শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নতুন হাউজিং প্রকল্পে রাজনীতিকদের অনুমোদন বাড়ছে

ভয়াবহ আবাসন সংকটে নিউইয়র্ক সিটি

বাংলাদেশ প্রতিবেদন :   |   বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২

ভয়াবহ আবাসন সংকটে নিউইয়র্ক সিটি

ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল নগরী নিউইয়র্ক। প্রায় এক কোটি বাসিন্দার এই নগরীতে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়ির সংখ্যা অপ্রতুল। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে কম করে হলেও আরো ৩ লাখ ৪০ হাজার নূতন বাড়ির প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় নূতন করে হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভয়াবহ আবাসন সংকটে পড়েছে নিউইয়র্ক সিটি। নজিরবিহিন বাড়ি ভাড়া এবং মূল্যস্ফিতির কারণে সিটির নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর বাসিন্দাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সিটিতে দিন দিন বাড়ছে হোমলেসদের সংখ্যা। অপরদিকে সীমান্ত পেরিয়ে আসা ইমিগ্র্যান্টরা ভীড় করছে নিউইয়র্ক সিটিতে। চলমান এই আবাসন সংকট কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন সময় নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নে ডেভেলপাররা এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বামধারার একশ্রেনীর ডেমোক্র্যাট জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিক বাঁধাগ্রস্থ করছেন এই উদ্যোগ।

সিটির আবাসন খাতে বিনিয়োগকারীদের বরাবরই শত্রু ভেবেছেন তারা। এসব কারণে থমকে গেছে অনেক বড় বড় হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন। বৃদ্ধি পেয়েছে আবাসন সংকট। সাম্প্রতিককালে সিটির আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করায় বাম ঘরানার এসব রাজনীতিকের মাঝে উদয় হয়েছে শুভ বুদ্ধির। আবাসন খাতে নতুন অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমতি মিলছে তাদের কাছ থেকে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কাংখিত এফোর্ডেবল হাউজের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বিনিয়োগকারীদেরকে স্বাগত জানাচ্ছেন রাজনীতিকরা। বিশেষ করে কয়েকজন সিটি কাউন্সিল মেম্বার ও বরো প্রেসিডেন্ট। তবে এখনো কোন কোন প্রকল্পে সায় দিতে গড়িমসি করছেন দু’একজন কাউন্সিল মেম্বার। তাদের একজন এস্টোরিয়া এলাকায় জুলি উন। নিউইয়র্ক সিটির অতি প্রয়োজনীয় এই আবাসন সংকট নিয়ে চলতি সপ্তাহে বিশালকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। আর এই প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে বামপন্থীখ্যাত এসব রাজনীতিকদের বর্তমান ইতিবাচক অবস্থান।


নিউইয়র্ক টাইমসের মতে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগকারীদেরকে দীর্ঘদিন ধরে সিটির যে সকল জনপ্রতিনিধি শত্রু মনে করে আক্রমনাত্নক মনোভাব পোষন করেছেন। স্থানীয় কমিউনিটির সম্পত্তির মূল্য এবং প্রতিবেশের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য হাউজিং প্রকল্প আটকে দিয়েছেন। অনেক জনপ্রতিনিধি আবার সাধারণ মানুষকে বুঝাতে চান তারা রুখে দিচ্ছেন ধনাঢ্য করপোরেট আগ্রাসন। তারাই এখন কঠিন বাস্তবতা অনুধাবন করে নতুন নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দিচ্ছেন। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র স্পিকার সহ সিটি কাউন্সিলের সিংহভাগ সদস্য আবাসন সংকট নিরসনে নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে। এমনকি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশের বড় বড় শহরে তাগিদ দিচ্ছেন নতুন হাউজিং প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের।

বিদ্যমান ভয়াবহ আবাসন সংকট রাজনীতির সব হিসেব নিকেষ পাল্টে দিচ্ছে। নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ যিনি নিউইয়র্ক সিটিতে আমাজনের প্রকল্প আটকে দেন সম্প্রতি তিনিও নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করছেন। ফলে তার সমর্থক কয়েকজন সিটি কাউন্সিল মেম্বার আশানুরূপ অ্যাফোর্ডেবল হাউজের প্রতিশ্রুতি না পেলেও পাশ করেছেন নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের বিল। ডেমোক্র্যাটিক সোস্যালিস্ট হিসেবে পরিচিত কুইন্সের এস্টোরিয়া এলাকার কাউন্সিল ওম্যান টিফানি কাবান গত সপ্তাহে তার নির্বাচনী এলাকায় অনুমোদন দিয়েছেন ১হাজার ৩০০ এপার্টমেন্টের একটি নতূন প্রকল্পের। যেখানে এক চতুর্থাংশ এপার্টমেন্টের ভাড়া হবে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম। তিনি মনে করেন বর্তমান বাস্তবতার শতভাগ অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং সম্ভব নয়। চলমান হাউজিং সংকট কাটিয়ে উঠতে নতুন হাউজিংয়ের কোন বিকল্প নেই। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে এসব এলাকা আরো অনুন্নত হয়ে পড়বে।


নিউইয়র্ক সিটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হাউজিং ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। রাজনীতিকদের বড় আর্থিক যোগানদাতাও তারা। সিটির কম পরিমাণ এবং অবহেলিত ও পতিত জায়গায় বহুতল ভবন করে সবধরণের নাগরিক সুবিধা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হয় তাদেরকে। এজন্য সিটির প্রতিটি নিয়মনীতি মেনে চলার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটি বোর্ড সহ গোটা এলাকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধা আমলে নিতে হয় বিনিয়োগকারীদের। সার্বিক বিবেচনায় নিউইয়র্ক সিটি এখন নতুন হাউজিং প্রকল্পের পক্ষে। আর এক্ষেত্রে একটি গতিরও সঞ্চার হয়েছে সর্বত্র। সিটির প্রায় অর্ধেক বাসিন্দাকে তাদের আয়ের এক তৃতীয়াংশেরও অধিক ব্যয় করতে হয় বাড়ি ভাড়ার জন্য। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সিটির হোমলেসদের জন্য নির্ধারিত আবাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে কুইন্সের লং আইল্যান্ড সিটি, জ্যামাইকা, ফাররকওয়ে, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস সহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক বহুতল আবাসিক ভবন। ফলে এসব এলাকায় গোটা পরিবেশ ও প্রতিবেশ পাল্টে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে নতুন সুযোগ সুবিধা। ব্রুকলীনের একটি ৪০০ এপার্টমেন্টের বহুতল আবাসিক ভবন প্রকল্প এ বছরের শুরুতে স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার আটকে দিলেও পরবর্তীতে তা অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্পে ৩৫ শতাংশ এফোর্ডেবল হাউজ থাকছে। গত সপ্তাহে ব্রঙ্কসের থ্রগস নেক এলাকায় ৩৫০টি বাড়ির একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সিটি কাউন্সিল। এই প্রকল্পটির প্রাথমিকভাবে স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার দ্বারা বাঁধাগ্রস্থ হয়। আগে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিলো বহুতল ভবন ও নতুন হাউজিং প্রকল্প হলে এলাকায় বাসা ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। কার্যত এমনটি না হওয়ায় পরিস্থিতি এখন অনুকুলে।


ম্যানহাটানের হারলেমে ৯০০ এপার্টমেন্টের নতুন একটি প্রকল্প স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বারের বাঁধার কারণে ভেস্তে যায়। বর্তমানে এই প্রকল্প এলাকা অনেকটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নূতন কওে দাবি উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়েেনর। সিটি কাউন্সিলে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে গত বছর আবাসন খাতে প্রায় ২৫ হাজার বাড়ি সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। এবছর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই বিষয়টি বিবেচনা করছে সিটি কর্তৃপক্ষ।

গোটা নিউইয়র্ক সিটি জুড়ে যখন এমন একটি ইতিবাচক হাওয়া বইছে আবাসন খাতে তখন এস্টোরিয়া এলাকায় ২ হাজার ৮৪৫ এপার্টমেন্টের একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদন দিতে গড়িমসি করছেন স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার জুলি উন। দুই বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে সবধরণের নাগরিক সুবিধা থাকবে বলে জানা গেছে। আর যারা এই এলাকার বাসিন্দা তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন এফোর্ডবল হাউজিং সুবিধা। যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে হবে অনেক সাশ্রয়ী।

জুলি উনের কারণে ঝুলে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় এলাকাবাসীও আগ্রহী। তারা মনে করেন এই হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গোটা এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। চাকুরির সংস্থান হবে পাঁচ সহস্র মানুষের। মৌলিক নাগরিক অধিকার বাসস্থানের পাশাপাশি নিশ্চিত হবে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নত সাংস্কৃতিক পরিবেশ। তারা মনে করেন আধুনিক নগরায়নের ক্ষেত্রে জেস্ট্রিফিকেশন’ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া ব্যাহত করার কোন সুযোগ নেই।

advertisement

Posted ১:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.