়োজন হাউজিং সংস্কার আইনের প্রতি মনোযোগী হওয়া। হাউজিং বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশন “হাউজিং পেবুক প্রজেক্ট” এর কো-চেয়ার ক্যাষ্ট্রো আরও বলেছেন, ‘শুধু যে ভাড়া পরিশোধ না করার কারণেই কোন ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা হতে পারে তা নয়, বাড়ি মালিকরা যদি ভাড়াটিয়ার সঙ্গে ভাড়ার চুক্তি নবায়ন না করেন তাহলেও উচ্ছেদ করা হতে পারে।’
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের ডাইরেক্টর ডা: রচেল ওয়ালেনস্কি গত শুক্রবার একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ রহিত করা হলে ভাইরাসের সংক্রমন হ্রাস পেতে পারে। উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রে আড়া কোটির অধিক লোক করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা ভাইরাসে সংক্রমমিত হয়ে ১০ হাজার ৭শ’ জন এমন ব্যক্তি ছিলেন যাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল গত গ্রীস্মে। এ অবস্থায় উচ্ছেদ রহিতকরণ কার্যকর না হলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে উচ্ছেদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভাড়াটিয়াদের উচিত সিডিসি ঘোষণার স্বাক্ষরিত চিঠি বাড়ি মালিকদের কাছে উপস্থাপন করা।
ন্যাশনাল লো ইনকাম হাউজিং কোয়ালিশন ইন ওয়াশিংটনের প্রেসিডেন্ট ডায়ানা ইয়েনটেল বলেছেন যে, নিম্ন আয়ের ভাড়াটিয়া, প্রবীন ভাড়াটিয়া, ইমিগ্রান্ট ও অন্যান্য ভাড়াটিয়া, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় বা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না, তাদের মধ্যে বাড়ি ত্যাগ করার হার অধিক। কারণ তারা বাড়ি মালিকদের ক্রমাগত চাপে বাড়ি ত্যাগ করার ছাড়া আর কোন বিকল্প দেখেননি। ইয়েনটেল বলেছেন, এই শ্রেনির ভাড়াটেদের জন্যই উচ্ছেদ রহিতকরণ বিধি অধিক প্রযোজ্য, কিন্তু তারা জানেন না যে উচ্ছেদ প্রতিহত করার জন্য তাদের করণীয় কি এবং বাড়ি মালিকরা তাদের এ ধরনের অসচেতনতার সুযোগ গ্রহণ করছেন। সিডিসির আদেশে বাড়ি মালিকদের উচ্ছেদ আদেশ জারি করা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও তা তারা পালন করছে না।
হাউজিং ট্রাষ্ট ফান্ড প্রজেক্টের ডাইরেক্টর মাইকেল এন্ডারসন বলেছেন, অনেক হাউজিং আদালত উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার শুনানি অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক মহামারী চলাকালে কোন পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ না করার বর্তমান বিধি সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত। নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞানি ও এভিকশন ল্যাব এর ডাইরেক্টর ম্যাথু দেশমন্ড বলেছেন, অনেক ভাড়াটিয়া পরিবার তাদের অসচেতনতার কারণে বাড়ি মালিকের উচ্ছেদ সংক্রান্ত নোটিশকে উচ্ছেদ আদেশ বিবেচনা করে বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অথচ তারা সিডিসির আদেশের অধীনে মরাটরিয়াম মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে বাড়িতে আছেন সেখানেই থাকতে পারেন। তিনি বলেন, মিলওয়াকিতে ৩৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারা উচ্ছেদের নোটিশকে বাড়ি ছাড়ার আদেশ ভেবে আদালতের শরণাপন্ন না হয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। গত ২৩ জানুয়ারী পর্যন্ত সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ২৭টি সিটিতে বাড়ি মালিকরা হাউজিং কোর্টগুলোতে ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধে ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৬টি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেছে। অথচ বাইডেনের উচ্ছেদ রহিতকরণ আদেশে মহামারীতে সরাসরি আক্রান্ত লোকজন যে বাড়িতে রয়েছেন সেখানেই অবস্থান করতে পারেন। নিউ অরলিয়ন্সের ভাড়াটিয়া রক্ষা সংক্রান্ত কমিউনিটি সংগঠন ‘হাউজিং এনওএলএ’র অ্যান্ড্রিয়ানসিয়া মরিস বলেছেন যে, ‘আপনি যদি অত্যাবশ্যকীয় কর্মী হয়ে থাকেন এবং ঘন্টায় ৭.২৫ ডলার আয় করেন এবং ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারী উচ্ছেদের মুখে পড়ে থাকেন সেক্ষেত্রেও সিডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি উচ্ছেদের কবলে পড়তে পারেন না।
সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে আনুমানিক ৩ কোটি ৪০ লাখ লোক দারিদ্রের মধ্যে বাস করেছে, যাদের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো আমেরিকান। মহামারীর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনজন বাসিন্দার মধ্যে একজন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে সমর্থ ছিল না বলে জানিয়েছে এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন। মহামারীতে সে সংখ্যা নাটকীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৮ কোটি আমেরিকানের পক্ষে মহামারীকালে গৃহস্থালীর ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএস সেন্সাস ব্যুরো হাউজহোল্ড পালস সার্ভে। মরিস বলেছেন, মহামারী শুরু হওয়ার আগে থেকে কেউ দারিদ্রের মধ্যে ছিল কিনা সে সম্পর্কে কোন বাছবিচার না করে সরকারের উচিত ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
Posted ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh