বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে রোগী ও মৃতের সংখ্যা। গত রোববার সমাপ্ত এক সপ্তাহে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সংখ্যার দৈনিক গড় ছিল ১৬১,২০০ এবং একই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১,৫৬০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছে। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০২,০০০ জনের বেশি ভর্তি হচ্ছে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে। নিউইয়র্ক টাইসসের ডাটাবেজ অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে এ যাবত যুক্তরাষ্ট্রে চার কোটির অধিক লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্টেট ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যার চেয়ে অধিক। সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বে আমেরিকার অবস্থান পঞ্চম। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সপ্তাহ পর্যন্ত সমাপ্ত ১৮ মাসে সমগ্র বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে ২২ কোটি ১০ লাখ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর তথা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কয়েকটি পরিসংখ্যান। তবে টিকা প্রদানের মাধ্যমে সম্ভাব্য এ মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন এক ধারণাপত্রে দেখিয়েছে, কভিড-১৯ সংক্রমণের চলমান হার অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে।
এবারের ফোর্থ জুলাইয়ের আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন যে, তিনি আশা করেন যে “এবার সামার হবে স্বাধীনতার”। কিন্তু তা হয়নি, বরং এবারের সামারেও ভাইরাস প্রবল প্রতাপে বিস্তার লাভ করেছে। ভ্যাকসিন নেয়া লোকজনও আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক স্টেটের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ খালি পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে হিসসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে ভ্যাকসিন গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা রোগ গুরুতর পর্যায়ে চলে যাওয়া ও মৃত্যু রোধ করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যৗল্প ৪৭ শতাংশ আমেরিকানের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়নি, অথবা মাত্র এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছে। ফলে ভ্যাকসিন না নেওয়া লোকের মধ্যে ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রম বেশি হচ্ছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী যারা ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ৯৯ শতাংশই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন যে, যেসব করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের সিংহভাই ভ্যাকসিন নেননি এবং এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বিপুল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনস (সিডিসি) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ ভ্যাকসিন নিযেছে এবং দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছে ৫৩ শতাংশ। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী এখ নপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোন স্টেটেই ৭০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহন করেনি। সিডিসি সূত্র জানায় যে ভ্যাকসিন উৎপাদন ও সফল পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না, ফাইজার ও জনসন এন্ড জনসনের ৪০ কোটি ডোজের বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে, যার মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কোটি ডোজ বা ৮৩ শতাংশ ডোজ ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছে। সামারে ভ্যাকসিন নেয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ধারণা করলেও এখনো তা গত বসন্তে ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রে যে গতি সঞ্চারিত হয়েছে, তার চেয়ে ভ্যাকসিন নেয়ার হার অনেক কমে গেছে।
দেশে দেশে লকডাউন, বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিধি পালন ও গণ টিকাদান সত্ত্বেও করোনার দাপট খুব একটা কমেনি। বিশেষ করে ভাইরাসের ভারতীয় ধরন ডেল্টা নিয়ে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। শিগগিরই করোনার নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা করছে কোনো কোনো দেশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে শনাক্ত হওয়া কভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুর ৪৬ লাখ পেরিয়েছে। যদিও কোনো কোনো হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। গত ২৮ আগস্ট ৪৫ লাখের ঘর পার হয় মৃতের সংখ্যা। অর্থাৎ, দশ দিনে মারা গেছে আরও লাখ খানেক মানুষ।পরিসংখ্যান ভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জানায়, এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৮৯ জন মানুষ। মারা গেছে ৪৬ লাখ ৬৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ কোটি ৯২ লাখ ৯৭ হাজার ২৪৮ জন।
আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত্যুতেও দেশটি এক নম্বরে। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ জন। মারা গেছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ২২ জন। ৩ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫০ জন শনাক্তের হিসাব নিয়ে সংক্রমণে দ্বিতীয় ভারত। দেশটিতে মারা গেছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৩ জন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে ২ কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ২০৮ জন মানুষ, যা মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয়। আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় তালিকায় চতুর্থ স্থানে ওঠে এসেছে যুক্তরাজ্য। দেশটিকে শনাক্ত ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৬ জন ও মারা গেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৩ জন। এরপর থাকা রাশিয়ায় ৭০ লাখ ৪৭ হাজার ৮৮০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৫ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তালিকায় আক্রান্তের হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান ২৮। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফে জানানো হয়, করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৬ জন মারা গেছে। এ নিয়ে মোট মারা গেছে ২৬ হাজার ৬৮৪ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৬৩৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৮০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
Posted ৬:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh