বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করতে না পারাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে সফল হতে না পারায় এখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এমনকি টেক্সাস থেকে আগত ইমিগ্রান্টদের প্রতি স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটির উদারতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সত্বেও এক্ষেত্রে তার কিছু কিছু পদক্ষেপ ভ্রান্ত ছিল বলেও তিনি সমালোচনা থেকে রক্ষা পাননি। বলা যায় প্রতিটি কোণা, প্রতিটি মহল থেকে তার প্রতি সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করা হচ্ছে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে গিয়ে তিনি বাধার সম্মুখীণ হচ্ছেন।
টেক্সাস থেকে সেখানকার রিপাবলিকান গভর্নর তার একক সিদ্ধান্তে সীমান্ত পেরিয়ে টেক্সাসে প্রবেশকারী বিদেশি নাগরিকদের তার স্টেটে না রেখে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত স্টেট ও বড় বড় সিটিগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন স্টেটের ব্যয়ে ভাড়া করা বাসযোগে। তার উদ্দেশ্য ডেমোক্রেটদের উদার ইমিগ্রান্ট বান্ধব নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং এভাবে ইমিগ্রান্টদের ডেমোক্রেট সিটিগুলোতে পাঠিয়ে দিয়ে রিপাবলিকানদের ইমিগ্রেশন নীতি মেনে নেওয়ার জর্য চাপ সৃষ্টি করা। বেশির ভাগ ইমিগ্রান্টকে টেক্সাস থেকে সোজা নিউইয়র্ক সিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল এবং গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বিশ হাজারের বেশি ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্ক সিটিতে এসে উপনীত হয়েছেন। তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে সিটির এখন হিমশিম খাওয়ার অবস্থা।
সিটির হোমলেস আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যাদের আবাসনে ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল, তা করা হয়েছে। অনেকে সিটির বেশ কিছু হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ইমিগ্রান্ট সংখ্যা বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে মেয়র অ্যাডামস ও তার প্রশাসনকেও কৌশল পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তার একাধিক পদক্ষেপ ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে তিনি কঠোর সমালোচিত হচ্ছে। ব্রঙ্কসের বন্যা প্রবণ এলাকায় তিনি ইমিগ্রান্টদের আশ্রয়ের জন্য তাবু স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং কাজের বেশ অগ্রগতিও হয়েছিল। অনেকে আগেই সতর্ক করেছিলেন যে ইমিগ্রান্টদের জন্য যেখানে তাবু স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে অল্প বর্ষণেই পানি ওঠে এবং যোগাযোগের সুবিধাবিহীন একটি স্থান।
সিটি কাউন্সিল সদস্যরা সিটি হলের বাইরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে আওয়াজ তোলে যে নিউইয়র্কে ‘তাবুর শহর’ গড়ে তোলার কোনো সুযোগ নেই। স্টেট সিনেটর ব্রুকলিনের জাবারি ব্রিসপোর্ট বলেছিলেন, এটি একটি ব্যর্থ নীতি, যা কল্পনার ব্যর্থতা এবং একই সঙ্গে নেতৃত্বের ব্যর্থতা। কিন্তু প্রশাসন কারো সমালোচনায় কোনো কান দেয়নি। কাজ যখন মাঝামাঝি অবস্থায়, তখন একদিন বেশ বৃষ্টিপাত হয়েছিল এবং তাবু স্থাপন এলাকাসহ আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে ব্রঙ্কসে তাবুর পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে হয়। এমনকি তিনি স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে একটি ক্রুজ শিপেও ইমিগ্রান্টদের রাখার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সবচেয়ে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হন যখন তিনি নবাগত ইমিগ্রান্টদের নিউইয়র্ক সিটির ওপর হামলা বলে মন্তব্য করেন। তাছাড়া সিটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার উদ্যোগ চাঙ্গা না হওয়ার পেছনে তার প্রশাসনের নেতিবাচক ভূমিকাও তাকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
মেয়র অ্যাডামসের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তিনি এখনও মনে করেন যে ইমিগ্রান্টদের জন্য নিউইয়র্ক সিটি প্রকৃত অর্থেই একটি স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটি, যেখানে ইমিগ্রান্টরা তাদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরনের চেষ্টা চালাতে পারবেন। কিন্তু তার চিন্তাভাবনাকে ঘোলাটে করেছেন রিপাবলিকান নেতারা , যারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতির ঘোর বিরোধী। সেজন্য তারা কয়েক মাসের মধ্যে সীমান্ত থেকে ২০ হাজারের বেশি ইমিগ্রান্টকে নিউইয়র্ক সিটিতে পাঠিয়ে সিটির ওপর প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আগেই এত বিপুল সংখ্যক ইমিগ্রান্টের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করা সিটির সাধ্যাতীত কাজে পরিণত হয়েছে।
মেয়র অ্যাডাম পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রায় ব্যর্থ হয়ে একদিকে টেক্সাস সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তার সিটিতে ইমিগ্রান্ট পাঠানো বন্ধ করার জন্য, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুলের প্রতি অণুরোধ করেছেন জরুরী আর্থিক সহায়তা করার জন্য। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে তিনি অন্যান্যের কৃপার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ফেডারেল কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছে, যাতে তারা সীমান্ত অতিক্রমকারী মাইগ্রেন্ট সংখ্যা হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ক্রিস্টিনা গ্রির বলেছেন, “মেয়র এরিক অ্যাডামসের মতো ডেমোক্রেটদের কথাবার্তা অনেক সময় রিপাবলিকানদের কথার মতো শোনাচ্ছে।
Posted ১২:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh