শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি?

একেএম শামসুদ্দিন   |   মঙ্গলবার, ০৩ নভেম্বর ২০২০

ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, উত্তেজনা যেন ততই বেড়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভেতর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রচুর থাকলেও গতবারের মতো এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী উন্মাদনা তেমন দৃশ্যমান নয়। এর পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে।

এক. করোনার প্রাদুর্ভাব; নির্বাচন প্রচারণায় সাধারণ সমর্থকদের প্রকাশ্য অংশগ্রহণে করোনা কিছুটা বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবারের প্রচারণার অংশ হিসেবে ট্রাম্প বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী র‌্যালি বের করলেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন নির্বাচনী র‌্যালি বের করা থেকে বিরত থেকেছেন। এসব কারণে অন্যান্যবারের মতো এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অতিরিক্ত উত্তেজনা সেভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না।


২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। এবারের নির্বাচনেও কাকতালীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি। এ কারণে পরপর দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় জনগণের অংশগ্রহণ, উত্তেজনা ও আগ্রহের বিষয় সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ঘুরে নির্বাচনী প্রচারণা দেখার যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, এবার তেমনটি হয়নি। তবে টেলিফোনে আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে কিছুটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছি।

এ বন্ধুদের মধ্যে বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক ছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন বন্ধু নির্বাচনের প্রচারণা এবং ফলাফল নিয়ে তাদের ধারণা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিন্টনের সর্বশেষ বিতর্ক অনুষ্ঠানটি আমাদের পারিবারিক বন্ধু ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যাপালাচিয়ান কলেজ অব ফার্মেসিতে কর্মরত ডা. গাউস খান ও ডা. আফসানা ভাবির প্যানসিলভানিয়ার বাসায় বসে উপভোগ করেছিলাম।


সেখানে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি আমেরিকান বন্ধু ছিলেন। তাদের মধ্যে পেনসিলভানিয়ার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কালা মিয়া ও সুজনও ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে বাঙালি কমিউনিটিতে তখন বেশ উৎসাহ দেখেছিলাম। হিলারির জয়লাভের বিষয়ে গতবার নিউইয়র্কসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে বাঙালিদের প্রত্যাশা ছিল বেশি। প্রত্যাশার অন্যতম কারণ ছিল, হিলারি নির্বাচিত হলে বাঙালি অভিবাসী সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।

ড. ইউনূসের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে গতবার অবশ্য নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে দেখা গিয়েছিল। পপুলার ভোটে হিলারি ত্রিশ লক্ষাধিক ভোটে এগিয়ে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ৩০৬টি ভোট পেয়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।


উল্লেখ্য, প্রেসিডেট নির্বাচিত হতে হলে ন্যূনতম ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়। এ কারণেই ডা. গাউস খান, ভাবি ও অধ্যাপক সুজনের সঙ্গে এবারের নির্বাচন নিয়ে যখন কথা বলি, তখন তারা সতর্ক পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করেছেন। সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ ও স্থানীয় কিছু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ পর্যবেক্ষণ সঠিক বলেই মনে হয়েছে। তবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে কোনো পর্যবেক্ষণই সঠিক ধারণা দিতে পারে না, যা গতবারের অভিজ্ঞতা বলে দেয়।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হতে পারবেন কিনা এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিডিয়ায় ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশিত হচ্ছে। ট্রাম্পের গত চার বছরের শাসনের খতিয়ান নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। বিতর্ক জন্ম দেয়া এবং বিতকের্র মধ্যে বসবাস করাই ট্রাম্পের স্বভাব। নিকট-অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ট্রাম্পের মতো এমন বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট পায়নি। গত নির্বাচনে শহর অঞ্চলে হিলারির জনপ্রিয়তা বেশি থাকলেও শহরের বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিন্তু ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কম ছিল না।

গত নির্বাচনে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব এবং ‘ইউনাইটেড উই মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগান ট্রাম্পের পক্ষেই গিয়েছিল; কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, শুরু থেকেই অভিবাসন পলিসিসহ সর্বশেষ আফ্রিকান-আমেরিকান সাবেক বাস্কেটবল তারকা জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ‘ব্ল্যাক লাইভস মেটার’ আন্দোলন ট্রাম্প প্রশাসনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।

