বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা অর্থ্যাৎ গ্রীনকার্ডধারীদের মধ্যে যারা ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বরের পর সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করবেন তাদেরকে এতোদিন যাবত চলে আসা প্রচলিত ধরনের ন্যাচারালাইজেন পরীক্ষার চেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই ইংরেজি পড়া, লিখা ও বলার যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও সরকার সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো কমবেশি আগের মতোই থাকবে। ইউএস সিটিজেনশিপ এণ্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) গত শুক্রবার এক ঘোষণায় আবেদনকারীদের সিটিজেনশিপের সিভিক টেষ্টের সংশোধিত সংস্করণ কার্যকর করার কথা বলেছে। তাদের কাছে ১ ডিসেম্বর থেকে যে আবেদনগুলো পৌছবে সেসব আবেদনকারীকে নতুন নিয়মের মধ্যে ফেলা হবে।
ইউএসসিআইএস এর ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে সিটিজেনশিপের জন্য আবেদনকারী একজন ইমিগ্রান্টের যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস, সরকার ও সিভিক ভ্যালুজ যাচাই করা হবে। এজন্য একটি পৃথক ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা আবেদনকারীদের পরীক্ষার উত্তরগুলো পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করবে। ইউএসসিআইএস এর নীতি বিষয়ক ডেপুটি ডাইরেক্টর জোসেফ এডলো বলেছেন, ২০১৮ সাল থেকে ইউএসসিআইএস অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষা পদ্ধতি সংশোধনের উপর কাজ করেছে এবং এ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে বয়স্ক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। ইউসিসের নিরীক্ষা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের ইচ্ছা পোষণকারী ইমিগ্রান্টদের একটি বড় অংশের কাছে ন্যাচারাইজেশন পরীক্ষা একটি ভীতিকর ব্যাপার। কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষার সিভিক মূল্যবোধের অংশে থাকবে প্রশ্ন ও উত্তর, যা আগের মতোই এবং ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণের অংশটি পৃথক।
গত শুক্রবার ঘোষিত ইউএসসিআইএস এর পলিসি ম্যানুয়েলে ‘সিভিকস এডুকেশনাল রিকোয়ারমেন্ট ফর পারপাজেস অফ ন্যাচারাইজেশন’ শিরোনামে এই নীতিতে দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে সিভিক প্রশ্নের সংখ্যা এখনকার তুলনায় প্রশ্নের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এতোদিন প্রস্তুতির জন্য ১০০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে প্রশ্ন করা হতো, যা ২০০৮ সাল থেকে একই ছিল; এখন তা থেকে বেড়ে ১২৮টি প্রশ্নের মধ্য থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সবচেয়ে গুরুতর হলো, এতদিন পর্যন্ত ১০০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে ১০টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হতো এবং ৬টি প্রশ্নের উত্তর অর্থ্যাৎ ৬০ শতাংশ উত্তর সঠিক হলেই পাস আবেদনকারীকে পাস বলে গন্য করা হতো। এখন আবেদনকারীকে দশটির পরিবর্তে ২০টি প্রশ্ন করা হবে এবং এর মধ্যে অবশ্যই ১২টি প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে হবে। এছাড়া আগে একজন আবেদনকারী ছয়টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে তাকে আর অবশিষ্ট প্রশ্নগুলো করা হতো না। কিন্তু নতুন নিয়মে এই নিয়মের অবসান ঘটেছে। সংশোধিত পরীক্ষা নীতিমালায় একজন আবেদনকারী যদি ১২টি প্রশ্নের সঠিক উত্তরও দেন, সেক্ষেত্রেও তাকে ২০টি প্রশ্নই করা হবে। অবশ্য এই নিয়মের ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে শুধু ৬৫ বা তদুর্ধ বয়সী আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছর ধরে বসবাস করে থাকেন। তাদেরকে আগের নিয়মে ১০টি প্রশ্ন করা হবে এবং ৬টির উত্তর সঠিক হলেই তারা উত্তীর্ণ হবেন।
সিটিজেনশিপের নতুন পরীক্ষায় ভূগোলের উপর প্রশ্ন বাদ দেয়া হযেছে এবং সরকারের তিনটি শাখার মধ্যে আবেদনকারীকে আগে যে কোন একটি শাখার নাম বলতে হতো। নতুন পদ্ধতিতে আবেদনকারীকে তিনটি শাখার নামই বলতে হবে। আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং তা হলে আগে “ইউএস সিনেটররা কাদের প্রতিনিধিত্ব করেন,” প্রশ্নের উত্তর ছিল “ষ্টেটের সকল জনগণকে,” এটি পরিবর্তন করে উত্তর লেখা হয়েছে, “তাদের ষ্টেটের সকল নাগরিককে।” অবশ্য এ উত্তরের যথার্থতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
ইউসিআইএসের ডেপুটি পরিচালক জোসেফ এডলো বলেছেন, নাগরিকত্ব পরীক্ষার নতুন এসব প্রশ্নের মাধ্যমে অভিবাসীদের আমেরিকার সমাজের একজন উৎকৃষ্ট সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অভিবাসন নীতিমালাবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ডাগ র্যান্ড। ১৩ নভেম্বর এক টুইট বার্তায় তিনি অভিবাসন বিভাগ কর্তৃক নাগরিকত্ব পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এমন পরিবর্তনকে অপ্রয়োজনীয়, জটিল ও আদর্শিকভাবে এক নির্লজ্জ প্রয়াস বলে উল্লেখ করেন। অভিবাসীদের সামনে আরেকটি বাধা সৃষ্টি করাই এমন প্রশ্ন প্রতিবর্তনের উদ্দেশ্য বলে তিনি মনে করেন। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর এসবের পরিবর্তন হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডাগ র্যান্ড।
ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের পলিসি এনালিষ্ট সারাহ পিয়ার্স এসোসিয়েটেড প্রেসের সাথে আলোচনাকালে জানান, ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষায় পরিবর্তন আনার ফলে প্রত্যেক ইমিগ্রেশন অফিসারকে আবেদনকারীর পরীক্ষা গ্রহণে তিনগুণ সময় ব্যয় করতে হবে। এর ফলে ইতোমধ্যে চাপের মুখে পড়া এজেন্সির কর্মদক্ষতা হ্রাস পাবে এবং সিটিজেনশিপের আবেদন নিস্পত্তির ক্ষেত্রে জট বেড়ে যাবে।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ ও বাউন্ডলেস ইমিগ্রেশনের কো-ফাউন্ডার ডো র্যাণ্ড নতুন প্রশ্নমালা পর্যালোচনার পর মত ব্যক্ত করেছেন যে এগুলো সিটিজেনশিপ অনুমোদনের প্রক্রিয়াকে জটিল করবে। তিনি বলেন, নতুন সিভিকস পরীক্ষা অপ্রয়োজনীয়, অন্যায়, অতিমাত্রায় জটিল এবং নির্লজ্জভাবে একদেশদর্শী আদর্শের। নাগরিকত্ব লাভের জন্য যোগ্য ইমিগ্রান্টদের নাগরিকত্ব লাভের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্যই নতুন নিয়ম করা হচ্ছে। সিটিজেনশিপ বা ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষায় আনা পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে আগ্রহীরা ইউএসসিআইএসএর ওয়েবসাইট ভিজিট করে Citizenship Resource Center এ বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন বলে জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটি।
Posted ১০:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh