আমেরিকা (চ্যানেল টিটি) : | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
বিশ্বজুড়ে আলোচিত সমালোচিত ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সব শেষ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকেই অভিবাসন বিরোধী নানা কর্মকান্ড অব্যাহত রেখে চলেছেন তিনি।
কখনো মুসলিম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা; কখনো আবার অভিবাসন আইনে নানা পরিবর্তন। সবশেষ মরণব্যাধি করোনা মহামারির অজুহাত দেখিয়ে আমেরিকার অভিবাসন প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিবর্তন আনেন ‘ইউএসসিআইএস’ তথা ইমিগ্রেশন সার্ভিস বিভাগে। ট্রাম্পের অভিবাসি বিরোধী নীতির নতুন এ খেলায় দিশেহারা অনেকে। আতঙ্কের মধ্যে আছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। চ্যানেল টিটির সাথে আলাপকালে একাধিক বাংলাদেশি তাদের আগামির আশঙ্কার কথা জানান দেন। যাদের মধ্যে অনেকেই ইউএস সিটিজেন।
নুশরাত ফারাহ নামক এক বাংলাদেশি বলেন, “আমি এদেশের সিটিজেন দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি আমার বাবা-মায়ের কেইস অনুমোদন পেয়েছে। ন্যাশনাল ভিসা সেন্টার থেকে তাদের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু হঠাৎই করোনার অজুহাতে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করেন। বন্ধ হয়ে যায় আমার বাবা-মায়ের এদেশে আসা প্রক্রিয়া।”
কেবল নুশরাত ফারাহই নন; এরকম অসংখ্য বাংলাদেশির সাথে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির অভিবাসিও রয়েছেন। যাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে এখন স্বামীর পক্ষে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর পক্ষে স্বামী; সন্তান ও বাবা-মা উভয়ে নতুন সঙ্কটের মুখে। তারা আদৌ জানেন না কবে শেষ হবে ট্রাম্পের বিধি-নিষেধ।
অভিবাসন সংশ্লিষ্ট (আইনজীবী) (এটর্নীদের মেত- “ট্রাম্প প্রশাসন প্রচলিত ইমিগ্রেশন আইন করে অভিবাসন বন্ধ করতে পারছেন না। তাই তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য অর্জনের একরোখা পথেই হাটছেন। গেল এপ্রিল মাসে করোনা মহামারির শুরুতেই প্রথম দফায় ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখনই আশঙ্কা করা হয়েছিল তাঁর এ উদ্যোগ সাময়িক নয়। অনেক দীর্ঘ পথেই চলবেন তিনি। এরপর গেল জুন মাসে আরেকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন তিনি। যেখানে চলতি বছরের জন্য তিনি আমেরিকায় অভিবাসীদের প্রবেশে আবারো বন্ধ করে দেন।”
আইনজীবীরা বলছেন, সম্প্রতি করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রিত। এরপরও সহজে যাচ্ছে না ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার অর্থনীতি এখন তলানিতে। এ নাজুকতাও আরো দীর্ঘায়িত হবে।” যোগ করেন বিশ্লেষকরা।
অবস্থা এমন করোনাকালে নাগরিকদের বেকারভাতা তথা কেন্দ্রীয় সরকার তরফে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে জুলাইর শেষ সপ্তাহে। এমনিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের পথে। বিপাকে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসি। তার মধ্যে আবার ইমিগ্রেশন বিরোধি অবস্থান। সব মিলিয়ে স্বপ্নের আমেরিকা এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কারো কারো জন্য!
প্রশ্ন উঠেছে- উদ্ভূত পরিস্থিতিকে মোকাবেলায় কেবল ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধই কি ট্রাম্পের অন্যতম কাজ? এমন অজুহাতে তিনি ও তার প্রশাসন চলমান নিষেধাজ্ঞা আরো সম্প্রসারণ করবেন। আশঙ্কা করছেন অভিবাসন নির্ভর আইনজ্ঞরা।
এছাড়া আগামি নভেম্বরে পুনর্র্নিবাচন নিয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ট্রাম্প এখন বেকায়দায় আছেন। তাঁর সমর্থকদের কাছে অভিবাসন বিরোধিতা খুবই জনপ্রিয়। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটা অংশ মনে করে, আমেরিকা ক্রমেই অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিশ্রমী অভিবাসিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা তাঁদের জন্য এখন জোরালো হয়ে উঠেছে। এসব গোড়া সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরেক দফা অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা বাড়াবেন নির্বাচনের আগেই, এমন মনে করা হচ্ছে।
যদিও পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে মেধাভিত্তিক অভিবাসন চালু করার কথা ট্রাম্প এখন সুযোগ পেলেই বলছেন। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের চেষ্টা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প নানা অজুহাতে তাঁর নির্বাহী আদেশকে কাজে লাগাচ্ছেন। আমেরিকার কর্মজীবীদের চাকরির সুবিধা দেওয়ার জন্য কর্মী ভিসাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। গেল মাসে জারি করা নির্বাহী আদেশে অধিকাংশ কর্মী ভিসা প্রদানও সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মী ভিসায় আসা লোকজনের পরিবারের ভিসা প্রদানও বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে বিষয়টিকে জটিল করার পথেই হাটছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
অভিবাসন আইনজীবীদের মতে- সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়ে প্রেসিডেন্ট অনেক অভিবাসিকে আমেরিকায় প্রবেশের পথ আটকে দিয়েছেন। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পারিবারিক নির্ভর অভিবাসিরা। এদেশে বসবাসকারি অনেকে অভিবাসি তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
পরিসংখ্যান বলছে- প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার পারিবারিক অভিবাসন ভিসা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি করোনাকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশ সে পথ অনেতই সংকোচিত করে ফেলেছেন। আর এতে বেজায় খুশি কট্টর শ্বেতাঙ্গদের একাংশ। এখন দেখার বিষয় আগামি নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের অবস্থান কোথায় গিয়ে পৌঁছায়!! সে দিকেই তাকিয়ে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা।
Posted ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh