মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
আর মাত্র দশ দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুল কাক্সিক্ষত মধ্যবর্তী নির্বাচন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের পরাজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অতীতের ধারাবাহিকতা থেকে স্পষ্ট বলা যায় যে ডেমোক্রেটরা এবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে। হাউজের মোট ৪৩৫ আসনের মধ্যে বর্তমানে ডেমোক্রেটদের দখলে রয়েছে ২২২ আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য হাউজে যেকোনো দলের ২১৮ কংগ্রেসনাল আসন থাকতে হবে। সিনেটে মোট ১০০ আসনের মধ্যে বর্তমানে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা সমান।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সিনেটের চেয়ারম্যান এবং তিনি একটি ভোট দিতে পারেন। ভাইস প্রেসিডেন্টের একটি ভোট নিয়ে ডেমোক্রেটরা বর্তমানে সিনেটে সংখ্যঅগরিষ্ঠ দল। সব কটি পোলিং সংস্থার জরিপে ডেমোক্রেটরা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ১.৫ শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স সংস্থাটির সর্বশেষ জরিপে দেখা যায়, এই নির্বাচনে হাউজে রিপাবলিকানরা পেতে যাচ্ছে ২২৫ কংগ্রেসনাল আসন এবং ডেমোক্রেটরা জয়ী হতে যাচ্ছে মাত্র ১৭৫ আসনে। জরিপে বলা হয়েছে যে ৩৫ আসনে টস হতে যাচ্ছে, অর্থ্যাৎ এই আসনগুলোতে যে কেউ জয়ী হতে পারে। ডেমোক্রেটরা যদি এই ৩৫ আসনে সবগুলোতে জয়ী হয় তাহলেও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বহাল থাকবে না।
এবার সিনেটের মোট ৩৫ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেটে রিপাবলিকানরা মোট ৪৭টি আসনে জয়ী হবে। অন্যদিকে ডেমোক্রেটরা জয়ী হবে ৪৬ আসনে। মোট ৭টি সিনেট আসন হচ্ছে টস আপস বা ভাগ্য নির্ধারণী। এই ৭ সিনেট আসনের মধ্যে যে দল বেশি আসনের জয়লাভ করবে তারাই সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হবে। নিউইয়র্কে সিনেট নির্বাচনে সিনেটর চাক শ্যুমারের আসনে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিনেটর শ্যুমার তার আসনে জয়ী হবে তা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। ফাইভ থার্টিএইটের জরিপে সিনেটর চাক শ্যুমার তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জো পিনিয়নের চেয়ে ১২ শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন।
বর্তমানে ৫০ স্টেটের মধ্যে ২৮টি স্টেটে রিপাবলিকান গভর্নর রয়েছেন এবং ডেমোক্রেট গভর্নর রয়েছে ২২ স্টেটে। ৩৬টি স্টেটে এবার গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে নিউইয়র্ক স্টেটও আছে, যেখানে গভর্নর নির্বাচন হবে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী লী জেলদিনের চেয়ে তিনি এগিয়ে আছে ১২ শতাংশ পয়েন্টে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের বিপর্যয় ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রচারণায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু প্রেসিন্টে বাইডেনের জনপ্রিয়তাও ক্রমহ্রাসমান। ফাইভ থার্টিএইটের জরিপে দেখানো হয়েছে যে জো বাইডেনের জব অ্যাপ্রুভাল হচ্ছে ৪৩ শতাংশ এবং রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্সের জরিপে প্রেসিডেন্টের জব অ্যাপ্রুভাল দেখানো হয়েছে ৪২.৫ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিম্নমুখী জনপ্রিয়তা দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিজ দলের বিপর্যয় কতটুকু ঠেকাতে পারবেন সেটি এখন দেখার বিষয়।
শঙ্কায় হোয়াইট হাউস
আগামী মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের দুই কক্ষই ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এ আশঙ্কায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেনেটের যে আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কয়েক মাস আগের জরিপ অনুযায়ী সেখানে ডেমোক্র্যাটরা ভালো ব্যবধানে এগিয়ে আছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বিরক্ত ভোটারদের একটি বড় অংশ রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। বাইডেন ও তার অনেক সহযোগী এবং উপদেষ্টারা এই বছরের শুরুতে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। তবে, এখন এই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ফাইভ থার্টি এইটসহ একাধিক জনমত জরিপ বিশ্লেষক জানিয়েছেন।
কংগ্রেসের এক বা উভয় হাউসের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মানে হলো বাইডেন তার মেয়াদের শেষ দুই বছর তীব্র চাপের মধ্যে থাকবেন। তখন রিপাবলিকানরা পারিবারিক ছুটি, গর্ভপাত, পুলিশে সংস্কারসহ যেসব ইস্যুতে বাইডেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে চান সেগুলো আটকে দিতে পারবেন। পাশাপাশি তারা অভিবাসন ও ব্যয় কমানোর মতো আইন প্রণয়নে চাপ বাড়াতে পারবেন। রিপাবলিকানরা যদি কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় তাহলে তারা গণতান্ত্রিক প্রশাসনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় এবং প্রেসিডেন্টের ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক লেনদেন ও ব্যক্তিগত জীবনের তদন্ত শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা বাইডেন, মন্ত্রীসভার সদস্য ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কেমালা হ্যারিসকে অভিশংসনের আশায় বসে আছেন। তবে বাইডেন প্রশাসন এখনও সেনেট ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা। বাইডেন আশা করেন, সুইং ভোটাররা আবারো ৮ নভেম্বরের আগে ডেমোক্র্যাটদের দিকে ফিরে যাবে। হোয়াইট হাউসও প্রকাশ্যে এই আশার বার্তা প্রকাশ করছে।
Posted ১:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh