বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী স্টেটের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ক্যাথি হকুল তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী কংগ্রেসম্যান লী জেলদিনের চেয়ে ১৭ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। গতকাল বাধুবার সিয়েনা কলেজের এক জরিপের ফলাফলে ফলা হয়েছে হকুল নিজের অবস্থান ভালোভাবে সংহত করেছেন। গত আগস্টে ক্যাথি হকুল প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১৪ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন, তা থেকে তার জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ৮ নভেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জরিপে বলা হয়েছে, সবগুলো জরিপেই ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ক্যাথি হকুল সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে আছে এবং সম্ভবত তা টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে ঢালাওভাবে অবাধে ব্যয় করার কারণেই সম্ভব হয়েছে। দৃশ্যত তার নির্বাচনী তহবিলে আশাতীত অর্থ জড়ো হয়েছে। অবশ্য নিউইয়র্ক স্টেটে রিপাবলিকান ভোটার সংখ্যা রিপাবলিকান ভোটার সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি এবং নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান ভোটার সংখ্যার অনুপাত ২:১ উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে স্টেট গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হওয়া দু:স্বপ্নের মতো। ২০০৬ সালের পর নিউইয়র্কের গভর্নর পদে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী জয়লাভ করেননি। সে হিসেবে স্টেটে সর্বশেষ রিপাবলিকান গভর্নর ছিলেন জর্জ ই, পাটাকি। মি: পাটাকি নিউইয়র্ক স্টেটের ৫৩তম গভর্নর হিসেবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্যাথি হকুল নিউইয়র্ক সিটির শহরতলী এলাকাগুলোতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত তার সমর্থন বাড়ছে। হকুলের জন্য আরও সুখের কথা হলো, তার পক্ষে অনেক রিপাবলিকান ভোটার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। আগস্ট মাসে ৮৪ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার লী জেলদিনকে বলেছিলেন যে তারা তাকে ভোট দেবেন, কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসেছে ৭৭ শতাংশ রিপাবলিকান তার পক্ষ সমর্থনের কথা বলেছে। জেলদিন স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যেও তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। তবে আপস্টেট নিউইয়র্কে হকুল ও জেলদিনের অবস্থা সমান সমান।
স্টেটে সবচেয়ে অধিক সংখ্যক ভোটারের বসবাস নিউইয়র্ক সিটিতে এবং জরিপ অনুযায়ী এবং এখানে রিপাবলিকান প্রার্থী ৩০ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে আছেন, যদিও তিনি নিউইয়র্ক সিটির পাশেই সাফোক কাউন্টি থেকে ২০১৫ সাল থেকে কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।
তিনি আশা করছেন যে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে তিনি নিউইয়র্ক সিটি ও আশপাশের কাউন্টিগুলোতে অধিক সমর্থন লাভ করবেন এবং হকুলের ভোট দুর্গে ভাঙন ধরাতে সক্ষম হবেন। নিউইয়র্ক সিটিতে হকুলের সমর্থনের ভিত্তি নারী, ল্যাটিনো ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা। সেপ্টেম্বরে ক্যাথি হকুলের টেলিভিশন ও ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক বিজ্ঞাপনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী লী জেলদিনকে “চরমপন্থী ও বিপজ্জনক” বলে দেখানো হচ্ছে। অ্যাডইমপ্যাক্ট নামে একটি সংস্থার মতে হকুল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন। অন্যদিকে জেলদিন তার প্রাইমারিতে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছেন, নির্বাচনী তহবিলে অর্থ জোগানোর প্রাণপণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও ক্যাথি হকুলের চেয়ে এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। তবে তিনি প্রচারণায় ব্যয় করার জন্য তিন মিলিয়ন ডলার পেয়েছেন।
বাংলাদেশিদের পাশে চান ক্যাথি : প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সমাবেশে বক্তব্যকালে নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেন, নিজের অধিকার-মর্যাদার স্বার্থে ব্যালট যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষী হামলা বন্ধের জন্যও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের বিজয়ী করা দরকার। এটাই সময়ের দাবি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উডসাইডের গুলশান টেরেস মিলনায়তনে এই সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের এশিয়ান বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান।
আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই স্টেট গভর্নর পুনরায় স্বপদে লড়বেন। নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ক্যাথি হোকুল পুনরায় বিজয়ের অভিপ্রায়ে চষে বেড়াচ্ছেন। গড়ছেন নির্বাচনী প্রচার তহবিল। বাংলাদেশিদের এই সমাবেশেও ৫০ হাজার ডলারের মতো সংগৃহীত হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেন, অভিবাসীরা কঠোর পরিশ্রমী এবং নিউইয়র্কের উন্নয়নে অশেষ অবদান রাখছেন। বাংলাদেশিরাও ইতোমধ্যে সমগ্র কমিউনিটিতে নিজের অবস্থানকে উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা মেধাবী এবং নিষ্ঠাবান।
গভর্নর উল্লেখ করেন, করোনাকালীন মহাসংকটে আমরা যেভাবে পরস্পরের সহযোগী ছিলাম, একই চেতনায় সামনের দিনেও সম্প্রীতির বন্ধনকে সুসংহত রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে, সামাজিক নিরাপত্তা হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত। নিউইয়র্কে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। আমি পুনরায় বিজয়ী হলে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
‘বাংলাদেশিজ ফর ক্যাথি হোকুল’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ, ইমিগ্র্যান্ট অ্যাল্ডার হোমকেয়ারের সিইও গিয়াস আহমেদ, ক্যাসেল হিল মেডিকেল অব নিউইয়র্কের সিইও রাহাত মুক্তাদির, চিকিৎসক চৌধুরী এস হাসান, গোল্ডেন অ্যাজ হোমকেয়ারের সিইও শাহনেওয়াজ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মইনুল ইসলাম, প্রিমিয়াম রেস্টুরেন্টের সিইও বাবু খান, শাহ গ্রুপের কো-ফাউন্ডার ফৌজিয়া জে চৌধুরী প্রমুখ।
Posted ১:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh