মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গ ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে প্রচারণায় অবতীর্ণ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, একই সাথে ব্লুমবার্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটেলগ্রাউন্ড ফ্লোরিডার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ঘোষণা করেছেন বাইডেনের প্রচার কাজে ব্যয়ের জন্য। এই অর্থের পুরোটাই ব্যয় করা হবে ফ্লোরিডায়। কারণ ফ্লোরিডা এমন এক ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেট যেখানে জয়ী না হলে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে হোয়াইট হাউজের লড়াই থেকে ছিটকে পড়তে হয়। ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা ফ্লোরিডায় জয়লাভ না করেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন।
এনবিসি নিউজ/মারিষ্ট কলেজের গত সপ্তাহের জরিপে দেখা যাচ্ছে ফ্লোরিডায় এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা সমান সমান। জরিপে ৪৮ শতাংশ রেজিষ্টার্ড ভোটার বলেছেন যে তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন এবং সমান সংখ্যক রেজিষ্টার্ড ডেমোক্রেট ভোটার বলেছেন তারা বাইডেনকে ভোট দেবেন। এছাড়া ফাইভ থার্টিএইটের সর্বশেষ জরিপে দেখা যায় ৪৮ শতাংশ রেজিষ্টার্ড ভোটার বলেছেন তারা জো বাইডেনকে এবং ৪৬ শতাংশ রেজিষ্টার্ড ভোটার ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন।
মাইকেল ব্লুমবার্গ নিজেও ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে একজন প্রার্থী ছিলেন। সুবিধা করতে না পারায় প্রচারণার মাঝপথে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জো বাইডেনকে সমর্থন করেন। নিজের প্রাইমারীতে তিনি কোন ফান্ড রেইজ না করে নিজস্ব তহবিল থেকে এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে তহবিল সংগ্রহ ছাড়া প্রাইমারীতে এক বিলিযন ডলার ব্যয় করার ঘটনা এটিই প্রথম। শুধু তাই নয়, কোন প্রার্থী যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলেও তার প্রচারণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ব্যয় এখ নপর্যন্ত কারো ক্ষেত্রে এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়নি। উল্লেখ্য, ব্লুমবার্গের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
এাইকেল ব্লুমবার্গ জো বাইডেনের প্রচারণার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিচ্ছে এ সংক্রান্ত খবর প্রথম প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোষ্ট। এরপর নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন। সিএনএন এর কাছে একথা স্বীকার করেন ব্লুমবার্গের প্রধান উপদেষ্টা কেভিন শিকি। তিনি বলেন, ট্রাম্পকে পরাস্ত করতে মাইকেল ব্লুমবার্গ অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি যেকোনভাবে ট্রাম্পকে পরাস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
ট্রাম্পের দুর্গে ফাটল ধরাতে বিশ্বের সেরা ধনীদের অন্যতম মাইকেল ব্লুমবার্গ ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নিয়েছেন ফ্লোরিডায় বাইডেনের পক্ষে জনমত বৃদ্ধির জন্যে। উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচার-তহবিলের ক্ষেত্রে এমনিতেই ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। এই অবস্থায় নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র ব্লুমবার্গের এই ঘোষণায় ডেমক্র্যাট শিবিরের উৎসাহ বাড়িয়েছে। একইদিন ট্রাম্পের অন্ধ-সমর্থক হিসেবে পরিচিত ‘ফক্স নিউজ’র জরিপে রবিবার প্রকাশ পেয়েছে যে, রিপাবলিকান অধ্যুষিত আরিজোনা স্টেটে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। এদিনের অপর এক জরিপে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো বলেও অধিকাংশ উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব পুনরুদ্ধারে ট্রাম্পের চেয়ে শতগুণ ভালো বাইডেন-এমন অভিমত পোষণ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনার কারণে প্রচার-সমাবেশ সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করার পরামর্শ স্বত্বেও রোববার ট্রাম্প সমাবেশ করলেন নেভাদায়। এর আগে করোনার তাণ্ডবে সারা আমেরিকা যখন ভীতিকর অবস্থায় পড়েছিল, সে সময়েও (২০ জুন) ওকলাহোমার টালসা সিটিতে ট্রাম্প সমাবেশ করেছিলেন স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করে।
অপরদিকে, জো বাইডেন রবিবার নিজ স্টেট দেলওয়ারের উইলমিংটনের একটি চার্চে প্রার্থনা সমাবেশে অংশ নেন মাস্ক পরে। চার্চে উপস্থিত সকলেই মাস্ক পরেন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। তবে এখানে কোন বক্তব্য-পর্ব ছিল না। অপরদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এদিন সকালে লাসভেগাসে ‘ল্যাটিনোজ ফর ট্রাম্প’র উদ্যোগে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। এরপর দুপুর ও বিকেলে নেভাদায় নির্বাচনী তহবিল গঠনের একটি অনুষ্ঠান ছাড়াও নেভাদা স্টেটের হেন্ডারসনে একটি সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডা, আরিজোনা, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারলিনা, জর্জিয়া, মিনেসোটা-এই ৮ স্টেটের ফলাফলের ওপর জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। এগুলোর ভোট নিজের পক্ষে টানতে উভয় প্রার্থী সোচ্চার রয়েছেন। এরই একটি হচ্ছে ফ্লোরিডা। নিউইয়র্কের স্থায়ী বাসিন্দার পরিচয় ত্যাগ করে বছর দুয়েক আগে ট্রাম্প পাড়ি জমিয়েছেন ফ্লোরিডায়। সেখানকার ভোটারদের পক্ষে টানতে সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছেন ট্রাম্প। তবে সেরা ধনীর অন্যতম ব্লুমবার্গ ১০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ফ্লোরিডায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামায় ট্রাম্প শিবিরে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এদিকে, নেভাদায় নির্বাচনী সমাবেশে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং সকলকে মাস্ক পরার কোন নির্দেশ ছিল না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন কমিটির মুখপাত্র টিম মারটাগ। তিনি উল্লেখ করেন যে, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আমাদের বিশেষ কোন দিক-নির্দেশনা নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ, সর্বশেষ টালসার সমাবেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অনেকে করোনায় আক্রান্ত হন এবং রিপাবলিকান পার্টির একজনেরও মৃত্যুও হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ৯০ হাজারের অধিক মানুষের প্রাণ ঝরেছে।
নির্বাচনে অনিয়ম রোধ করতে শতাধিক আইনজীবীর টিম নিয়োগ বাইডেনের
ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন তাঁর ক্যাম্পেইন টিমে কাজ করার জন্য একশ আইনজীবীর একটি টিম নিয়োগ দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল সে ধরনের অভ্যন্তরীণ বা বাইরের যে কোন হস্তক্ষেপ ঠেকানো লক্ষ্যে এই আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে যদি বড় ধরনের অনিয়ম, জালিয়াতি, বল প্রয়োগ বা হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে বা ঘটতে পারে বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে জো বাইডেনের লিগ্যাল টিম অনিয়মের কারণ চিহ্নিত করে সাথে সাথে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। শুধু অনিয়ম নয়, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পরও যদি মনে হয় যে কোথাও কোন অনিয়ম ঘটেছে তাহলে তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করবেন তারা।
নিউইয়র্ক টাইমসের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে যে নির্বূাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩ নভেম্বর। কিন্তু এরই মাঝে একাধিক স্টেটে নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন টিম ৫ স্টেটের ওপর মামলা দায়ের করেছেন ডাকযোগে ভোটের সময়সীমা বৃদ্ধি করার কারণে। ট্রাম্প একাধিকতার দাবী করেছেন যে ডেমোক্রেটরা তার নির্বাচনকে ম্যানিপুলেট করতে চায়, যা নির্বাচনে আমার পরাজয়ের একমাত্র কারণ হতে পারে। বাইডেন তার আইনি টিমকে প্রস্তুত করেছেন যে কোন ইস্যুর জবাব দেয়ার জন্য। বিশেষত এই একশ আইনজীবীর টিমের মাঝে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডানা রিমাস। যিনি তিনি বাইডেনের ক্যাম্পেইন টিমে জেনারেল কাউন্সিলর ছিলেন।
Posted ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh