বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৪ নভেম্বর রোববার। এই নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও সমর্থকদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন রেকর্ড সংখ্যক ২৭ হাজার ৫১০ জন ভোটার। এবারের নির্বাচনে রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেলের মাঝে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে কেউই পূর্ণ প্যানেল জয়ী হবেন না বলে ধারণা অভিজ্ঞমহলের। আগামী ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৯টি পদে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তন্মধ্যে রব-রুহুল প্যানেলের ১৯জন, নয়ন-আলী প্যানেলের ১৭জন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন আটকে যায় মামলার ফাঁদে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত পুন:তফশিল অনুযায়ী করোনা মহামারিতে রব-রুহুল পরিষদের প্রয়াত দু’জন প্রার্থীর স্থলে পুন:মনোনয়ন পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বি রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেলের সকল প্রার্থীর বৈধতা। রব-রুহুল প্যানেলের নূতন দুই প্রার্থী হলেন, সহ সভাপতি পদে ফারুক চৌধুরী এবং সহ সাধারণ সম্পাদক পদে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বি রব-রুহুল ও নয়ন-আলী প্যানেলের প্রচার প্রচারনা এখন তুঙ্গে প্রার্থীদের মধ্যে ‘রব-রুহুল’ ও ‘নয়ন-আলী’ দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুল মোমেন (সোহেল) ভোটাররা যাতে তাদের কাছাকাছি স্থানে ভোট দিতে পারেন সেজন্য সিটির বিভিন্ন স্থানে ৫টি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এই ৫টি কেন্দ্র হচ্ছে: কুইন্সের উডসাইডে অবস্থিত গুলশান ট্যারেস বা সাবেক ঢাকা ক্লাব(৫৯-১৫, ৩৭ উডসাইড, এনওয়াই-১১৩৭৭), জ্যামাইকা কেন্দ্র- ইকরা পার্টি সেন্টার (৮৯-১৬, ১৭৫ এভিনিউ), ব্রুকলিনের পিএস-১৭৯(২০২ এভিনিউ সি, এনওয়াই-১১২১৮), ওজোন পার্ক কেন্দ্র পিএস-২১৪(২৯৪৪ পিটকিন এভিনিউ, ব্রুকলীন, এনওয়াই-১১২১৮) এবং ব্রঙ্কস কেন্দ্র পোর্ট রোড, ব্রঙ্কস, এনওয়াই-১০৪৬২।
সোসাইটির নির্বাচনে এবারই প্রথম ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে ভোট গ্রহণের জন্য। এতো বিপুল সংখ্যক ভোট ব্যালট পেপারে গ্রহণ করা সম্ভব না বলেই নির্বাচন কমিশন সোসাইটির কর্মকর্তা এবং প্রার্থীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কমিশনের পাশাপাশি শৃংখলার সাথে নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতায় থাকবে বিপুলসংখ্যক জন নিরাপত্তা কর্মী।
নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এসএম জামাল ইউ. আহমেদ (জনি), নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, কাউসারুজ্জামান (কয়েস), মোহাম্মদ আর সরকার ও খোকন মোশারফ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটারের কথা বিবেচনায় রেখে কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যথেষ্ট সংখ্যক ভোটিং মেশিন, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, মেশিন অপারেটর নিয়োগ করেছে। কোন ভোটার তার আইডি ছাড়া ভোট দিতে পারবেন না। ৫টি কেন্দ্রেই আইডি সনাক্তকরণ মেশিন ও অদৃশ্য কালির ব্যবস্থা থাকবে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক ভোটারকে জিপকোড অনুযায়ী তার জন্য নির্ধারিত ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিনি মিডিয়াসহ সকল প্রবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে যে, ভোটাররা যেসব আইডি দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে ড্রাইভার্স লাইসেন্স, ষ্টেট আইডি, গ্রীন কার্ড, ওয়ার্ক পারমিট, পাসপোর্ট, লানার্স পারমিট ও আইডিএনওয়াইসি। ভোট কেন্দ্রের ২০০ ফুটের মধ্যে প্রচারণা, পোষ্টার লাগানো, ব্যানার টানানো বা লিফলেট বিতরণ সম্পঝর্ণ নিষিদ্ধ। নির্বাচনের দিন কোন প্রার্থী অথবা কোন ব্যক্তির বেআইনী বা অসদাচরণের ঘটনায় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবিলম্বে অবহিত করা হবে। আজীবন সদস্যরা তাদের আজীবন সদস্য কার্ড প্রদর্শন করে নিজ নিজ কেন্দ্রে সরাসরি ভোট দিতে পারবেন। এক কেন্দ্রের ভোটার আরেক কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন না। তবে শুধুমাত্র প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্টরা তারা যে কেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন সেখানে ভোট দিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রার্থী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলো চষে বেড়াচ্ছেন তারা। পক্ষান্তরে সাধারণ ভোটারদের মাঝে তেমন কোন উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভোটার বানানোর ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সাথে নতুন ভোটারদের সরাসরি কোন পরিচয় না থাকায় বা যোগাযোগ না হওয়ায় এক ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নির্বাচনের দিন ভোট প্রদানের হার ৬০ শতাংশের বেশি হবে না বলে ধারণা করছেন অভিজ্ঞমহল। ভোট প্রদানের হার যত কম হবে নির্বাচন ততটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্যানেলভিত্তিক ভোটের হিসেবে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করবে যে প্যানেল যত বেশি ভোটার কেন্দ্রে হাজির করতে পারবে তার ওপর। রব-রুহুল এবং নয়ন-আলী উভয় প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী বাংলাদেশ সোসাইটির মতো বড় সংগঠনে নতুন হলেও নির্বাচনী কৌশলে তারা ভালো পারদর্শীতাই প্রদর্শন করে চলেছেন। তাদের রানিংমেট দু’জনও কর্মতৎপর।
অতীতের মতো সোসাটির এবারের নির্বাচনেও আঞ্চলিকতা এবং দেশজ রাজনীতির কম বেশি আছড় পড়বে। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ভোট কাটবেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনী ব্যয় পূর্বাপর সব মিলিয়ে মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে অভিজ্ঞ মহল। শুধুমাত্র ভোটার বানানো এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যয়ই অর্ধ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭-১৮ সেশনের নির্বাচনে একবার মাত্র সদস্য সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৫১৫ জন। ১৯৭৫এর ২৩ নভেম্বর ম্যানহাটানের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আরল হলে এক সভার মধ্য দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ সোসাইটি। প্রথম কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত হন -ডঃ আব্দুল হক। বাংলাদেশ সোসাইটির প্রথম নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি গঠিত হয় ১৯৭৬ সালের আগষ্টে। ডঃ মোঃ ইউসুফ এই কমিটির সভাপতি এবং প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার আসাদুল হক সাধারণ সম্পাদক নিবাচিত হন। এরপর দীর্ঘ চার দশকে ২০টি কার্যনির্বাহী কমিটি বাংলাদেশ সোসাইটিকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তন্মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ ক’জন কর্মকর্তা একাধিকবার নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে জয়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান হবে ২৩তম।
‘রব-রুহুল’ প্যানেলের প্রার্থীরা হলে: ‘রব-রুহুল’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বৃহত্তর নোয়াখালী এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সভাপতি (পদত্যাগী) আব্দুর রব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সভাপতি- আব্দুর রব মিয়া, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দীন দেওয়ান, সহ সভাপতি- ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক- রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সহ সাধারণ সম্পাদক- আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ- নওশেদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক- আবুল কালাম ভুঁইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- ডা. শাহনাজ লিপি, জন সংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- রিজু মোহাম্মদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক- মোহাম্মদ টিপু খান, সাহিত্য সম্পাদক- ফয়সল আহমদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মাইনুল উদ্দিন মাহবুব, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- প্রদীপ ভট্টাচার্য, কার্যকরী সদস্য- মোঃ সাদী মিন্টু, ফারহানা চৌধুরী, শাহ মিজান, আবুল বাশার, আক্তার হোসেন বাবুল ও সুশান্ত দত্ত।
‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন: ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে চট্টগ্রামের মিরেশ্বরাই সমিতি ইউএসএ’র সভাপতি কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সোসাইটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সভাপতি- কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন), সিনিয়র সহ সভাপতি- আব্দুর রহীম হাওলাদার, সহ সভাপতি- মোহাম্মদ আর করীম (সগীর), সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ দুলাল মিয়া, কোষাধ্যক্ষ- মোহাম্মদ জেড খান (ডিউক), সাংগঠনিক সম্পাদক- আহসান হাবিব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মনিকা রায়, জন সংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- শেখ হায়দার আলী, সমাজকল্যান সম্পাদক- আবুল কাশেম চৌধুরী, সাহিত্য সম্পাদক- মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মোহাম্মদ এইচ রশীদ (রানা), স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- মোহাম্মদ এস মিয়া (সামাদ) এবং কার্যকরী সদস্য- জেড আর চৌধুরী, মোহাম্মদ এম আলম, মোহাম্মদ এ সিদ্দিক, সাঈদুর আর খান (ডিউক), আহসান উল্লাহ, (মামুন) ও আলী আকবর।
Posted ১২:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh