বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
টেনেসি অঙ্গরাজ্যের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অড্রি হেল (২৮) নামে এক তরুণীর এলোপাতাড়ি গুলিতে তিন শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। পরে পুলিশের গুলিতে ওই তরুণীও প্রাণ হারান। হামলাকারী ওই তরুণী এ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। স্থানীয় সময় গত ২৭ মার্চ সকাল সোয়া ১০টার দিকে টেনেসি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ন্যাশভিলের দ্য কভেন্যান্ট স্কুলে হামলা চালায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্কুলটি একটি প্রাইভেট খ্রিস্টান স্কুল। যেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো। স্কুলটিতে ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিল, যাদের বয়স ১১-১২ বছরের মধ্যে। বন্দুক হামলায় নিহতরা হলো- অ্যাভলিন ডিক হাউস (৯), হ্যালি স্ক্রাগস (৯), উইলিয়াম কিনি (৯), সিনথিয়া পিক (৬১), ক্যাথরিন কুইন্স (৬০) ও মাইক হিল (৬১)। পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকধারী ওই তরুণীর কাছে দুটি অ্যাসল্ট-টাইপ রাইফেল ও একটি পিস্তল ছিল। গত ২৭ মার্চ সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে গুলির সংবাদ পায় পুলিশ। ওই তরুণী স্কুলে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে ওই নারী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রে নারীর এমন গুলি চালানোর ঘটনা বিরল। ওই তরুণী কীভাবে স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করেছিল তা এখনো জানা যায়নি। বন্দুক হামলার ঘটনা ১৪ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘটনাকে ‘পরিবারের সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বন্দুক সহিংসতা বন্ধ করতে আমাদের আরও কিছু করতে হবে।
৭টি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন অড্রে, তিনটি দিয়ে গুলি করেন
২৮ বছর বয়সী অড্রে হালে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র বৈধভাবে কিনেছিলেন। এর মধ্যে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র তিনি হামলায় ব্যবহার করেন। স্থানীয় সময় গত ২৭ মার্চ সকালে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের নাশভিল শহরের কোভনেন্ট স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালান অড্রে। এতে তিন শিশুসহ অন্তত ছয়জন নিহত হন। পরে পুলিশের গুলিতে অড্রেও নিহত হন। নাশভিল পুলিশ বিভাগের প্রধান জন ড্রেক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় পাঁচটি দোকান থেকে অস্ত্রগুলো কেনা হয়েছিল। বৈধভাবেই অস্ত্রগুলো কেনা হয়। অড্রে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিতেন। অবশ্য পুলিশ তাঁকে বারবার নারী বলে সম্বোধন করে আসছিল।
জন ড্রেক বলেন, অড্রে একটি মানসিক ব্যাধির জন্য একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে কিছুই জানেন না আইন কর্মকর্তারা। জন ড্রেক জানান, অস্ত্রগুলো বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন অড্রে। তাঁর মা-বাবা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। অড্রের হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুলিশ এখনো সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি। পুলিশ কর্মকর্তা জন ড্রেক বলেন, হামলার সময় কোনো শিক্ষার্থীকে সুনির্দিষ্টভাবে খোঁজ করেননি অড্রে। তিনি নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর ব্যাপারে অড্রের কিছু প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন পুলিশ কর্মকর্তা জন ড্রেক।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই কমপক্ষে ১২৯টি বন্দুক হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনলাইনে বন্দুক সহিংসতা তথ্য সরবারাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্য গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ (জিভিএ) থেকে এ তথ্য জানা যায়। জিভিএ অনুসারে, গত বছরের ১৯ মার্চ একদিনেই একশ বন্দুক হামলা চালানো হয়েছিল। এর আগে ২০২১ সালেও মার্চের শেষ দিনে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় গত ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে টেনিসি রাজ্যের নাশভিলের এক বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলে বন্দুক হামলার পর এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সিএনএন। এতে তিন শিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্কসহ নিহত হয়েছে ৬ জন। স্কুলেরই সাবেক ছাত্র অড্রে হালে বন্দুক হামলাটি চালায়। প্রায় ১৪ মিনিটব্যাপী সাবেক এই ছাত্রের ‘কিলিং মিশনে’ নিহত হয় মোট ছয়জন। তাদের মধ্যে রয়েছে তিন প্রাপ্তবয়স্ক ও তিন শিশু। মেট্রোপলিটন নাশভিল পুলিশের দুই মিনিটের একটি নজরদারি ভিডিওতে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে হলওয়ে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সে সময় তার হাতে ছিল তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র। গত ২৮ মার্চ এই ফুটেজটি প্রকাশ করেছে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশের মুখপাত্র ডন অ্যারন এদিন বলেন, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৩ মিনিটে কভনেন্ট স্কুলে বন্দুকধারীর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পৌঁছানো পাঁচজন পুলিশ অফিসার স্কুলটির দ্বিতীয়তলা থেকেও গুলির শব্দ শুনতে পান। পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুলিশের গাড়ির ওপরও হামলা চালিয়েছিল সেই বন্দুকধারী। এরপর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে দুজন পুলিশ অফিসারের গুলিতে সেই বন্দুকধারী নিহত হয়। বন্দুকধারী নিহত হওয়ার পর শিশুদের স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, হালের কাছে তিনটি বন্দুক ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল সেমি অটোমেটিক রাইফেল। পুলিশের তালিকায় হালের নামে অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই। পুলিশের ধারণা, আগের ‘ক্ষোভ’ থেকে হালে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু কাগজ উদ্ধার করেছে। সেখানে স্কুলের প্রবেশ, বের হওয়ার পথগুলোসহ স্কুলটির বিস্তারিত ম্যাপ ছিল। পুলিশ এখন এসব খতিয়ে দেখছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হালে বন্দুক দিয়ে স্কুলে প্রবেশ দরজার কাচ ভেঙে প্রবেশ করেন। এরপর স্কুলের নির্জন করিডরে ঘুরে বেড়ান। একপর্যায়ে ‘শিশুদের মন্ত্রণালয়’ লেখা একটি ঘরের পাশ দিয়ে চলে যান। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, হালে নিজে সুরক্ষা বর্ম পরে এসেছিলেন। তার এক হাতে ছিল একটি রাইফেল। আর কোমরের বাঁ দিকে ঝুলছিল একই রাইফেল। ওপরের তলায় ওঠার আগে হালে নিচতলায় গুলি ছোড়েন। পুলিশের গাড়ি পৌঁছানোর পর হালে তাদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে। একটি গুলি এসে লাগে উইন্ডস্ক্রিনে। ভাঙা কাচের আঘাতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ দ্রুত ভেতরে ঢুকে হালেকে গুলি করে। হালের ঠিকানার সূত্র ধরে পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখানে তার বাবার সঙ্গে তারা কথা বলে। তার বাড়ি থেকে অনেকগুলো অস্ত্র পাওয়া গেছে। নাশভিল পুলিশের প্রধান জন ড্রেক বলেন, দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে, স্কুলের মানচিত্র এঁকে হামলা চালিয়েছিল ওই বন্দুকবাজ। এমনকি ধরা পড়লে আইনের সাহায্যে কীভাবে শাস্তি এড়ানো যায়, সে নিয়েও পড়াশোনা করে রেখেছিল। হামলার পর স্কুল ছেড়ে পালিয়ে যায় হালে। তবে বেশ কিছু কাগজপত্র ফেলে রাখে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে আরও বেশ কিছু জায়গায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে তার। প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। স্কুল থেকে শুরু করে ধর্মস্থান, বাদ পড়ছে না কিছু। বন্দুকসংক্রান্ত আইন পাশ হলেও থামছে না হামলার ঘটনা। সোমবারের ঘটনার পর মুখ খুলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা বিষয়টির দিকে কড়া নজর রাখছি। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের হৃদয় একেবারে ভেঙে গিয়েছে। কংগ্রেসের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন তারা।
বন্দুক আইন নিয়ে ফের সরব বাইডেন : ন্যাশভিলের স্কুলে বন্দুকধারীর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে পারেন তিনি। গত ২৭ মার্চ নর্থ ক্যারোলিনার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে বক্তৃতা করতে উঠে ন্যাশভিলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। বাইডেন জানান, ওই স্কুলে যা ঘটেছে, তা মর্মান্তিক। এরপরই আমেরিকার বন্দুক আইন নিয়ে সরব হন তিনি। বাইডেনের বক্তব্য, একমাত্র কংগ্রেসই এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসতে পারে এবং দেশকে বাঁচাতে পারে। এদিন বক্তৃতার সময় বাইডেন জানিয়েছেন, দুঃখজনক সত্য হলো, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় বন্দুকধারীর গুলিতে। গত কয়েক বছরে একের পর এক স্কুলে আক্রমণ হয়েছে এবং একের পর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ন্যাশভিল তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। এই মুহূর্তে এটা বন্ধ হওয়া দরকার।
একটি সমীক্ষা তুলে ধরে বাইডেন জানান, বলা হচ্ছে, প্রতি বছর গাড়ি দুর্ঘটনায় যত ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যু হয়, বন্দুকধারীর হামলায় তারচেয়ে অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়। এই তথ্য দিয়েই বাইডেন দুঃখপ্রকাশ করে জানান, চোখের সামনে এই তথ্য থাকা সত্ত্বেও তার হাত-পা বাঁধা। অস্ত্র আইন বদলের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে এবার বিষয়টি তিনি কংগ্রেসের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, একমাত্র কংগ্রেসই পারে এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে। নব্বইয়ের দশকের তুলনা টেনে এনেছেন বাইডেন। তিনি তখন কংগ্রেসে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন অস্ত্র আইন নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বাইডেনের বক্তব্য, এবারও সেই একইভাবে অস্ত্রের বিরুদ্ধে নামতে হবে। প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অধিকাংশ আমেরিকান ঘরে সেমি অটোমেটিক, হত্যা করা যায়, এমন অস্ত্র রাখতে চান না। কয়েকজন রাখে। আর যারা রাখে, তারাই এই কাজ করে। ন্যাশভিলের স্কুলে এক নারী একাধিক বন্দুক নিয়ে গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ অবশ্য ঘটনাস্থলেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলে। ন্যাশভিলের ঘটনায় তিনটি শিশু এবং তিনজন প্রাপ্ত বয়স্কের মৃত্যু হয়েছে। এক নারী সেমি অটোমেটিক মেশিনগান নিয়ে স্কুলের ভিতর ঢুকে পড়ে নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। পুলিশ এখনো পর্যন্ত তার পরিচয় প্রকাশ করেনি। কেন সে একাজ করলো, তাও এখনো স্পষ্ট নয়।
Posted ৩:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh