বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে পালিত হলো ‘লেবার ডে’, যা আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি ছুটি। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার ‘লেবার ডে’ দিবসটি পালন করা হয়। ১৮ শতকের শেষ দিকে আমেরিকান শিল্প-কারখানা, রেল-শ্রমিক, খনি শ্রমিক, কৃষি শ্রমিকদের সপ্তাহে সাত দিন দৈনিক ১২ ঘন্টা করে কাজ করতে হতো, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এবং প্রায় ক্ষেত্রেই কঠোর ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং মজুরির পরিমাণ কম, যা দিয়ে তাদের দিন গুজরান করা সম্ভব হতো না। এমনকি শিশুদেরও কাজ করতে বাধ্য করা হতো। দিনে দিনে আমেরিকার শ্রমিকেরা নিজেদের সংগঠিত করে, দৈনিক ১২ থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ, মজুরি বৃদ্ধি ওং কাজের পরিবেশ উন্নত করারসহ বেশ কিছু দাবী তোলে।
প্রথম ‘লেবার ডে’ উদযাপিত হয় ১৮৮২ সালে। ১০,০০০ শ্রমিকের এক বিরাট দল নিউ ইয়র্কের সিটি হল থেকে মার্চ পাস্ট করে ইউনিয়ন স্কোয়ারে যায়। কিন্তু তার সরকার স্বীকৃত দিবস ছিল না। শ্রমিকরা কর্মচ্যুতির ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের সংগঠিত করে। শ্রমিকদের অবিরাম ধর্মঘটের সমস্যা নিস্পত্তি করার ফেডারেল প্রচেষ্টার সময়ে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ১৮৯৪ সালকে লেবার ডে উপলক্ষে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেন এবং কংগ্রেসে তা অনুমোদিত হয়। এর আগে ১৮৮৭ সালে ওরিগন স্টেটে ‘লেবার ডে’ সর্বপ্রথম ছুটির দিন হিসেবে পালিত হলেও তা সরকারিভাবে স্বীকৃত ছিলনা। তখনও আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে শ্রমিকরা দাবী আদায়ের লড়াই করছিল। ১৮৯৪ সালে ইলিনয় এর পুলম্যান সিটির শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে অনিদিষ্ট ধর্মঘট শুরু হয়, যার রেশ অন্যান্য স্টেটেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। চারিদিকে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। বিক্ষোভ মারাত্মক রূপ ধারন করলে প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ডের নির্দেশে পুলম্যান সিটিতে সেনাবাহিনী নামানো হয়। সেনাবাহিনী সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়, ৫৭ জন গুরুতর আহত হয়। বিপুল সম্পদ বিনষ্ট হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ড শ্রমিক আন্দোলনের প্রধান নেতা রেস এর সাথে আলোচনায় বসেন এবং আলোচনা শেষে শ্রমিকদের দাবী মেনে নিয়ে ‘লেবার ডে’ সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করেন। সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার আনন্দে প্যারেডসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে, যার ধারাবাহিকতায় আজও ‘লেবার ডে’র ছুটি চলে আসছে। ‘নিউ ইয়র্কের শ্রমিক ইউনিয়নের’ প্রস্তাব অনুযায়ীই সেপ্টেম্বারের প্রথম সোমবার ‘লেবার ডে’ নির্বাচিত হয়। তবে প্রতি বছর দিনটি ‘সোমবার’ হলেও তারিখটি বদলে যায়। যেমন ২০১২ সালের লেবার ডে’ ৩ সেপ্টেম্বার সরকারীভাবে স্বীকৃত হলেও ১৮৮২ সালের প্রথম ‘লেবার ডে’ ছিল সেপ্টেম্বারের ৫ তারিখ।
আমেরিকানদের কাছে এটি বর্তমানে নিছক একটি ছুটি। এর তাৎপর্য নিয়ে মাথা ঘামায় না। শনি ও রোববারের পর বাড়তি একদিনের অবসর। লেবার ডে আসতেই তারা বুঝে গ্রীষ্ম মওসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। লেবার ডে বলতে কী বুঝায়, লেবার ডে প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, এই দিনটির স্বপ্নদ্রষ্টা কে ছিলেন, এগুলো জানার ব্যাপারে কারো তেমন একটা উৎসাহ নেই। বরং সারা সপ্তাহ পরিশ্রম করার পর দুই তিন দিন হাতে পাওয়া গেলে ঐ সময়টা আনন্দ করে কাটাতেই এরা বেশী আগ্রহী। সরকারি ছুটির তালিকায় সেপ্টেম্বারের প্রথম সোমবার ‘লেবার ডে’, এতেই তারা সন্তুষ্ট। লেবার ডে কবে তা দেখে তারা বছরের শুরুতেই পরিকল্পনা করে ‘লেবার ডে উইকএন্ড’ কিভাবে কাটাবে।
Posted ৪:৩১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh