বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক মর্যাদা ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় গত ১ জুলাই পুরস্কারজয়ী হিসেবে ইরাক যুদ্ধে নিহত সেনার বাবা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত খিজির খানসহ ১৭ জনের নাম ঘোষণা করেন তিনি। এর মধ্যে তিনজন পেয়েছেন মরণোত্তর পুরস্কার। ৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। গত ১ জুলাই হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম হলো দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক মর্যাদা। যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি, মূল্যবোধ কিংবা নিরাপত্তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখেন; বিশ্ব শান্তি কিংবা অন্য তাৎপর্যপূর্ণ সামাজিক, সরকারি বা বেসরকারি প্রচেষ্টায় অবদান রাখেন তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।’ সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির অধীন ‘দ্য প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ পুরস্কার চালু করা হয়। এ বছরের পুরস্কারজয়ীরা হলেন-
খিজির খান : ২০১৬ সালে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দিয়ে খিজির খান সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তাঁর ছেলে সেনাসদস্য হুমায়ুন খান ইরাক যুদ্ধে নিহত হন। খিজির খান সে কথা উল্লেখ করে ট্রাম্পের প্রতি উপহাস করে বলেছিলেন, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি তুলে এই রিপাবলিকান প্রার্থী একজন মার্কিন সৈনিকের আত্মত্যাগের প্রতি অপমান করেছেন। খিজির খানের বক্তব্যের জন্য তাঁর তুমুল সমালোচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সিমোন বাইলেস : অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন সিমোন বাইলেস অ্যাথলেটদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গত বছর ক্যাপিটল হিলে তিনি মার্কিন ব্যায়ামাগারের চিকিৎসক ল্যারি নাসার সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। শত শত নারীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ল্যারি নাসার।
সিস্টার সিমোন ক্যাম্পবেল : সিস্টারস অব সোশ্যাল সার্ভিসের সদস্য সিস্টার সিমোন ক্যাম্পবেল অভিবাসন আইন সংস্কার ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।
জুলিয়েটা গার্ক এ : ব্রাউন্সভিলের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. জুলিয়েটা গার্ক এ-ও পুরস্কার পেয়েছেন।
গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডস : প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডস। বন্দুক সহিংসতায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া এ ব্যক্তি বন্দুক সহিংসতায় নিজেকে নিবেদিত করেন।
ফ্রেড গ্রে : ফ্রেড গ্রেকে বর্ণবাদের ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইকারী শীর্ষ আইনজীবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
স্টিভ জবস (মরণোত্তর) : বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস সম্পর্কে হোয়াইট হাউস লিখেছে, বিশ্বের যোগাযোগ পদ্ধতিতে রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে স্টিভ জবস মারা যান।
ফাদার আলেক্সান্ডার কার্লুটসোস : গ্রিক অর্থোডক্স আর্চডাওচিস অব আমেরিকার আর্চবিশপের সাবেক সহকারী ফাদার আলেক্সান্ডার কার্লুটসোস বেশ কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিতেন।
স্যান্ড্রা লিন্ডসে : স্যান্ড্রা লিন্ডসে নিউইয়র্কের নার্স। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় তিনি ছিলেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা।
জন ম্যাককেইন (মরণোত্তর) : সাবেক সিনেটর জন ম্যাককেইন ভিয়েতনামে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে একটি গোল্ড স্টার অর্জন করেছিলেন। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের রাজনীতিবিদেরাই তাঁকে সম্মান করতেন।
ডিয়ানে নাশ : গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আয়োজন করতেন ডিয়ানে নাশ।
মেগান রাপিনোয়ে : হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, অলিম্পিক সসার তারকা মেগান রাপিনোয়ে নারী-পুরুষ সম-মজুরি নিশ্চিত করা এবং সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করেন।
অ্যালান সিম্পসন : ওয়াইয়োমিং অঙ্গরাজ্যের সাবেক সিনেটর অ্যালান সিম্পসন সুশাসন ও বৈবাহিক সমতার পক্ষে কাজ করেন।
রিচার্ড ট্রামকা (মরণোত্তর) : এক দশকের বেশি সময় ধরে শ্রমিক সংগঠনের জোট এএফএল-সিআইওকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রিচার্ড ট্রামকা। গত বছর মারা যান তিনি।
উইলমা ভাট : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইলমা ভাট মার্কিন সেনাবাহিনীতে নারীদের জন্য থাকা প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে যে সাতজন নারী জেনারেল ছিলেন, তাঁদের একজন তিনি। ১৯৮৫ সালে তিনি অবসরে যান।
ড্যানেজেল ওয়াশিংটন : প্রখ্যাত অভিনেতা ড্যানেজেল ওয়াশিংটন ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে বয়েজ অ্যান্ড গার্লস ক্লাবস অব আমেরিকার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
আরএ আই ইজঅ্যাগুয়ার : আরএ আই ইজঅ্যাগুয়ার হলেন ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে নিয়োজিত দূত যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীন কাজ করেছেন।
স্বাধীনতার ২৪৬তম বার্ষিকীতে উৎসবমুখর পরিবেশ : এ্রদিকে স্বাধীনতার ২৪৬তম বার্ষিকী উদযাপনে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। প্রতি বছর ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। ১৭৭৬ সালের এই দিনে ১৩টি উপনিবেশের কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন করে। করোনার কারণে গত দুই বছর উদযাপন সীমিত হলেও এবার উৎসবে প্রাণ ফিরেছে। দিনটি উদযাপনে আতশবাজি, কুচকাওয়াজ, কনসার্ট বা কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে বলা হয়েছে, গত ৪ জুলাই (যুক্তরাষ্ট্রের সময়) দুপুরের পর হোয়াইট হাউজের সাউথ লনে সেনা পরিবারের জন্য বারবিকিউ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। পরে তারা ন্যাশনাল মলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আতশবাজির উৎসবে যোগ দেন।
টাইম ম্যাগাজিনের এক খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস এমন সময়ে এসেছে যখন দেশটিতে এক ধরনের উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গা নিয়ে এখন কংগ্রেসের কমিটিতে শুনানি চলছে। মাত্র কয়েক দিন আগে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট নারীর গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করেছে। প্রায়ই দেশটিতে বন্দুক হামলায় নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং জাতি হিসেবে মার্কিনিরা অভিন্ন বন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছে। তার পরও অনেক মার্কিনির কাছে দিবসটি উদযাপনের কারণ রয়েছে। তারা বলছেন, করোনা মহামারি দুর্বল হয়ে আসছে এবং রাজনৈতিক কলহের পরও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র টিকে রয়েছে।
Posted ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh