মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মহামারিকালে কমিউনিটিতে অনুষ্ঠানের হিড়িক

বিশেষ প্রতিবেদন :   |   বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

মহামারিকালে কমিউনিটিতে অনুষ্ঠানের হিড়িক

মহামারিকালে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হিড়িক পড়েছে আনন্দানুষ্ঠানের। করোনার নতুন ধরণ ওমক্রনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে অনুষ্ঠান আয়োজন। নতুন করে ছড়িয়ে পড়া উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না এক শ্রেণীর মানুষ। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সবচেয়ে মারাত্নক আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রে। কেড়ে নিয়েছে আট লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। আবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই মরণব্যাধির হট স্পট হয়ে উঠে নিউইয়র্ক সিটি। নগরী হিসেবে নিউইয়র্ক পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশী অভিবাসীর বসবাস নিউইয়র্কে। করোনাকালে নিউইয়র্ক সিটিতে মারা গেছেন প্রায় চার’শ বাংলাদেশী। কি দুর্বিষহই না ছিলো সে সময়টা। লাশের পর লাশ পড়ছে। চারদিকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। দাফন-কাফন করা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো মৃতদের পরিবার। যে যার ধর্ম মতে দোয়া দরূদ প্রার্থনা করছেন মহান সৃষ্টি কর্তার নিকট। সদ্্কা-মানতের পাশাপাশি করেছেন তওবা। প্রতিজ্ঞা করেছেন ভবিষ্যতে নূতন করে জীবন শুরু করার।

সময়ের ব্যবধানে করোনা সংক্রমনের প্রকোপ কমেছে। প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু হওয়ায় নিজ জীবন নিয়ে মানুষ হয়ে উঠেছেন আশাবাদী। নূতন স্বাভাবিকতায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জীবন-জীবিকা ও কর্মজীবী মানুষ। সংক্রমনের প্রকোপ কমলেও পৃথিবী থেকে একেবারে নিমূর্ল হয়নি করোনা ভাইরাস। ক’দিন পরপরই ভিন্নরূপে আর্বিভূত হচ্ছে। নূতন করে ভীতি ছড়াচ্ছে বিভিন্ন সমাজে ও দেশে দেশে। ফলে নূতন স্বাভাবিকতা হোঁচট খাচ্ছে বারবার। তাই স্বভাবত:ই অতি সাবধানে সন্তর্পনে চলছে জীবন যাত্রা। করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ রূপান্তর ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। মারাত্মক ভাইরাস ওমিক্রনের হদিস মিলেছে নিউইয়র্ক সিটিতেও। নিউইয়র্ক রাজ্যে নূতন করে জারি করা হয়েছে জরুরী অবস্থা। পরামর্শ দেয়া হয়েছে ভ্যাকসিন গ্রহণ, মাস্ক ব্যবহার ও জন সমাগম এড়িয়ে চলার। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠি প্রথম থেকেই এসবের বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশী আমেরিকানদের মাঝে করোনায় ভীতি ও উৎকন্ঠা ছিলো শুরু থেকেই। তারা স্বাস্থ্যবিধি ও মেনে চলেছেন সাধ্যমতো।


করোনা মহামারি পরবর্তী নূতন স্বাভাবিকতায় অন্যান্য কমিউনিটিতে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি লক্ষ্যণীয় হলেও বাংলাদেশী কমিউনিটির হাল হকিকত এখন ভিন্ন। নূতন স্বাভাবিকতায় নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে একধরণের অস্বাভাবিক উপসর্গ। চারদিকে ধূম পড়েছে নানাবিধ আনন্দ অনুষ্ঠানের। অনেক বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠান করোনার জন্য স্থগিত করা হয়। নূতন স্বাভাবিকতার সুযোগে এসব অনুষ্ঠানাদি চলছে। তবে অনুষ্ঠানের কলেবর কমিয়ে দিয়েছে অনেক পরিবার। সামাজিক এসব অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছে মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন ও সমালোচনা ঝড় বইছে হিড়িক পড়া আনন্দানুষ্ঠান নিয়ে। বাংলাদেশী কমিউনিটির একশ্রেনীর মানুষ নিউইয়র্ক সিটিকে পরিণত করতে যাচ্ছেন আনন্দ নগরীতে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তারা বেমালুম ভুলে গেছেন করোনাকলের কথা। সপ্তাহে সাতদিনই লেগে আছে কোন না কোন অনুষ্ঠান। সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠানের কোন হিসেব নেই। নানা উছিলায় আয়োজন চলছে অনুষ্ঠানাদির। যারা আগে জ্যাকসন হাইটসের বেইসমেন্টের পার্টি হলে অনুষ্ঠান করতো তারা এখন ভীড় করছে ফাইভ স্টার হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে। করোনা মহামারীর পূর্বে এক বছরে যত অনুষ্ঠান হয়েছে সম্প্রতি কয়েক মাসেই তার চেয়ে অনেক বেশী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে কমিউনিটিতে। যেসব বাহারি অনুষ্ঠান আগে কেউ কখনো দেখেনি। একক শিল্পী, দ্বৈতী শিল্পী এবং কোরাস সঙ্গীতের সুরে শ্রোতাদের কান ঝালাপালা! সুস্থ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিনোদন অবশ্যই প্রয়োজন। যা হতে পারে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ্য।

যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে নিউইয়র্কে এখন বাংলাদেশী আদলে আয়োজন চলছে কথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বাংলাদেশে সাধারণত শীতকালে গান-বাজনা, নাটক-থিয়েটার, যাত্রা পালা, সার্কাস ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। শীত প্রধান দেশ আমেরিকায় এসব অনুষ্ঠানের জন্য উত্তম সময় গ্রীষ্মকাল। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও সেভাবে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এবছর অনুষ্ঠিত হলো শীতকালীন ফোবানা। লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করে ওয়াশিংটনে আয়োজিত ফোবানা ছিল অনিয়ম বিশৃংখলায় ভরপুর। এই অনুষ্ঠানের অন্তরালে আদম ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। দেশ থেকে বড় ধরণের শিল্পীর চালান এনে সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেল তাদেরকে পুরস্কৃত করলো নিউইয়র্কে।


অতি নিম্নমানের এ অনুষ্ঠান নিয়ে কমিউনিটিতে সমালোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ওমিক্রণ সংক্রমনের সতর্কাবস্থার মাঝেই অনুষ্ঠিত হলো ঢালিউড এওয়ার্ড অনুষ্ঠান। বলা বাহুল্য এসব অনুষ্ঠানে ডজন ডজন এওয়ার্ড বিতরণ করা ছাড়া সাংস্কৃতিক কোন বিনোদন ছিলো না। এক শ্রেনীর মানুষ এওয়ার্ড লেনদেন করে ফেইসবুকের দেয়ালে ছবি সেটে নিজেরা ধন্য হয়েছেন। আয়োজকগণ হয়েছেন লাভবান। এসব ছাড়াও ইদানিং রাতারাতি গড়ে উঠা অনেক ভ্ূঁইফোর সংগঠন আয়োজন করে চলেছে অনুষ্ঠানাদি। প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য তারা শরনাপন্ন হচ্ছেন পৃষ্ঠপোষকদের। কমিউনিটির অনেক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে চাঁদা আদায় করে এসব অনুষ্ঠান আয়োজন করে আনন্দ উপভোগ করছেন আয়োজকগণ। নানা কারণেই নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটি এখন বহুধা বিভক্ত। তিন শতাধিক সংগঠনের ভারবাহী কমিউনিটিতে আনন্দানুষ্ঠানের পাশাপাশি চলছে মামলা-মোকদ্দমা। পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ। বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে মামলার কারণে। মুক্তধারার বিরুদ্ধেও মামলার সংবাদ চাউর আছে কমিউনিটিতে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচালনা কমিটি সহ অন্যান্য অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা চলছে।

তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশী অভিবাসীর নগরী নিউইয়র্কে তিনহাজার মানুষ হয়ত বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে জড়িত। বাকিরা ব্যস্ত তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে। তবে কালে ভদ্রে তাদের কেউ কেউ কোন কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিশেষ করে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোতে। কমিউনিটিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশেষ করে সীরাতুন্নবী, মিলাদুন্নবী (সাঃ) ও অন্যান্য ওয়াজ মাহফিলে অংশ নেন অনেক ধর্মপ্রাণ প্রবাসী। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে দর্শক শ্রোতার সংখ্যা সীমিত। ঘুরে ফিরে সব অনুষ্ঠানে চিহ্নিত একটি শ্রেনীকে দেখা যায় দর্শক সারিতে। সম্প্রতি কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে নতূন আরেক বাতিক জন্মদিন উৎসব আয়োজনের। এসব নিয়ে মেতে আছেন অনেকে। টাকা কড়ি সংগ্রহ করেই এসব আয়োজন করছেন তারা। আবার অনেক সংগঠনে দেখা যাচ্ছে যারা জীবনে কখনো নাচ-গানের চর্চা করেননি তারাও নাচ-গান করে ভিডিও ছাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিজ বাড়ি-গাড়ি ও খানাপিনার ছবি পোষ্ট করে নিজেদের অর্থবিত্তের জানান দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এসব অনুষ্ঠানাদি ও চাঁদাবাজি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করে এসব অনুষ্ঠান আয়োজননের স্বার্থকতাই বা কোথায়। নূতন প্রজন্মের দোহাই দিলেও ব্যয়-বহুল এসব অনুষ্ঠানে তাদের কোন অংশগ্রহণ নেই।


সাংবাদিকরা অনেক সময় সত্য চেপে যাচ্ছেন এওয়ার্ড হাতে পেয়ে। ফলে কমিউনিটির ভবিষ্যত নিয়ে একধরণের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে বিবেকবানদের মাঝে। কমিউনিটিতে এখনও অনেকে প্রতিকূলতার মাঝে দিন কাটাচ্ছে। করোনা মহামারীতে মৃত অনেক প্রবাসী পরিবারে এখনও চলছে চাপা কান্না। এছাড়াও নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশী কমিউনিটি। তাদেরকে দেখার কেউ নেই। নূতন স্বাভাবিকতায় অস্বাভাবিক উপসর্গ নিয়ে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। করোনা মহামারীতে গোটা পৃথিবীই বদলে গেছে। বদলায়নি শুধু প্রবাসী বাঙালীর মন মানসিকতা। কলকাতার ‘আনন্দ আশ্রম’ সিনেমার নায়ককে দেখেছিলাম দীর্ঘদিন পর কারাগার থেকে বেড়িয়ে গান ধরতে “পৃথিবী বদলে গেছে যা দেখি নূতন লাগে। তুমি আমি একই দু’জনে যা ছিলাম আগে।”

advertisement

Posted ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.