এ আন্দোলন মোকাবেলায় তার কিছু বর্ণবাদী বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। করোনাকালীন ৬ জুন থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী মোট ৫৫০ স্থানে প্রতিবাদ সভা ও মিছিল ট্রাম্পের অবস্থানকে নড়বড়ে করে তুলেছিল, যার জের এখনও বিরাজমান। করোনা প্রাদুর্ভাবকে অবজ্ঞা করে বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান ও একরোখা সিদ্ধান্ত তার প্রশাসনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই গেছে।

করোনা চিকিৎসা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া, নিজে মাস্ক না পরিধান করে করোনার চেয়ে নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণের চেষ্টা করা সবকিছুই তার বিরুদ্ধে গেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রমাণ করেছেন, করোনা নিয়ে তার কোনো সিদ্ধান্তই সিদ্ধ ছিল না।

অনেকে মনে করেন, করোনা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং ভুল সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ও দুই লাখেরও বেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। উল্লেখিত ইস্যু ছাড়াও ব্যক্তিগত চরিত্রের দুর্বলতা, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়াসহ এমন আরও উল্লেখ করার মতো ডজনখানেক বিতর্কিত ইস্যু এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত চার বছরের শাসনকালে ট্রাম্পের একরোখা কার্যকলাপে বিশ্ব নেতৃত্বের অবস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্র এভাবে ছিটকে যাবে, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার এমন মতপার্থক্য তৈরি হবে এবং ইউরোপের পুরনো অনেক বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের এত দূরত্ব তৈরি হবে, গত নির্বাচনের সময় রিপাবলিকান দলের নীতিনির্ধারকরাও হয়তো এমন ধারণা করতে পারেননি।

ট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরান নিউক্লিয়ার চুক্তি, ইউনেস্কো, ইউএন হিউমেন রাইট কাউন্সিল, ওপেন স্কাইস ট্রিটি, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ, ইন্টারন্যাশনাল রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স ট্রিটি এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে একতরফা বেরিয়ে যাওয়ায় বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং পূর্ব আলোচনা ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরূপ একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে ইউরোপ ছাড়াও অনেক পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসুক, বিশ্বের অধিকাংশ বন্ধুরাষ্ট্র হয়তো এমন প্রত্যাশা করে না।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ইতোমধ্যেই নিজেকে একজন সজ্জন ও নরমপন্থী ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ট্রাম্পের উদ্ভট চরিত্রের বিপরীতে বাইডেনের ভদ্রজনোচিত ইমেজ গোটা বিশ্বে তার গ্রহণযোগ্যতাকে এগিয়ে রাখবে। অভ্যন্তরীণ বর্ণবাদ ও অভিবাসন সমস্যা সমাধান, অর্থনৈতিক পুনঃজাগরণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে করোনা মহামারি মোকাবেলায় সবার সঙ্গে একযোগে কাজ করা, জলবায়ু পরিবর্তনে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ভূমিকা সম্পর্কে জো বাইডেন সবার কাছে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছেন।

নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সফরকালে তিনি এ বিষয়েই বেশি জোর দিয়েছেন। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হয়; তা হল, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েট। বাদবাকি ৬০ শতাংশ মানুষ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, যারা বহিঃবিশ্ব সম্পর্কে খুব কমই আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। কাজেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিষয় তাদের কাছে বিশেষ কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো বিষয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থের খরচ বাঁচিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেও এ শ্রেণির মানুষের ওপর তা বিশেষ প্রভাব ফেলবে না। সম্ভবত এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ট্রাম্প বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন; যা তিনি সর্বশেষ নির্বাচনী বিতর্কে উল্লেখও করেছেন। সুতরাং আন্তর্জাতিক বিষয়ে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে উল্লেখিত ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট প্রয়োগে কী সিদ্ধান্ত নেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বাইডেন ট্রাম্পের তুলনায় বেশ এগিয়ে আছেন। তারপরও জরিপ পরিচালনাকারী কোনো পক্ষই জোর দিয়ে বলতে পারছেন না, শেষ পর্যন্ত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে পারবেন কিনা। আগেই উল্লেখ করেছি, পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকলেও ইলেক্টরাল ভোটে ২৭০টি ভোট নিশ্চিত করতে না পারলে কোনো প্রার্থীই হোয়াইট হাউসের টিকিট পাবেন না।

