ঘূর্ণিঝড় আইডা লুইজিয়ানায় তান্ডব ঘটানোর পর নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির দিকে ধেয়ে আসছে। যদিও ঝড়ের গতিবেগ অধিক হবে না বলে আবাহওয়া পূর্ভভাসদানকারী বলছেন, তার বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃস্পতিবারের সকালের মধ্যে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। এদিকে আইডা লুইজিয়ানায় ১০ লাখের বেশি মানুষ বিদ্যুৎহীন করেছে। প্রাণহানি ঘটেছে একজনের। পানিতে আটকা পড়েছে বহু এলাকার লোকজন। নিউ অরলিন্স এখনও ডুবে আছে অন্ধকারে। পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়ি থেকে লোকজনকে উদ্ধার করতে দেখা গেছে। লুইজিয়ানার গভর্ণর জন বেল এডওয়ার্ড বলেছেন, এ ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতিকে নজীরবিহীন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, লুইজিয়ানায় ১৬শরও বেশি উদ্ধারকারী কাজ করছে। এর মধ্যে ৪,৯০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লুইজিয়ানা ও মিসিসিপিতে বড় ধরনের দুর্যোগ ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে সেখানে ফেডারেল সহায়তা দেয়ার কথাও জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল হানক টেইলর বলেছেন, সামরিক বাহিনী, জরুরি ফেডারেল ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও ন্যাশনাল গার্ডের ৫ হাজার ২শর’ও বেশি সদস্য লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, টেক্সাস ও আলাবামায় মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৯ আগস্ট রোববার লুইজিয়ানায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইডা। ঝড়টি ক্যাটাগরি ফোর হিসেবে নিউ অরলিন্সের একশ’ মাইল দক্ষিণে লুইজিয়ানা উপকূলের ফোর্ট ফরচুনে ঘণ্টায় ১১০ মাইল বেগে আঘাত হানে। এর আগে ২০০৫ সালে ২৯ আগস্ট এই স্টেটেই আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় কাটরিনা এবং তখন ১৮শ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।

ঝড়ের কবলে নিহত ব্যক্তি নিউ অরলিন্স সিটির বাসিন্দা। শেরিফ অফিস জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়লে তিনি আহত হন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। শেরিফ অফিস তার নাম দিতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। ঘূর্ণিঝড়ে সমস্যার মুখে পড়েছে নিউ অরলিন্সের টেলিযোগাযোগব্যবস্থা। ঘূর্ণিঝড়ে বেশি সংকটে পড়েছে লুইজিয়ানার হাসপাতালগুলো। এর আগে এ ধরনের বিপর্যয়ের সময় হাসপাতালগুলো থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হতো। তবে এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন। রোগীর চাপে হাসপাতাল এখনো প্রায় ভর্তি। তাদের সরিয়ে নেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হলেও সে সংখ্যা বেশি নয়। উদ্ধার কাজের জন্য ২০০ হাইওয়াটার ভেহিক্যাল, ৭০টি রেসক্যু বোট ও ৩০টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। যারা রয়ে গিয়েছিল তাদের ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে ১৮০০ মানুষ মারা যাওয়ার পর নিউ অরলিন্সে একটি বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। হারিকেন আইডার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আইডা ‘প্রাণঘাতী’ হতে পারে, উপকূলে প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তিনি। লুইজিয়ানা রাজ্যে সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ এখন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, বাইডেন বলছেন বিদ্যুৎ পুনঃবহাল করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। মেক্সিকো উপসাগর থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আমেরিকায় আঘাত করেছে আইডা। গত ২৯ আগস্ট ক্যাটাগরি-৪ হারিকেন হিসেবে এটি নিউ অরলিন্সে আঘাত করে- এই ক্যাটাগরির ঝড় ভবন, গাছপালা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আঘাত হানে বলে আশঙ্কা করা হয়ে থাকে। তবে এখন এটা দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি-৩ হারিকেনের রূপ ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও ঝড়ের কারণে সমু্দ্েরর পানি ১৬ ফুট পর্যন্ত উঠে গেছে, যার কারণে উপকূলের নিম্নভূমি প্লাবিত হয়েছে। নিউ অরলিন্স এখন একটা ভীতিকর শহরে পরিণত হয়েছে, চারদিকে অন্ধকার, বিভিন্ন জায়গায় ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে, গাছপালা পড়ে আছে পথে-ঘাটে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকাও মুশকিল হয়ে গেছে, ৭০ মাইল বেগে হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি। বেশিরভাগ মানুষ ঘরের ভেতর আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্য হারিকেন জীবনের অংশ হয়ে গেছে।