সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ভালোবাসার ফেরিঅলা আবু জাফর মাহমুদ

আদিত্য শাহীন :   |   বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

ভালোবাসার ফেরিঅলা আবু জাফর মাহমুদ

বাণিজ্যের জন্য পৃথিবী উর্দ্ধশ্বাসে ছুটছে। সব জাতি গোষ্ঠিই বাণিজ্যের গুরুত্বকেই সবচেয়ে বড় করে তুলেছে। বাণিজ্যের দৌঁড়ের কাছে পরাজিত হচ্ছে সব। যেখানে যা কিছু চলছে, তার ভেতরেই বাণিজ্যের গন্ধ খুঁজতেই অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি আমরা। মিষ্টি ভাষা, বিনয়, ধর্মাচার, নীতিকথা এর অনেক কিছুই বাণিজ্যের কৌশল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বাণিজ্যে সফলতাই ব্যক্তিসাফল্য, সামাজিক সাফল্য ও ক্ষেত্রবিশেষে হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মোটা দাগে বেশি উপার্জন করাই একজন মানুষের সাফল্য ও মহত্ব হিসেবে মূল্যায়ণ করছি আমরা। ঠিক এই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে খুঁজতে ইচ্ছে হয় ‘ভালোবাসা’ শব্দটির যে শক্তি, এর যে মহত্ব সেটি কীভাবে টিকে আছে পৃথিবীতে? আদৌ কি এর প্রকৃত শক্তি জয়লাভ করছে কোথাও?

নিউইয়র্কে এসে অসাধারণ এক অভিযানের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে আমার। এখানে মার্কিন সরকারের যতগুলি সেবামূলক কার্যক্রম অমিত শক্তি নিয়ে অগণিত মানুষের মন জয় করেছে তার একটি হচ্ছে হোমকেয়ার সেবা। বয়োজ্যৈষ্ঠ ও শারিরীকভাবে অসুস্থ মানুষের ঘরে বসেই সেবা পাওয়ার সুযোগ। এই একটি ব্যবস্থা যেন আমেরিকা তথা নিউইয়র্ককে এক সেবাস্বর্গের স্তরে নিয়ে গেছে। এই শহরের বয়ষ্ক মানুষ পরিণত হয়েছে সম্পদে। এই সেবার সুবাদে বয়োবৃদ্ধ মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের চিন্তাটি দেশের কল্যাণে যুক্ত হচ্ছে। তারা সমাজের সক্রিয় অংশ। আর এই সেবায় আত্মনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এখানকার নাগরিকদের। সন্তান মা বাবাকে সেবা দিচ্ছে। একজন তরুণ কিংবা তরুণী যেকোনো বয়োবৃদ্ধের সেবা দিচ্ছেন। এটি সবার জন্যই পেশাদারিত্বের ব্যাপার। এই কাজটি যেমন দারুণ সম্মানের, একইভাবে উচ্চমানের রোজগারের ব্যাপারও।


এই নিউইয়র্ক শহরে বহু বাংলাদেশি এখন হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে নানান দায়িত্বের সেবাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। প্রচলিত ধারণায় এটি এক লাভজনক বাণিজ্যের ব্যাপার। তবে কঠোরভাবে যেটি বিবেচনার সেটি হচ্ছে, সুক্ষ্মভাবে সরকারের নিয়ম মানার ব্যাপার। অনেকেই ফাঁক ফোকর খুঁজে বের করে নানা অনিয়মও করে চলেছেন। এগুলোতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই, কারণ এখানে অনিয়ম বেশিদিন টেকে না।

একজন ব্যক্তির কথা বলতেই এই দীর্ঘ ভূমিকার অবতারণা। তিনি আবু জাফর মাহমুদ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার। স্কুল বয়স থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষটির মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বগাথা। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষাগত অধ্যায়ণ করেছেন। স্বাধীন দেশে নানা অনিয়ম, অনাচার ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নভঙ্গের দৃশ্য দেখে দেখে হতাশ হয়ে একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসতি ও কর্ম বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও দেশ ছাড়েননি। বুকের মধ্যে দেশটির মানচিত্র বয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের শক্তির জায়গাটি আবিস্কার করেন তার মতো করে। তিনি বাঙালির জন্মগত এক গভীর যোগ্যতার সঙ্গে বিশ্বায়ণের সেতুবন্ধন রচনার জন্য কাজ করে চলেছেন গত ত্রিশ বছর। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে গভীর অধ্যায়ণ করেছেন। এই পথে করেছেন লেখালেখি ও গবেষণা। জন্মসূত্রে যুক্ত নতদী ও সাগরের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের সুবাদে অধ্যায়ন করেছেন আন্তর্জাতিক নদী, উপকুলীয় জীবন ও পানিকেন্দ্রিক রাজনীতি ও জীবন বাস্তবতার বিভিন্ন দিক। তার বিবেচনায়, বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রতিটি মানুষের মাঝে রয়েছে বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক যোগ্যতা। রয়েছে গভীর মমত্ববোধ। আর্থসামাজিক নানা কারণেই অন্তরের ভালোবাসা আর গভীর মমত্ববোধের চর্চা হয় না। তবে ভেতরের এই শক্তিকে উস্কে দিতে পারলে সেই মানুষটির ক্ষমতা বেড়ে যায়।


আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কের বাংলাদেশি সমাজে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ। মার্কিন সরকারের মানবিক সেবার সঙ্গে তিনি বাঙালির জন্মগত ও পারিবারিক মমত্বকে যুক্ত করে অসাধারণ ফল পেয়েছেন। প্রবাসে পাড়ি জমানো সংসার হারা, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা প্রতারিত বহু নারীর জীবনে মানবিক সেবা, যত্ন ও ভালোবাসার শক্তিকে কাজে লাগানোর পথ দেখিয়েছেন। ষোলো বছর আগে তিনি নিউইয়ের্কে হোম কেয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। শুরুতে কাজটি কঠিন ছিল। হোমকেয়ার সেবার যে সুনির্দিষ্ট রীতি ও ঘোষিত কৌশল সেগুলো তিনি নিজে রপ্ত করে তার সঙ্গে বাঙালির প্রবণতাকে যুক্ত করার জন্য দিনের পর দিন এখানকার কর্মসন্ধানী উদ্যোগী অথচ নানাভাবে উপেক্ষিত ও হতাশ নারী পুরুষকে একত্র করেছেন। তাদেরকে প্রশিক্ষিত করেছেন।

তাদের মাঝে থাকা অমিত শক্তিকে জাগানোর চেষ্টা করেছেন। এখন মানবিক সেবার জন্য আমেরিকার বহুদিনের গবেষণালব্ধ উদ্ভাবনী উদ্যোগ হোম কেয়ার কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করছেন বাংলাদেশিরা। এখন আবু জাফর মাহমুদের দেখাদেখি অনেকেই হোম কেয়ার উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু সবাই যখন বাণিজ্যিক সেবায় মোহগ্রস্ত হতে চায়, তখন আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বাণিজ্য নয়, যে সেবা বা যত্নে ভালোবাসা আছে, সেটিই মানবতা। আর মানবতা ছাড়া আমেরিকা সরকারের উদ্দেশ্যের মহত্বের সঙ্গে একাত্ম হওয়া সম্ভব নয়। যখন তিনি হোম কেয়ার সেবা শুরু করেন, তখন তিনি হোম হেলথ্ এইড বিষয়ে বহু মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। একেকটি ব্যাচে ২৫ জন করে থাকতো। সপ্তাহে একদিন তিনি বাঙালির পারিবারিক ভালোবাসার অনুশীলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। শত শত থেকে হাজার হাজার মানুষ তার এই বার্তা পেয়েছেন। জীবন সংসারের বৃন্তচ্যুত অনেক নারী তার মানবিক শিক্ষা ও সেবার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পেরে অসাধারণ এক জীবনের অধিকারী হয়েছেন। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ভালোবাসা বিষয়টি এমন যে, এর শক্তি যেকোনো ভাষার উর্দ্ধে। বাংলাদেশের অনেকেই আছেন, যারা ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার সীমাবদ্ধতায় কিছুই করতে পারেন না। এমন অনেকেও শুধু ভালোবাসার শক্তি দিয়ে সেই সীমাবদ্ধতায় জয় করেছেন। আজ সে অন্য ভাষার মানুষের সঙ্গে সুন্দরভাবেই ভাব বিনিময় করতে পারে। কথা বলতে পারে। এটি অনেক বড় ব্যাপার। জীবনে এমন শক্তি পাওয়া বহু মানষের পিতার সম্মানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন আবু জাফর মাহমুদ।


সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাক্ষরিত আজীবন সম্মাননা ও স্বর্ণপদক পেয়েছেন আবু জাফর মাহমুদ। থাইজেন্টস শেডস অব উইমেন নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন তার হাতে তুলে দিয়েছে ওই পদক। ওই পদক প্রদানের সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমেরিকার মানব সেবা কার্যক্রমকে শতভাগ সার্থক করে তুলতে গত তিন দশক নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন আবু জাফর মাহমুদ। একজন মানবদরদী হিসেবে তিনি কেবল বাংলাদেশি কমিউনিটির নারীর ক্ষমতায়ন ও মানব সেবায় অবদান রাখেননি তিনি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষকে সুস্থতা, সুশ্রুষা ও মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। তার কাছ থেকে মানবসেবা ও ভালোবাসার দিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছেন অনেকেই।

এবার নিউইয়র্কে বেশ কয়েকটি নতুন রেকর্ড সূচিত হয়েছে। এক. নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস এর ৭৩ স্ট্রিটের নামকরণ করা হয়েছে বংলাদেশ স্ট্রিট নামে, দুই. নিউইয়র্ক সিটি এবছর থকে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ঘোষণ দিয়েছে। এবার যথাযথ মর্যাদায় তারা উদযাপনও করেছে। আরেকটি হচ্ছে নিউইয়র্কের কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ড জুনিয়র এবার তার বরো দপ্তরের অসাধারণ পরিসরে উদযাপন করেছেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। ওই আয়োজনে বাংলাদেশের মহান মহান স্বাধীনতাকে ভাস্বর করে তোলার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অবদানকে অনেক বড় মর্যাদার সঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। এবার সেখানে মানবতা ও ভালোবাসার ফেরিঅলা আবু জাফর মাহমুদকে ডানোভান রিচার্ড আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করেছেন। আবু জাফর মাহমুদ গ্রহণ করেছেন বোরো প্রেসিডেন্ট এর দেয়া গার্ড অব অনার। ওই অনুষ্ঠানের ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ান কমাণ্ডার আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্ক তথা মার্কিন যুক্তেরাষ্ট্রের মানবসেবার অভিযানে অসাধারণ এক মমতা ও সৃজনশীলতা যুক্ত করেছেন। তার অবদানে সমৃদ্ধ হচ্ছে নিউইয়র্ক স্টেট, সিটি তথা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেবামূলক কর্মসূচিগুলো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ রাজনীতি, সমাজ উন্ননয়, ব্যক্তিগত পেশা থেকে সকল কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করেন ‘ভালোবাসা’। এক্ষেত্রে তিনি মায়ের ভলোবাসাকে নিয়ে আসেন সর্বাগ্রে। তিনি গত এক বছরে প্রায় ৪০টি সভায় মানবতার বার্তা পৌঁছে দিতে বক্তব্য রেখেছেন। প্রতিটি বক্তব্যেই তিনি সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে মায়ের সর্বোচ্চ অবদানকে সামনে এনেছেন। তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে মায়ের সন্তান জন্মদানের কষ্ট ও অবদানের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। একইভাবে তিনি মানবসেবার কাজটিতেও সন্তানের প্রতি মায়ের সেবার কথাই বারবার মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, সেবার কোনো বিনিময় হয় না। সেবা হতে হয় নিঃস্বার্থ। সেবার পূর্বশর্ত ভালোবাসা। আজ ১৪ এপ্রিল, আবু জাফর মাহমুদের জন্মদিন। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি আমরা।

আদিত্য শাহীন, সাংবাদিক।

 

 

advertisement

Posted ৩:০৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.