বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির আগামী ২ নভেম্বর নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখতে যাচ্ছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুই নারী প্রার্থী এটর্নি সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফ। গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত সিটির ডমোক্রেটিক প্রাইমারিতে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে অবিশ্বাস্যভাবে জিতে যান নতুন প্রজন্মের শাহানা হানিফ। চূড়ান্ত ফলাফলে বিজয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটি তথা যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস গড়বেন বাংলাদেশী আমেরিকান এ প্রার্থীদ্বয়। এতে নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশী অভিবাসীর স্বপ্ন যেমন পূরণ হবে, তেমনি প্রশাস্ত হবে তাদের অধিকার আদায়ের পথ।
শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল মেম্বার পদে
শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ব্রুকলীনের ৩৯ ডিস্ট্রিক্ট থেকে বিজয়ী হন গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে। নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে শাহানা হানিফের অভাবনীয় এ বিজয় গোটা বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির বিজয়। বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে শাহানা হানিফ হবেন প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান। প্রথম মুসলিম সাউথ এশিয়ান যিনি এই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় ডিষ্ট্রিক্ট-৩৯ এ তিনিই হচ্ছেন প্রথম নারী কাউন্সিল মেম্বার। কেননা নিউইয়র্ক সিটিতে যিনিই ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়লাভ করেন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে জয়ের মালা তার গলায়ই পড়ে। আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সিটির সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত বিজয় শাহানা হানিফই ছিনিয়ে আনবে।
ব্রুকলীনের ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে কাউন্সিল মেম্বার পদে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম প্রার্থী শাহানা হানিফ। আসনটির বর্তমান কাউন্সিলম্যান ব্র্যাড ল্যান্ডারের মেয়াদ কাল উত্তীর্ণ হওয়ায় কম্পট্রোলার পদে নির্বাচন করেন তিনি। ব্রুকলীনের ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ আসনে এবারের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে শাহানা হানিফের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন ৬ জন। তন্মধ্যে একজন বাংলাদেশীও ছিলেন।
প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট শাহানা হানিফ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটিক নেতা ও সংগঠনের সমর্থন পেয়েছেন প্রাইমারিতে। বিশেষ করে ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি, স্টেট সিনেটর জেসিকা র্যামোস ও সিটি কাউন্সিল মেম্বার হেলেন রোজেন থাল। নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস ওম্যান ওকাসি’র আর্শীবাদ ছিলো তার প্রতি।
ব্রুকলীনের কিংস্টন এলাকায় বেড়ে উঠা বাংলাদেশী অভিবাসী পরিবারে জন্ম শাহানা হানিফের। তার পিতা মোহাম্মদ হানিফের পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। তার শিক্ষা জীবনের শুরু ব্রুকলীনের পিএস-২৩০ থেকে। এরপর ব্রুকলীন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন শাহানা হানিফ। কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও সামাজিক সংগঠক শাহানা হানিফ পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে প্রতিদিন যুদ্ধ করে এসেছেন প্রতিবেশীদের অধিকার আদায়ের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান কাউন্সিল মেম্বার ব্রাড ল্যান্ডার্সের অফিসে যোগ দিয়েছিলেন। ডাইরেক্টর অব অর্গানাইজিং এন্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট হিসেবে। এসময় স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সাথে তার গড়ে উঠে নিবিড় সম্পর্ক। তিনি সার্বক্ষণিক তাদের সেবায় নিয়োজিত করেন নিজেকে। বিশেষ করে সিটি প্রদত্ত প্রতিটি ডলার কিভাবে প্রতিবেশীদের কল্যাণে সঠিকভাবে ব্যয় করা যায় তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন শাহানা হানিফ। আর এভাবেই আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠা শাহানা হানিফ সিটি কাউন্সিল মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেন। মানুষের সেবায় আত্ননিয়োগকারী শাহানা হানিফ বিজয়ের ব্যাপারে ছিলেন শতভাগ সুনিশ্চিত।
সিভিল কোর্টের বিচারক পদে এটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স সিভিল কোর্টের বিচারক পদে প্রাইমারিতে বিজয়ী হন বাংলাদেশী আমেরিকান এটর্নি সোমা সাঈদ। গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বিচারকের একটি মাত্র পদে নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন এটর্নি সোমা সাঈদ। ফলাফলের সর্বশেষ তথ্য তথ্যানুযায়ী এটর্নি সোমা পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৫৬৬ ভোট।
২২ জুনের প্রাইমারি ফলাফলে এটর্নি সোমা সাঈদ যে সংখ্যক ভোট পেয়েছেন তাতে ২ নভেম্বর নির্বাচনে তার বিজয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। চূড়ান্ত ফলাফলে এটর্নি সোমা বিজয়ী হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির বিচার বিভাগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম বিচারক। শুধু তাই নয় প্রথম মুসলিম নারী সাউথ এশিয়ান বিচারক হিসেবে তিনি পরিচিত হবেন। বিচারক নির্বাচিত হলে সোমা সাঈদ এই পদে নিয়োজিত থাকবেন আগামী ১০ বছর । আর এটা হবে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির জন্য অনেক বড় পাওয়া।
উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটির সিভিল কোর্টে মোট বিচারকের সংখ্যা ১২০ জন। তন্মধ্যে ৫০ জন সিভিল কোর্টে এবং বাকীরা অন্যান্য কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। সিভিল কোর্টের বিচারকগণ সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা পরিচালনা করতে পারেন। সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পূর্বে এটর্নি সোমা সাঈদ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর বিশেষ নির্বাচনে অংশ নেন। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ভোট পান তিনি। এটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স কাউন্টি ওমেন’স বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনে তাকে সমর্থণ প্রদান করেছেন বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে যার ফলে বিভিন্ন সময়ে জনগণের শিক্ষা, চাকুরী, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গৃহায়ন প্রভৃতি মৌলিক অধিকার আদায়ে আলবেনীতে ছুটে যান তিনি।
সোমা সাঈদ বারো বছর বয়সে আমেরিকা আসেন। বসবাস শুরু করেন কুইন্সে। এটর্নি সোমার পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে। তার প্রয়াত পিতা আফতাব সাঈদ বাংলাদেশে ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রয়াত মাতা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। তার পিতা ছিলেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’র প্রথম সম্পাদক। । কুইন্সের মানুষের সাথে তাঁর গড়ে উঠে আত্মীক বন্ধন। নারী-পূরুষ, ধর্ম-বর্ণ কিংবা ছোট-বড় নির্বশেষে সকলের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন সোমা সাঈদ। এটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স কাউন্টি ওমেন’স বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। ২০০৮ সালের মন্দাকালীন সময়ে সোমা সাঈদ আন্দোলন করেন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সোচ্চার হন তিনি। এশিয়ান কমিউনিটিতেও সোমা সাঈদের পেশাগত ও সামাজিক যোগাযোগ রয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটিতে একধরণের গ্রহণ যোগ্যতাও রয়েছে তার।
Posted ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh