মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত ৫ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যঅ ছিল ৭২৪,৮৩৮। গত ১ অক্টোবর শুক্রবার এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৭ লাখ অতিক্রম করার পর এলার্জি ও সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা: অ্যান্থনি ফাউচি সিএনএন এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ৭ লাখ লোকের প্রাণহানির ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে ও আমাদের বিবেককে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছে।
শুক্রবারের পর মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিনে আরো ২২,৪৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসোসিয়েটেড প্রেস তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, যে হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনো মারা যাচ্ছে তাতে বলা যায় না যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ২০২০ সালে মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা শুরু হওয়ার পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪,৭৮৬,২৫৮ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছে ৩৪,২৮২,১২১ জন এবং মারা গেছে ৭২৪,৮৩৮ জন।
গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা শুরু হলে সেন্টারর্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিল যে আগামী এক বছরে অর্থ্যাৎ ২০২০ এর মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পরে। কিন্তু বাস্তবে মারা গেছে তার ধারণার ৭ গুণের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়, যেখানে মোট মৃত ৬৯,৫৭৪ জন। দ্বিতীয় অবস্থান টেক্সাসের, যেখানে মৃত ৬৬,৩৬৭, তৃতীয় অবস্থান ফ্লোরিডার, যেখানে মারা গেছে ৫৫,৬১৯ জন এবং চতুর্থ অবস্থান নিউইয়র্কের, যেখানে মারা গেছে ৫৫,০৫২ জন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে কম মানুষ মারা গেছে ভারমন্ট স্টেটে, যেখানে মৃত মাত্র ৩২১ জন। হাওয়াইয়ে ৮০৮ জন এবং ওয়েমিং য়ে ৯৯৬ জন। সিডিসির মতে হত দুই সপ্তাহ যাবত দৈনিক গড় মৃত্যু হার ২,০০০ জনের অধিক ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এখনো কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হয়েছে। তবে এখ নপর্যন্ত মাত্র ৫৬ শতাংশ আমেরিকান দুই ডোজ বা পূর্ণ ভ্যাকসিন নিয়েছে এবং ৬৫ শতাংশ আমেরিকান এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এক কোটির অধিক আমেরিকান ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকার করেছেন।
পয়ষট্টি বছরের উর্ধে বয়স্কদের ভ্যাকসিনের বুষ্টার ডোজ দেয়া শুরু হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুষ্টার ডোজ নিয়েছেন। বুষ্টার ডোজ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা দ্বিধাবিভক্ত। তাদের অনেকে বুষ্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা বা যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন বিশ্বের বহু দেশ যেখানে ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত, সেক্ষেত্রে বুষ্টার ডোজ দেয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা।
খাওয়ার ওষুধ অনুমোদনের আবেদন শিগগিরই : করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় টিকা ব্যবহারের মুখে খাওয়ার বড়ির পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ পর্যায়ে। ‘মলনুপিরাভির’ নামের ওষুধটির প্রস্তুতকারক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘মার্ক’। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ব্যবহারের জন্য আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশটির খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে আবেদন করবে তারা। ওষুধটি করোনা সংক্রমিত রোগীর মৃত্যুঝুঁকির পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম।
এফডিএর অনুমোদন পেলে ‘মলনুপিরাভির’ করোনা চিকিৎসায় প্রথম অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের স্বীকৃতি পাবে। প্রথম দিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা চিকিৎসার জন্য এটি তৈরি করা হচ্ছিল। পরে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতা রয়েছে। উল্লেখ্য, আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও সুইস প্রতিষ্ঠান রোচ মুখে খাওয়ার অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ উদ্ভাবনের কাজ করছে। বর্তমানে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর অবস্থা মোটামুটি স্বস্তির। ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকোয় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে। গত সপ্তাহের প্রতিদিন গড়ে ৭৯ লাখ টিকা দিয়েছে ভারত। সেখানে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা এখন মাত্র ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ব্রাজিলেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর গতি নিম্নমুখী। তবে রাশিয়ার পরিস্থিতি শুক্রবারের আগের চার দিনে একটু উদ্বেগজনক। সেখানে শুক্রবারের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮৮৭ জন। শুক্রবারের আগের চার দিনে সংখ্যাটি ক্রমেই বেড়েছে।
বিশ্বে করোনায় প্রাণহানি ৫০ লাখ ছাড়াল : বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবের ভিত্তিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য দিয়েছে। অন্যান্য বৈশ্বিক পরিসংখ্যানগুলোতেও মৃত্যুর সংখ্যা এর কাছাকাছি। রয়টার্স জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর এক বছরে মৃত্যু হয়েছিল ২৫ লাখ মানুষের। অথচ পরের ২৫ লাখের মৃত্যু হলো মাত্র আট মাসের মাথায়। গত সাত দিনে গোটা বিশ্বে মৃত্যুর অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও ভারতে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ, দেশগুলোর মধ্যকার টিকাবৈষম্য ও টিকা না নেওয়ার অনীহা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জানিয়েছে, তাদের ১৯৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৮৭টিতেই ডেল্টা সংস্করণ পাওয়া গেছে। করোনার কয়েক দফা ঢেউয়ের মধ্যে এ ধরনটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বিশ্বে। উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বে প্রতিদিন আট হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে এ মৃত্যুর হার পাঁচজন। গত ২ অক্টোবর ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে এখন সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা সাড়ে ২৩ কোটির ওপরে। আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছে ২১ কোটিরও বেশি মানুষ। গত ১ অক্টোবর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চার লাখ ৭৫ হাজারের ওপরে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস এই বিপুল প্রাণহানি ঘটিয়েছে। চীনের উহান শহর থেকে ভাইরাসটি প্রায় দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের সব প্রান্তেই পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ শতাংশ প্রাণহানি ঘটিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। এর পরই উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ১৪ শতাংশের বেশি মৃত্যু ঘটিয়েছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মৃত্যুহার ও সংক্রমণ হার নিম্নমুখী। টিকাদান কার্যক্রম ও ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা কমায় এ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। রয়টার্সের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের ৪৫.৫ শতাংশ মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষও এখন পর্যন্ত টিকার আওতায় আসেনি। অভিযোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলো টিকা গ্রহণের একচেটিয়া মনোভাব দেখানোর পাশাপাশি মজুদও করেছে। অনেকে বুস্টার ডোজ দিচ্ছে। অথচ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো টিকার জন্য হাহাকার করছে।
আফ্রিকায় মাত্র ২ শতাংশ বা তারও কম মানুষ টিকা পেয়েছেন। উন্নত বিশ্বের বাইরে কোনো দেশই টিকা কার্যক্রম আশানুরূপ জায়গায় নিতে পারেনি। ডাব্লিউএইচও চলতি সপ্তাহে জানিয়েছে, কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় যেসব দেশ তুলনামূলক কম টিকা পেয়েছে, তাদের বেশি পরিমাণে টিকা সরবরাহ করা হবে। জনসংখ্যা অনুপাতে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৪০টি দেশে কোভ্যাক্স টিকা পাঠিয়েছে।
Posted ২:৩১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh