যুক্তরাষ্ট্রে যারা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধানের ওপর কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার বলেছেন, যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন বড় বড় জনসমাগম ও গণপরিবহন ছাড়া তাদের আর মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। কারণ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে।

অতএব যারা দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তারা ছোট আকারের সমাবেশে মাস্ক ছাড়াই অংশ নিতে পারেন। এমনকি সাইকেল চালানো বা জগিং করা বা ঘোরাফেরা করার সময় তাদের মাস্ক পরিধান না করলেও চলতে পারে। জো বাইডেন বলেছেন যে, তিনি আশা করছেন আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইয়ের মধ্যেই আমেরিকার জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসবে। হোয়াইট হাউজের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “করোনা ভাইরাসের সাথে লড়ার ক্ষেত্রে আমেরিকানরা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে। যারা ভ্যাকসিন নেয়া সম্পন্ন করেছেন আজ থেকে তারা পার্কে, অথবা পিকনিকের মত কর্মসূচিতে বন্ধুরা মাস্ক না পরেই দলবদ্ধভাবে অংশ নিতে পারবেন।” তবে যারা এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তারা এখনো সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কামুক্ত নন বলে সর্বক্ষেত্রে তাদের মাস্ক ধারণ ও সতর্কতা অবলম্বন জরুরী বলে তিনি সতর্কও করেছেন।

ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের জন্যে সর্বশেষ এই নির্দেশনায় সারা আমেরিকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস বইছে। কারণ, গত ১৩ মাস ধরে মাস্ক পরতে বাধ্য হচ্ছেন সকলে। সেই অসহনীয় একটি পরিস্থিতি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে এ এক বড় পদক্ষেপ বওে সিডিসি মন্তব্য করেছে। নতুন নির্দেশনায় বলেছে যে, যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তারা বাড়ির বাইরে পারিবারিক ও বন্ধুদের ছোট আকারের সমাবেশসহ কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সময় মাস্ক পরিধান না করলেও ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কামুক্ত থাকতে পারবেন। সিডিসির রিপোর্ট অনুসারে ভাইরাসের সংক্রমণ এতো কম পর্যায়ে নেমে এসেছে যেসব ব্যক্তি এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদেরও বাইক চালানো, জগিং করা, বা পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় মাস্ক পরিধান না করলেও চলবে। তারা ভ্যাকসিন নেয়া বন্ধু সমাবেশেও যোগ দিতে পারেন। যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদের দ্বারা যেহেতু অন্যদের সংক্রামিত করার আশঙ্কা নেই সেজন্য তাদের সমাবেশে অন্যরাও নির্দ্বিধায় যোগ দিতে পারেন।

সিডিসির ডাইরেক্টর ডা: রশেলে ওয়ানেস্কি বলেছেন, “ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মোট সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাতে সংক্রমণের হারও কমছে।” তিনি কয়েক সপ্তাহ আগেও “আসন্ন মহাবিপদ” অনুভব করেছেন, এখন তিনি অনেক বেশি “আশাবাদী” বলে অনুভব করছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের ডাটাবেজ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এখন দৈনিক গড় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ হাজার, দুই সপ্তাহ আগে দৈনিক গড় আক্রান্তের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন মনে করছি যে পরিপূর্ণ টিকা গ্রহণকারীরা মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করতে পারবেন। তবে বড় ধরনের কনসার্ট, স্টেডিয়াম এবং সভা-সমাবেশে যোগদানের সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।

সিডিসির এই ঘোষণার পরই নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, লুইজিয়ানা, মেইন এবং ম্যাসেচুসেটস’র গভর্নররা একই নির্দেশনা জারি করেছেন। প্রসঙ্গত, সারা আমেরিকায় করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছে মোট ৫ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ। করোনার টিকা (দুটি করে ডোজ অথবা জনসনের একটি) গ্রহণ করেছেন সাড়ে ৯ কোটি আমেরিকান অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ২৮.৫%।

টিকার দুই ডোজ প্রাপ্তদের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই, বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রে দুই ডোজ করোনার টিকা যারা গ্রহণ করেছেন তারা চাইলে সীমিত পরিসরে জনসমক্ষে মাস্ক না পরেই থাকতে পারবেন। গত ২৭ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।করোনাভাইরাসের মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। তবে ৩৩ কোটির দেশটিতে ইতোমধ্যে বিশ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের টিকা নিতে এখন কোনো পূর্বনির্ধারিত অ্যাপয়েনমেন্টও লাগছে না। সেই সাফল্যের পর এবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিলেন, টিকা যারা নিয়েছেন বাড়ির ভেতরে বা বাইরে তাদের মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, আপনি যদি টিকা দিয়ে থাকেন তবে আপনি বাইরে এবং বাড়ির বাইরেও আরও সুরক্ষিতভাবে আরও অনেক কিছু করতে পারবেন। তবে বড় ধরনের কোনো জনসমাগমের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। জো বাইডেন আরোও বলেন, আমি একেবারে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আপনি যদি ভিড়ের মধ্যে থাকেন, স্টেডিয়ামের মতো বা কোনও সম্মেলনে বা কনসার্টে থাকেন তবে আপনার বাইরে থাকা সত্ত্বেও একটি মুখোশ (মাস্ক) পরা প্রয়োজন।