২০১৬ সালের নির্বাচনের জরিপেও দেখা গেছে, ৫৩৮টি ইলেক্টরাল ভোটের হিসাব হিলারি ক্লিন্টনকে জয়লাভের পথ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে জরিপে মোট ইলেক্টরাল ভোটের ৮৫.৫ শতাংশ হিলারির পক্ষে যাচ্ছে বলে দেখানো হয়েছিল। এবারের জরিপেও একই রকম ভারসাম্যহীন ফলাফল দেখা যাচ্ছে। এবার ৮৭ শতাংশ বাইডেনের পক্ষে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে এসব জরিপের ফল শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের ভাগ্য ২০১৬ সালের হিলারি ক্লিন্টনের ভাগ্যের চেয়ে ভালো বলা চলে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে দুটো বিষয় হিলারির পক্ষে কাজ করেনি বলে অনুমেয়। প্রথমত জেন্ডার সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আর যাই হোক একজন স্ত্রীলোক দেশ শাসন করবে তা যেমন মেনে নেয়নি, তেমনি হোয়াইট হাউসের ফার্স্ট লেডি হিসেবে এবং ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন কিছু বিতর্কিত ভূমিকার জন্য এক শ্রেণির ডেমোক্র্যাট সমর্থক হিলারিকে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। এবার বাইডেনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই। ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন বাইডেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন কিনা তা যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২৩১ বছরের ইতিহাস বলে, ৪৫ জন প্রেসিডেন্টের মধ্যে মাত্র ১০ জন প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত হতে পারননি। এ তালিকায় প্রথম নামটি লেখান যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস। তিনি ১৭৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে চার বছর শাসন শেষে ১৮০১ সালের নির্বাচনেই থোমাস জেফারসনের কাছে পরাজয় বরণ করেন। তালিকার দ্বিতীয় নামটি হল জন অ্যাডামসেরই পুত্র জন কুইন্সি অ্যাডামস।

তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পুনঃপ্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যর্থ তালিকার প্রথম দুজনই ছিলেন একই পরিবারের সদস্য। এ তালিকার সর্বশেষ অর্থাৎ দশম ব্যক্তিটি ছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। তিনি ১৯৯২ সালে বিল ক্লিন্টনের কাছে পরাজয় বরণ করেন। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট।

আগেই উল্লেখ করেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৩১ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ১০ জন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হননি। সময়ের বিবেচনায় মাত্র ১০ জনের ব্যর্থতার সংখ্যাটা কম মনে হতে পারে। এ ব্যর্থতার সংখ্যা কম বলে ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসবেন এমন কল্পনা করারও কোনো কারণ নেই।

গত নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা, ইলিনয় ও পেনসিলভানিয়া ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এবারের নির্বাচনে গতবারের ছয়টি রাজ্যের সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা আরও দুটি অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনা ও নর্থ কেরোলিনাকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোট ২৪ অক্টোবরেই শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রথম দিনেই তার ভোট দিয়েছেন। করোনার কারণে গতবারের তুলনায় প্রকাশ্য নির্বাচনী উন্মাদনা চোখে না পড়লেও আগাম ভোট দেয়ার ব্যবস্থা থাকায় এ লেখার দিন পর্যন্ত অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আট দিন আগেই ৬ কোটিরও বেশি ভোট কাস্ট হয়ে গেছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়েও এবার বেশি ভোট পড়বে।

গত নির্বাচনে আনুমানিক ১৩ কোটি ভোট কাস্ট হলেও এবার ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বরাবরের মতো বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে থাকে। এবারের নির্বাচনে মানুষ যেন আরও বেশি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সবার প্রত্যাশা এবারের নির্বাচনে গুণগত পরিবর্তন ঘটবে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।

advertisement

Posted ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ নভেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.