বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
করোনা মহামারীতে কর্মহীনতার কারণে যারা বাড়ি ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারেননি, তাদের বকেয়া ভাড়া সহায়তার জন্য নিউইয়র্ক স্টেট “জরুরী ভাড়া সহায়তা কর্মসূচি” (ইমার্জেন্সি রেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম-এআরএপি) ঘোষণা করেছে। স্টিট গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো গত বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন। এ কর্মসূচির আওতায় নিউইয়র্ক স্টেটের দুই লাখ ভাড়াটিয়া ও বাড়ি মালিককে সহায়তা করার জন্য ২.৪ বিলিয়ন বরাদ্দ করেছে। গত ১ জুন মঙ্গলবার থেকে বাড়ি ভাড়া সহায়তার জন্য ভাড়াটিয়াদের আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। স্টেট অফিস অফ টেম্পোরারি এন্ড ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাসিষ্ট্যান্স (ওটিডিএ) এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই সহায়তা কর্মসূচির অধীনে ভাড়াটিয়ারা করোনা মহামারীকালীন ২০২০ সালের ১৩ মার্চের পর থেকে থেকে ১২ মাসের বাড়ি ভাড়া এবং প্রয়োজনে আরও তিন মাস পর্যন্ত ভাড়ার অর্থ পাবেন। এছাড়া ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়ারা ১২ মাসের ইউটিলিটি বিলও পাবেন। ভাড়াটিয়া যথাযথভাবে আবেদন ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও দলিলপত্র জমা দেয়ার পর আবেদন অনুমোদন লাভ করলে অনুমোদিত অর্থ সরাসরি বাড়ি মালিকের কাছে যাবে। ইউটিলিটি বিলের অর্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে যাবে। আবেদন ফরম পাওয়া যাবে www.otda.ny.gov/erap ওয়েবসাইটে।
আবেদন করার জন্য স্টেট অফিস অফ টেম্পোরারি এন্ড ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাসিষ্ট্যান্স (ওটিডিএ) সূত্র জানিয়েছে যে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার যদিও স্টেটের ডিভিশন অফ হোমস এন্ড কমিউনিটি রিনিউয়াল সীমিত আকারে ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়া সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, তা অপর্যাপ্ত ছিল। কিন্তু ওটিডিএ পরিচালিত এবারের কর্মসূচির আওতা অনেক বেশি এবং এর ফলে ভাড়াটিয়া ও বাড়ি মালিক উভয়েই উপকৃত হবেন। গত এপ্রিল মাসে স্টেটের আইন প্রনেতারা বাজেট বরাদ্দে বাড়ি ভাড়া সহায়তার বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করেছেন এবং গভর্নর ক্যুমো তা অনুমোদন করার পর এখন কার্যকর হতে যাচ্ছে। যদি কোন বাড়ি মালিক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বা প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত বকেয়া ভাড়ার অর্থ ১৮০ দিন পর্যন্ত ধরে রাখবে নিউইয়র্ক স্টেট।
যেসব ভাড়াটিয়া বকেয়া ভাড়া পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, তারা নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা হলে চার সদস্যের পরিবারে তাদের বার্ষিক পারিবারিক আয় ৯৫,৪৫০ ডলারের নিচে হতে হবে। তাছাড়া তাদেরকে অবশ্যই দেখাতে হবে যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে তারা তাদের চাকুরি হারিয়েছেন অথবা মহামারী চলাকালে বা মহামারীর কারণে তারা আর্থিক সংকটের সম্মুখীণ হয়েছেন।
আর্থিক সহায়তা লাভের জন্য ভাড়াটিয়া অথবা ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কিভাবে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে বা সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ততা প্রমাণ করতে আবেদনের সঙ্গে কি কি দলিলপত্র প্রয়োজন পড়বে স্টেট অফিস অফ টেম্পোরারি এন্ড ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাসিষ্ট্যান্স (ওটিডিএ) এর ওয়েসাইটে সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওটিডিএ’র ওয়েবসাইটে জানান হয়েছে যেসব পরিবার নিউইয়র্ক সিটিতে ‘এরিয়া মেইডেন ইনকাম’ (এএমআই) এর আয়সীমার ৫০ শতাংশের কম বার্ষিক আয় করেন তাদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন ভ্যাটারেন, করোনাকালে কমপক্ষে ৯০ দিন কর্মহীন ছিলেন, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার, বা মানব পাচার এর হাত থেকে রক্ষাপ্রাপ্তরা। এছাড়া ওটিডিএ নিউইয়র্ক সিটির স্বল্প আয়সম্পন্ন ব্যক্তি, যারা ভ্রাম্যমান হোমে বাস করেন, যেখানে ২১ ইউনিটের কম আবাস রয়েছে এমন স্থানে বসবাসকারীরাও অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়বেন। এই কর্মসূচির প্রথম ৩০দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ওটিডিএ ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে আবেদনপত্রগুলো বিবেচনা করবে।
বাড়িভাড়া সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পরিচয় ও কোভিড ১৯ এর কারণে তারা কর্মহীনতাসহ যে ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তার প্রমাণ সংক্রান্ত দলিলপত্র জমা দিতে হবে বলে ওটিডিএ’র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। যেসব দলিল প্রয়োজন হতে পারে সেগুলো হচ্ছে;
বাড়ির সকল সদস্যের ব্যক্তিগত পরিচয়, যার মধ্যে থাকতে হবে সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র অর্থ্যাৎ নিউইয়র্ক স্টেট ড্রাইভার্স লাইসেন্স বা নন-ড্রাইভার্স আইডি’র কপি, পাসপোর্ট বা ইবিটি/বেনিফিট কার্ড বাব বার্থ সার্টিফিকেটের কপি, ব্যাপ্টিজম সার্টিফিকেট বা স্কুলের রেজিষ্ট্রেশন।
পরিবারের যেসব সদস্যের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর আছে তাদের সকলের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর। যাদের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর নেই, অর্থ্যাৎ আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টরাও এই সহায়তা পেতে পারেন। এই সহায়তা পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কারও বৈধ স্ট্যাটাস থাকার আশ্যকতা নেই।
বর্তমান আবাসের প্রমাণ। ভাড়াটিয়া তার বাড়ি ভাড়া নেয়ার স্বাক্ষরিত লিজ ডকুমেন্ট- তা যদি মেয়াদোত্তীর্ণ হয় তাতেও সমস্যা নেই বা ভাড়ার রশিদ এবং ভাড়ার পরিমাণ জানানোর জন্য রশিদ বা ক্যানসেলড চেকের কপি। যদি কোনকিছু না থাকে তাহলে বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকের সত্যায়িত কপি দিলেও চলবে। ইমার্জেন্সি রেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম-এআরএপি ইউটিলিটি বিল, স্কুল রেকর্ড, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আবেদনকারীর নামসহ ডাকযোগে প্রাপ্ত চিঠি, বাড়ির ঠিকানাযুক্ত ইন্সুরেন্স বিল অথবা ড্রাইভার্স লাইসেন্স।
ভাড়াটিয়ার আয়ের প্রমাণ হিসেবে ২০২০ সালের ডব্লিউ -২ বা ১০৪০ বা ১০৪০এইজেড অথবা ১০৯৯ বা অন্য কোন প্রমাণ দিতে হবে। এছাড়া দিতে হবে গ্যাস বা বিদ্যুৎ বিলের কপি।
বাড়িমালিককে যেসব দলিল দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে : ডব্লিউÑ৯ ট্যাক্স রিটার্ন ফরম, কার্যকর লিজ এগ্রিমেন্ট। লিজ এগ্রিমেন্ট না থাকলে ক্যানসেলড চেক বা একাউন্টে অর্থ জমা বা ট্রান্সফারের প্রমাণ। ভাড়া বাকি থাকার প্রমাণ। সরাসিরি ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
বিস্তারিত জানতে ও আবেদন ফরম পেতে ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিকরা ভিজিট করতে পারেন ওটিডিএ’র www.otda.ny.gov/erap ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। যারা ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে তারা কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠগুলোর সহায়তা নিয়ে ফরম পূরণ করতে পারেন। ইমিগ্রান্টদের সেবাদানকারীরাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইতোমধ্যে বাড়িভাড়া সহায়তা পাওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের প্রতি আহবান জানাচ্ছে ফরম পূরণ করতে তাদের সহায়তা গ্রহণের জন্য।
নিউইয়র্ক স্টেট সরকারের এই উদ্যোগের কারণে উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে থাকা অসংখ্য ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে পারবেন। আগামী ৩১ জুলাই ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ স্থগিতকরণের মেয়াদ শেষ হবে। ২০২০ সালের ১৬ মার্চের পর থেকে মার্শালরা মাত্র ১৬টি আবাসিক উচ্ছেদ আদেশ কার্যকর করেছে। অথচ ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে তারা উচ্ছেদ করেছিল ১,৫৯৮ জন আবাসিক ভাড়াটিয়াকে। নিউ ইয়র্ক অফিস অফ দ্য কোর্ট এডমিনিষ্টেশনের ধারণা হচ্ছে, উচ্ছেদ স্থগিতকরণ আদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হাজার হাজার ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে হাউজিং কোর্টে মামলা দায়ের হবে তাদের উচ্ছেদ চেয়ে। এ অবস্থায় ভাড়াটিয়াদের জন্য স্টেট সরকারের আর্থিক সহায়তা তাদের জন্য স্বস্থি হিসেবে আসবে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে নিউইয়র্ক সিটিতে হাউজিং কোর্টগুলোতে বিচারাধীন উচ্ছেদ মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজারের অধিক, যার অধিকাংশই অমিাংসিত অবস্থায় রয়েছে এবং বেশ কিছু মামলা আদালতের বাইরে নিস্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে।
Posted ৫:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh