বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটির বহুল আলোচিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৮সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছে ‘রব-রুহুল’ প্যানেলের সকল প্রার্থী। নিউইয়র্ক সিটির ৫টি কেন্দ্রেই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃংখলভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে রব-রুহুল প্যানেলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলো ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল। দিনভর ভোট গ্রহণ শেষে উডসাইডের গুলশান টেরেসের মূল কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সকল প্রার্থী, প্যানেল পরিচালনা কমিটি, সোসাইটির টাস্টি বোর্ড, সকল মিডিয়া কর্মী ও উভয় প্যানেলের বিপুল সংখ্যক সমর্থকের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদ জনি। মধ্যরাতে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার সময় তার পাশে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং তারাও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এসএম জামাল ইউ. আহমেদ (জনি), নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, কাউসারুজ্জামান (কয়েস), মোহাম্মদ আর সরকার ও খোকন মোশারফ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সফল হওয়ায়। জামাল ইউ আহমেদ বলেন, অবশেষে আমরা নির্বাচন করতে পারছি এটাই বড় কথা। আমরা অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে নির্বাচন কমিশন শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে সোসাইটির গঠনতন্ত্র ও বাইলজ অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করেছে। সবাই মিলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছি ।
ফলাফল ঘোষণার পূর্বেই সন্ধ্যা থেকে সর্বত্র চাউর হয়ে যায় রব-রুহুল প্যানেলের জয়লাভের বিষয়টি। তারপরও বিপুল সংখ্যক উৎসাহী ভোটারের উপস্থিতি গোটা হলকে করে তুলে উৎসব মুখর। চলে মিষ্টান্ন বিতরণ। মূুর্হুমূহ উচ্ছাস ধ্বনির মাঝে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি। এবারের নির্বাচনে জয়ী সভাপতি আব্দুর রব মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকীর অবস্থান হবে ২৩তম।
‘রব-রুহুল’ প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন: সভাপতি- আবদুর রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক- রুহুল আমিন সিদ্দিকী (পুন:নির্বাচিত), সিনিয়র সহসভাপতি- মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহসভাপতি- ফারুক চৌধুরী, সহ সাধারণ সম্পাদক- আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ- মো. নওশেদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক- আবুল কালাম ভূঁইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- ডা. শাহনাজ লিপি, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ (পুন:নির্বাচিত), সমাজকল্যাণ সম্পাদক- মো. টিপু খান, সাহিত্য সম্পাদক- ফয়সাল আহমদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মাইনুল উদ্দিন মাহবুব, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক-প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং কার্যকরী সদস্য মো. সাদী মিন্টু (পুন:নির্বাচিত), ফারহানা চৌধুরী (পুন:নির্বাচিত), শাহ মিজানুর রহমান, সিরাজদৌল্লাহ হক বাশার, মো. আখতার বাবুল ও সুশান্ত দত্ত। এবারের নির্বাচনে মোট ২৭ হাজার ৫১০ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৫ হাজার ৯০২। মোট ৫টি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভোট পড়েছে ব্রুকলীন কেন্দ্রে।
নির্বাচনে কে কত ভোট পেলেন: বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি পদে আবদুর রব মিয়ার প্রাপ্ত ভোট ৩,১৬০। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী আশরাফ হোসেন পেয়েছেন ২,৫৪০। সভাপতি পদের অপর প্রার্থী জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ৬৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী রুহুল আমিন সিদ্দিকী (পুনঃনির্বাচিত) পেয়েছেন ৩,১৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ২,৪৭৯ ভোট। এই পদেও অপর প্রার্থী আব্দুল মোমেন সোহেল পেয়েছেন ৬৭ ভোট। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী মহিউদ্দিন দেওয়ান পেয়েছেন ৩,২১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর রহিম হাওলাদার পেয়েছেন ২,৪২০ ভোট। সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী ফারুক ইউ চৌধুরী পেয়েছেন ৩,০৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম সগির পেয়েছেন ২,৪৪০ ভোট। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী পেয়েছেন ২,৮৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়া মোহাম্মদ দুলাল পেয়েছেন ২,৬৫০ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে বিজয়ী নওশেদ হোসেন পেয়েছেন ২,৯৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ খান ডিউক পেয়েছেন ২,৫৩৩ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজীয় আবুল কালাম ভূঁইয়া পেয়েছেন ২,৯৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান হাবীব পেয়েছেন ২,৫৯৪ ভোট। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে বিজয়ী ডা. শাহনাজ লিপি পেয়েছেন ২,৯৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিকা রায় পেয়েছেন ২,৫৬০ ভোট।জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে বিজয়ী রিজু মোহাম্মদ (পুনঃনির্বাচিত) সর্বোচ্চ পেয়েছেন ৩,২৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হায়দার আলী পেয়েছেন ২,২৩৯ ভোট। সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে বিজয়ী খান মোহাম্মদ টিপু পেয়েছেন ২৯৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাশেম চৌধুরী পেয়েছেন ২,৫৩২ ভোট। সাহিত্য সম্পাদক পদে বিজীয় ফয়সাল আহমদ পেয়েছেন ৩,০২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসান জিলানী পেয়েছেন ২,৪৯৩ ভোট। ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদে বিজীয় মাইনুল উদ্দিন মাহবুব পেয়েছেন ২,৯৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রশিদ রানা পেয়েছেন ২,৫৫১ ভোট। স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক পদে বিজয়ী প্রদীপ ভট্টাচার্য পেয়েছেন ২,৭৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সামাদ মিয়া (জাকির) পেয়েছেন ২.৬৭২ ভোট। সোসাইটির কার্যকরী সদস্য পদে ‘রব-রহুল’ প্যানেল থেকে বিজয়ী সাদী মিন্টু (পুনঃনির্বাচিত) পেয়েছেন ২,৯১৩ ভোট, ফারহানা চৌধুরী (পুনঃনির্বাচিত) পেয়েছেন ৩,২১০ ভোট, শাহ মিজানুর রহমান পেয়েছেন ২,৯০৯ ভোট, সিরাজদৌল্লাহ হক বাশার পেয়েছেন ২,৯৯৩, মোহাম্মদ এ আখতার পেয়েছেন ৩,১৬৭ ভোট, সুশান্ত দত্ত পেয়েছেন ২,৯৪৯ ভোট। রব-রুহুল প্যানেল থেকে প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত রিজু মোহাম্মদ সর্বাধিক ৩২৯১ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে কার্যকরী সদস্য পদে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাইদুর খান ডিউক পেয়েছেন ২,২৫১ ভোট, মাহমুদ আলম পেয়েছেন ২,৩৪০ ভোট, মোহাম্মদ এ সিদ্দিকী পেয়েছেন ২,৬০৬ ভোট ও আহসান উল্লাহ মামুন পেয়েছেন ২,৫০৩ ভোট।
বার বার মামলার জালে আটকে যাওয়া বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর,রোববার। ২০১৮ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচনে ছিল রেকর্ড সংখ্যক ২৭ হাজার ৫১০ জন ভোটার। নির্বাচনে রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে পূর্ণ প্যানেল জয়ী হয়েছে রব-রুহুল প্যানেল। নির্বাচনে সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৯টি পদে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তন্মধ্যে রব-রুহুল প্যানেলের ১৯জন, নয়ন-আলী প্যানেলের ১৭জন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর এবং ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন দুই দফা আটকে যায় মামলার ফাঁদে। বিরতিহীনভাবে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়।
ভোটাররা যাতে তাদের কাছাকাছি স্থানে ভোট দিতে পারেন সেজন্য সিটির বিভিন্ন স্থানে ৫টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে নির্বাচন কমিশন। কুইন্সের উডসাইডে অবস্থিত গুলশান ট্যারেস, জ্যামাইকা কেন্দ্র-ইকরা পার্টি সেন্টার, ব্রুকলিনের পিএস-১৭৯, ওজোন পাকের্র দেশী সেন্টার, ও ব্রঙ্কস কেন্দ্র ।সোসাইটির নির্বাচনে এবারই প্রথম ব্যবহার করা হয় ইভিএম মেশিন। পাশাপাশি শৃংখলার সাথে নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতায় ছিল বিপুলসংখ্যক জন নিরাপত্তা কর্মী। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের দিন প্রার্থী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক সিটির ৫টি ভোট কেন্দ্র চষে বেড়িয়েছেন। পক্ষান্তরে সাধারণ ভোটারদের মাঝে তেমন কোন উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটার বানানোর ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সাথে ভোটারদের সরাসরি কোন পরিচয় না থাকায় বা যোগাযোগ না হওয়ায় এক ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি হয় বিগত চার বছরে। ফলে নির্বাচনের দিন ভোট প্রদানের হার আশাপ্রদ হয়নি। ভোট প্রদানের হার ছিল কম। সেক্ষেত্রে প্যানেলভিত্তিক ভোটের হিসেবে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করছিল যে প্যানেল যত বেশি ভোটার কেন্দ্রে হাজির করতে পারবে তার ওপর। এদিক থেকে রব-রুহুল প্যানেল নির্বাচনী কৌশলে ভালো পারদর্শীতা প্রদর্শন করে জয়ী হয়েছে। অতীতের মতো সোসাটির এবারের নির্বাচনেও আঞ্চলিকতা এবং দেশজ রাজনীতির কম বেশি আছড় পড়ে।
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনী ব্যয় পূর্বাপর সব মিলিয়ে মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে অভিজ্ঞ মহল। শুধুমাত্র ভোটার বানানো এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যয়ই অর্ধ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭-১৮ সেশনের নির্বাচনে একবার মাত্র সদস্য সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৫১৫ জন। ১৯৭৫এর ২৩ নভেম্বর ম্যানহাটানের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আরল হলে এক সভার মধ্য দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ সোসাইটি। প্রথম কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত হন -ডঃ আব্দুল হক। বাংলাদেশ সোসাইটির প্রথম নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি গঠিত হয় ১৯৭৬ সালের আগষ্টে। ডঃ মোঃ ইউসুফ এই কমিটির সভাপতি এবং প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার আসাদুল হক সাধারণ সম্পাদক নিবাচিত হন। এরপর দীর্ঘ চার দশকে ২০টি কার্যনির্বাহী কমিটি বাংলাদেশ সোসাইটিকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
সভাপতি- কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন), সিনিয়র সহ সভাপতি-আব্দুর রহীম হাওলাদার, সহ সভাপতি- মোহাম্মদ আর করীম (সগীর), সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ দুলাল মিয়া, কোষাধ্যক্ষ-মোহাম্মদ জেড খান (ডিউক), সাংগঠনিক সম্পাদক- আহসান হাবিব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মনিকা রায়, জন সংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- শেখ হায়দার আলী, সমাজকল্যান সম্পাদক- আবুল কাশেম চৌধুরী, সাহিত্য সম্পাদক- মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মোহাম্মদ এইচ রশীদ (রানা), স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- মোহাম্মদ এস মিয়া (সামাদ) এবং কার্যকরী সদস্য- জেড আর চৌধুরী, মোহাম্মদ এম আলম, মোহাম্মদ এ সিদ্দিক, সাঈদুর আর খান (ডিউক), আহসান উল্লাহ, (মামুন) ও আলী আকবর।
Posted ৩:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh