বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ পর মুক্তি পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার ম্যানহাটানের ক্রিমিনাল কোর্টে উপস্থিত হয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত ৩৪টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছেন তিনি। এসব অভিযোগের মধ্যে প্রায় এক দশক আগে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভিযান চলাকালে পর্নো তারকা অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার অর্থ প্রদানের অভিযোগ সবচেয়ে গুরুতর। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৪ ডিসেম্বর। প্রথম দিনের শুনানির পর আদালত এ তারিখ নির্ধারণ করেন।
ট্রাম্প মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁকে গ্রেপ্তার আদালতে তোলার পর বিচারপতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ পড়ে শোনান। ট্রাম্প অভিযোগগুলো অস্বীকার ও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি আদালতে এক ডজনের কম শব্দ উচ্চারণ করেছে। কিন্তু এক পর্যায়ে সামনের দিকে একটু ঝুঁকে “নট গিল্টি” শব্দ দুটি বলেন। তার নির্দোষ দাবির পর আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্পের আইনজীবীরা মামলা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন জানানোর জন্য আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় পাবেন। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টা আবেদনের সুযোগ পাবেন ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিচারক জুয়ান মারচ্যান বলেছেন, আগামী ৪ ডিসেম্বর আদালতে ট্রাম্পের সশরীরে উপস্থিতি ও শুনানির সময় তিনি এসব আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই শুনানি অভিযোগ আনয়ণকারী ম্যানহাটান ডিষ্ট্রিক অ্যাটর্নি অ্যালভিন এল ব্র্যাগের জন্য স্মরণীয় এক মুহূর্ত ছিল। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, আইনের কাছে প্রত্যেকে সমান। যত অর্থশালী হোক, যত ক্ষমতাধর হোক, আইন কারো ক্ষেত্রে বদলে যাওয়ার নয়।
তার অফিসের একজন আইনজীবী আদালতের শুনানিকালে গত সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের হুমকিপূর্ণ কথাবার্তা তুলে ধরেন, যার একটিতে ছিল যে, তাকে অভিযুক্ত করা হলে ‘মৃত্যু ও ধ্বংস’ আসবে। এর প্রেক্ষিতে বিচারক ট্রাম্পের আইনজীবীদের লক্ষ্য করেন বলেন, ‘আপনারা অনুগ্রহ করে আপনাদের মক্কেল এবংয ার সঙ্গে আবশ্যক তার সঙ্গে কথা বলুন এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দিন যে তারা যাতে এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন, যা সহিংসতা ও নাগরিক জীবনে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দুটি ইমপিচমেন্ট উদ্যোগ এড়াতে সক্ষম হলেও দশকব্যাপী ব্যাপক তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ দায়ের করেছে সরকার পক্ষ। ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজেকে নির্দোষ দাবী করলেও একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি অপরাধে আদালতের মুখোমুখি হওয়ার সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। কারণ সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ধনবান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি অভিযোগে বিচারের সম্মুখীণ করার বিব্রতকর ও পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মঙ্গলবার আদালতের বাইরে ট্রাম্পের পক্ষে ও বিপক্ষে জনসমাগমেও তা স্পষ্ট হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসে বুধবারের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। শুনানি শেষে তিনি লাগর্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে তিনি তার নিজস্ব বিমানে ফ্লোরিডার পাম বিচ বিমানবন্দর তার আবাস ‘মার-এ-লাগো; থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে, তার বিরুদ্ধে এসব মামলার অর্থ হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা। যুক্তরাষ্ট্রে আইনের শাসন নেই বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গ্রেপ্তারের পর মুক্ত ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন দিন : আদালত থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলেও তিনি এড়িয়ে যান। এর আগে গত ৪ এপ্রিল ম্যানহাটানের আদালতে পৌঁছানোর পর ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় তাঁকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আইনজীবীরাও ছিলেন। আদালতে শুনানিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। পরে সার্বিক প্রক্রিয়া শেষে তিনি আদালত চত্বর ছেড়ে যান।
ট্রাম্পই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন। এর আগে আদালত চত্বরে ঢোকার আগে ট্রাম্প সেখানে সমবেত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তিনি ট্রাম্প টাওয়ার থেকে গাড়িবহর নিয়ে ম্যানহাটান ক্রিমিনাল কোর্ট ভবন এলাকায় যান। ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। আদালত ভবনে ঢোকার সময় সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন ট্রাম্প। তাঁর সমর্থনে ওই এলাকায় বিক্ষোভকারী ও তাঁর সমর্থকেরা জড়ো হয়েছেন। তাঁদের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দেয়।
ট্রাম্প কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চান। আগামী বছর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে গত ৪ এপ্রিল এক মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার গ্রেপ্তার হলেন ট্রাম্প। আদালতে দোষি সাব্যস্ত হলে ট্রাম্পের চার বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো কারদণ্ড হলে কী হবে। ট্রাম্প কি নির্বাচন করতে পারবেন? ইউএসএ টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার এ ঘটনা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে সাহায্য করবে নাকি তার জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক তহবিল সংগ্রহের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, এই অভিযোগ ট্রাম্পের ভিত্তিকে আরও সংহত করেছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনগত দিক থেকে ট্রাম্পের জন্য এই অভিযোগ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো বাধা তৈরি করবে না। লয়োলা ল স্কুলের পাবলিক সার্ভিস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জেসিকা লেভিনসন বলেন, আইনগতভাবে বলতে গেলে, সাবেক প্রেসিডেন্ট যদি রাষ্ট্রীয় অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হন বা এমনকি দোষী সাব্যস্তও হন তারপরও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি দোষি সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে গেলে কিভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবেন, আর নির্বাচিত হলে কীভাবে কারাগার থেকে দেশ চালাবেন তিনি? জেসিকা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। তিনটি যোগ্যতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করতে হবে। আরেকটি হচ্ছে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৩৫ বছর। এ ছাড়া টানা ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বসবাস করতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য আগেই বলেছেন, আইনি জটিলতা থাকলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তিনি পিছু হটবেন না। গত মাসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছি না। আইনি জটিলতার সৃষ্টি করা হলে বরং আমার সমর্থক সংখ্যা আরও বাড়বে।’
রসাতলে যাচ্ছে দেশ, ট্রাম্প : আদালতে হাজিরা দিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ব্যক্তিগত বিমানে ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোয় ফিরেই আমেরিকার জো বাইডেন প্রশাসনকে তুলোধোনা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রাপ্তবয়স্কদের ছবির অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েন্সকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার দায়ে অভিযুক্ত ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনকে সরাসরি নিশানা করতে গিয়ে হাতিয়ার হিসাবে তুলে নিলেন তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপকে। ফ্লোরিডায় নিজের সমর্থকদের বললেন, ‘আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আমেরিকায় এমন কিছু হতে পারে। আমার অপরাধ ছিল শুধু দেশরক্ষায় দৃঢ়তা প্রদর্শন।’ আমেরিকার প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি মোকদ্দমার মুখে পড়েছেন তিনি। আদালতে পৌঁছনোর পরেই নিয়ম মেনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে তাকে শুনানির জন্য আনা হয় বিচারকের সামনে। ট্রাম্প গ্রেফতার হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পুলিশ বা জেল হেফাজতে তাকে থাকতে হবে না। সেই অনুযায়ী, হাজিরা শেষ হওয়ার পরই ব্যক্তিগত বিমানে ফ্লোরিডা ফিরে যান তিনি। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন ক্রিমিনাল কোর্ট হাউসে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে অবশ্য একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। কথা ছিল, মার-আ-লাগোয় ফিরে মুখ খুলবেন। ব্যক্তিগত বিমান ফ্লোরিডায় প্রবেশ করতেই জল্পনা চড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সমর্থকদের সামনে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। আর তা করতে গিয়ে বার বার নিশানা করেন আমেরিকার বর্তমান প্রশাসনকে। বলেন, ‘দেশ রসাতলে যাচ্ছে।’
ট্রাম্পের মামলার শুনানিতে যা কিছু হয়েছে : যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ম্যানহাটনে আদালত কক্ষে একজন অভিযুক্ত হিসাবে প্রবেশ করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার চারপাশে ঘিরে ছিল সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। সেই সময় তার পরনে ছিল চিরপরিচিত নীল স্যুট আর লাল টাই। আদালত কক্ষের সামনের দিকে তার জন্য নির্ধারিত জায়গার দিকে যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, যেখানে তার আইনজীবীরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন তার চেহারা ছিল বিষণ্ন আর পদক্ষেপ ছিল ভারী। এর আগে তিনি ম্যানহাটনের আদালতে হাজির হলে প্রক্রিয়ামাফিক আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি নেয়া হয়। যার মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কখনোই কোন কথা বলেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি অভিব্যক্তি বা শারীরিক ভাষার মাধ্যমেও কিছু প্রকাশ করেননি। তিনি হচ্ছেন প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ফৌজদারি অভিযোগ আনা হলো। বিচারক মার্চিন জানিয়েছেন, সামনের বছর জানুয়ারি মাস নাগাদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সামনের বছর যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়বেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন তাকে আবার আদালতেও হাজিরা দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষতি হতে পারে, এমন তথ্য লুকাতে তিনি নকল কাগজপত্র তৈরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক পর্ন তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে অর্থ ঘুষ দিয়েছিলেন। পর্ন ছবির ওই তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস্ জানিয়েছিলেন মি. ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আদালত থেকে ফ্লোরিডায় ফিরে যাওয়ার পর মার-এ লাগোর বাড়িতে ফিরে গিয়ে অভিযোগ করেন, এসব মামলার মানে হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা। তবে আদালতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন অনেকটা শান্ত। বিবিসির সংবাদদাতা কাইলা ইপস্টেইন বলছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির আসনের সরাসরি পাঁচ সারি পেছনে একদল সাংবাদিকের সাথে আমি বসেছিলাম। পুলিশের একটি দল সেখানে নজরদারি করছিল। আদালতে আমাদের ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছিল।
যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫ তলা নীচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠাণ্ডা একরকম সুরেই আদালত পরিচালনা করছিলেন। এমনকি তিনি আওয়াজও বৃদ্ধি করেননি। শুনানির সময় বেশিরভাগ সময় জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪ ধরনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক, ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি’। এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কিনা? ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যা’।
এরপর বিচারক বলেন, অন্য যেকোন অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন। যখন আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন, প্রসিকিউটররা উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুমকিমূলক পোস্ট করেছিলেন যার মধ্যে একটিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে সম্ভাব্য ‘মৃত্যু এবং ধ্বংস’ সম্পর্কে হুমকি দেয়া হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, তাদের মক্কেল এই মামলায় হতাশ এবং বিরক্ত ছিলেন। যা তিনি অবিচার বলে মনে করেন। তবে বিচারক বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, ‘আমি আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নই যে, হতাশাকে বিদ্বেষমুলক বা বাজে ভাষা ব্যবহারের যুক্তি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।’ বিচারক মার্চান বলেন, এ ধরনের উত্তেজিন বক্তৃতা না দেয়ার ব্যাপারে তার সতর্ক করে দেয়ার বিষয়টি কোন আদেশ নয়, বরং অনুরোধ ছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম ঘটলে তিনি বিষয়টিকে ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করতে বাধ্য হবেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর শুনানি শেষ করেন বিচারক। এরপর ট্রাম্প উঠে দাঁড়ালে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে। আইনজীবীদের সঙ্গে শান্তভাবে তিনি কথা বলছিলেন। তবে তার কয়েক সারি পেছনে বসে থাকা সাংবাদিকরা সেসব কিছুই শুনতে পাননি। এরপর তিনি ঘুরে আদালতের মধ্যে প্যাসেজে চলে যান এবং পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। বাইরে অসংখ্য টেলিভিশন ক্যামেরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি কিছু বলেননি। তার অভিব্যক্তি ছিল বেশ গম্ভীর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোন সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম সবে শুরু হলো। সূত্র: বিবিসি।
ট্রাম্পকে উল্টো ১ লাখ ২২ হাজার ডলার দিতে হচ্ছে সেই পর্নো তারকার : মুখ বন্ধ রাখতে পর্নো তারকাকে অর্থ দেওয়ার মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করে উল্টো ফেঁসে গেলেন সেই স্টর্মি ড্যানিয়েলস। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা ভুয়া মানহানির মামলায় ট্রাম্পের আইনজীবী বাবদ যে খরচ হয়েছে তা মেটাতেই ড্যানিয়েলসকে এই জরিমানা গুনতে হবে। আর এই খরচ বাবদ প্রায় এক লাখ ২২ হাজার ডলার দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। খবর সিএনএনের। এক লোক ‘ট্রাম্পের কাছ থেকে সরে দাঁড়াতে’ তাকে ও তার সন্তানকে হুমকি দিচ্ছেন, ড্যানিয়েলস এমন একটি মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন বলে ট্রাম্প অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন ড্যানিয়েলস। কিন্তু মামলাটি ব্যর্থ হয়।
ড্যানিয়েলস দাবি করেছিলেন, তার আইনজীবী মাইকেল অ্যাভেনাটি তার অনুমতি না নিয়েই মামলাটি করেছিলেন। ক্লায়েন্টদের থেকে চুরির দায়ে অ্যাভেনাটি এখন ফেডারেল কারাগারে আছেন। ২০২২ সালের মার্চে এই দেওয়ানি মামলার খরচ হিসেবে ট্রাম্পকে প্রায় তিন লাখ ডলার দিতে ড্যানিয়েলসকে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। ড্যানিয়েলস এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। আপিলে এই পর্নোস্টার হারলেও জরিমানার পরিমাণ কমেছে।
Posted ১:২৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh