নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২
নিউইয়র্ক সিটির ৫১টি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট পুনর্বিন্যাসে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান মাফ মিসবাহ উদ্দিন সহ ১৫ সদস্যের কাউন্সিল রিডিস্ট্রিক্টিং কমিশন ঘোষণা করেছেন সিটি কাউন্সিল স্পিকার এড্রেইন এডামস এবং মেয়র এরিক অ্যাডামস। ২০২২ সালের পুনর্বিন্যাস কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ জন সিটি কাউন্সিল মেম্বার মনোনীত এবং বাকি সাত সদস্য সরাসরি মেয়র মনোণীত। সিটি চার্টারের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশন সদস্যরা সকলেই অবৈতনিক।
২০২০ সালের আদমশুমারি এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে পুনর্বিন্যস্ত ৫১টি নতুন ডিস্ট্রিক্টে ২০২৩, ২০২৫ এবং ২০২৯ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল এর সীমানা পুননির্ধারণের কার্যক্রম শুরু করেছে কাউন্সিল রিডিস্ট্রিক্টিং কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নিউইয়র্ক সিটির ৫১টি আসনের মধ্যে ৪৬ টি ডেমোক্রেটদের দখলে এবং রিপাবলিকানদের রয়েছে ৫টি আসন। এর মধ্যে ১৫ সদস্যের কাউন্সিল রিডিস্ট্রিক্টিং কমিশনে কাউন্সিল মেম্বার মনোনীত ৮ জনের মধ্যে থেকে পাঁচ জন ডেমোক্রেট এবং তিনজন রিপাবলিকান। বাকি সাত সদস্যকে মেয়র সরাসরি নিয়োগ দিয়েছেন। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সোমবার ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলের স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস এবং সংখ্যালঘু রিপাবলিকান লিডার কাউন্সিল মেম্বার জো বোরেলির নেতৃত্বে কমিশনে তাদের নিয়োগের ঘোষণা দেয় এবং সম্পূর্ণ কাউন্সিল এতে ৫১-০ ভোট দেয়।
রিপাবলিকান নিযুক্ত তিনজন হলেন (১) মার্ক ওয়ারজেল, যিনি সাধারণ কাউন্সেল এবং গ্রাান্ড সেন্ট্রাল পার্টনারশিপ ইনকর্পোরেটেডের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি এবং পূর্ববর্তী রিডিস্ট্রিক্টিং কমিশনে কাজ করেছেন; (২) কেভিন হ্যানরাট্টি, রিপাবলিকান ন্যাশনাল ল’ইয়ার এসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত একজন কুইন্স অ্যাটর্নি; এবং (৩) ড্যারিন পোর্চার, এনওয়াইপিডির একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট এবং পেস ইউনির্ভাসিটির ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের অধ্যাপক। ডেমোক্রেটিক মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন (৪) ইয়োভান স্যামুয়েল কোলাডো, কমিউনিটি রিলেশান্স ডাইরেক্টর, কার্পেন্টার কন্ট্রাক্টর অ্যালায়েন্স অব মেট্রোপলিটন নিউইয়র্ক, ব্রঙ্কস; (৫) ক্রিস্টেন জনসন, সহকারী কাউন্সেল, এনএএসিপি লিগ্যাল ডিফেন্স অ্যান্ড এডুকেশনাল ফান্ড, ব্রুকলিন; (৬) অ্যাটর্নি গ্রেগরি কিরশেনবাউম, ম্যানহাটান; (৭) মাফ মিসবাহ উদ্দিন, ডিসি ৩৭-এর কোষাধ্যক্ষ, লোকাল ১৪০৭-এর সভাপতি, ভাইস চেয়ার, এশিয়ান প্যাসিফিক আমেরিকান লেবর এলায়েন্স-আপালা, এফল-সিআইও; অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার-অ্যাসাল’র ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা, কুইন্স; এবং (৮) মাইকেল স্নাল, ননপ্রফিট এক্সিকিউটিভ, স্টেটেন আইল্যান্ড।
এদিকে, গত ৭ মার্চ মেয়র এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটি ডিস্ট্রিক্টিং কমিশনে সাতজন তার মনোনীত প্রতিনিধি নিয়োগের ঘোষণা দেন। তারা হলেন: (৯) মেরিলিন ডি. গো যিনি ১৯৯৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের ফেডারেল ম্যাজিস্ট্রেট জাজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; (১০) মারিয়া মাতেও, এসকিউ, কুইন্স; (১১) জশুয়া শ্নেপস, সিইও এবং প্রকাশক, শ্নেপস মিডিয়া, যেটি নিউইয়র্ক সিটি, লং আইল্যান্ড এবং ওয়েস্টচেস্টারে কয়েক ডজন স্থানীয় সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং ওয়েবসাইট প্রকাশ করে; (১২) লিসা সোরিন, প্রেসিডেন্ট, নিউ ব্রঙ্কস চেম্বার অফ কমার্স; (১৩) মনসিগনর কেভিন সুলিভান, নিউইয়র্কের আর্চডিওসিসের ক্যাথলিক চ্যারিটিসের নির্বাহী পরিচালক, যিনি এর আগে ৯/১১ ইউনাইটেড সার্ভিসেস গ্রুপের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; (১৪) ডেনিস এম. ওয়ালকট, ২০১৬ সাল থেকে কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এর আগে নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের চ্যান্সেলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং (১৫) কাই-কি ওং, ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট, যিনি সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব বিল্ডিং-এ সহকারী প্রধান পরিকল্পনা পরীক্ষক হিসাবে কাজ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিশন শিগগির যেসব কার্যক্রম শুরু করবে তার মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেক বরোতে ধারাবাহিক গণশুনানি অনুষ্ঠিত করা, ডিস্ট্রিক্টগুলোর একটি প্রস্তাবিত ম্যাপ তৈরি করা, ম্যাপটি কমপক্ষে এক মাসের জন্য জনসাধারণের যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করা হবে। পরে এটি সিটি কাউন্সিলে জমা দেবে। কাউন্সিলের কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাবনা থাকলে ১৫ সদস্য কমিশনের কাছে সুপারিশ করবে। সর্বশেষ কমিশন ম্যাপটি চূড়ান্ত করে সিটি ক্লার্কের কাছে জমা দেবে। সূত্রমতে, কমিশনের সামনে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ রয়েছে। গত আদমশুমারির পর থেকে দশ বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে ৬২৯,০০০ বাসিন্দা বৃদ্ধি পেয়ে ৮.৮ মিলিয়ন হয়েছে। যা জনসংখ্যার প্রায় ৭.৭% বৃদ্ধি। যার অর্থ হবে প্রতিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টের জন্য গড়ে প্রায় ১২,৩৩৩ জন বাসিন্দা বৃদ্ধি। কিন্তু কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টগুলো সব একই রকম নয় এবং সিটির জনসংখ্যা সমানভাবে বৃদ্ধি পায়নি। তথাকথিত কমিউনিটি স্বার্থ সহ বিভিন্ন কারণে ধর্ম বা বংশসহ, জাতিগতভাবে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আদমশুমারির তথ্যে দেখা যায় যে, ব্রুকলিনের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯.২% বৃদ্ধি পেয়ে ২.৭ মিলিয়নেরও বেশি হয়েছে; কুইন্সের জনসংখ্যা ৭.৮% বৃদ্ধি পেয়ে ২.৪ মিলিয়ন; ম্যানহাটানে ৬.৮% বৃদ্ধি পেয়ে ১.৭ মিলিয়ন; ব্রঙ্কসে ৬.৩% বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪ মিলিয়ন; এবং স্টেটেন আইল্যান্ড ৫.৮% বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪৯৬,০০০ জনে পৌঁছেছে। জাতিগত গোষ্ঠী ও নেইবারহডের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাসের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল। তাই বর্তমানে কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টগুলো কিছু কম জনবসতিপূর্ণ আর কিছু অত্যধিক জনবহুল।
পাবলিক পলিসি ফর সিটিজেনস ইউনিয়নের ডিরেক্টর বেন ওয়েইনবার্গ একটি সরকারী সংস্কার গ্রুপের করা পুনর্বিন্যাস বিশ্লেষণ করে বলেন, “জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং ডিস্ট্রিক্টের আকারের কারণে নতুন সীমানার পরিবর্তন করতে হবে”। ব্রুকলিন ইস্ট রিভার ওয়াটারফ্রন্টের মতো আইনত যা অনুমোদিত, যেখানে গত দশকে নতুন আবাসন ইউনিট এবং বাসিন্দাদের আগমন ঘটেছে।”
সবেমাত্র ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত আইনসভায় পাস হওয়া এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডেমোক্রেট গভর্ণর ক্যাথি হচুল অনুমোদিত নিউইয়র্ক স্টেটের নতুন বিন্যাসকৃত আইনসভা এবং কংগ্রেসের আসন পুনর্বিন্যাস করার চেয়ে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে নিউইয়র্ক সিটির রিডিস্ট্রিক্টিং প্রক্রিয়া। ওয়াইস বলেন, “নিউইয়র্ক স্টেটের পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ার বিপরীতে, সিটি চার্টারের উপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের প্রক্রিয়াটি আরও কঠোর, আরও দক্ষ মানদন্ড রয়েছে, কারণ এতে অগ্রাধিকারের ক্রম অনুসারে স্থান রয়েছে”।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কমিশনকে অবশ্যই চার্টারে তালিকাভুক্ত ক্রমিক মানদন্ডের একটি সিরিজ মেনে চলতে হবে। ক্রমানুসারে: জনসংখ্যার সমতা; জাতিগত এবং ভাষা সংখ্যালঘুদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব, প্রতিবেশী এবং কমিউনিটি অক্ষত রাখা নিশ্চিত করা; প্রতিটি ডিস্ট্রিক্ট “কম্প্যাক্ট এবং এটি প্রশস্ত হওয়ার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হবে না” এটি নিশ্চিত করা; ডিস্ট্রিক্টগুলো বরো বা কাউন্টি সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না; ডিস্ট্রিক্টগুলোকে একই দলে নথিভুক্ত ভোটারদের আলাদা কেন্দ্রীকরণে টানা যাবে না; এবং “সমস্ত ডিস্ট্রিক্ট সীমানার দৈর্ঘ্য অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বিত পরিকল্পনায় পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনা নিশ্চিত করা।
কমিশন সিটিজেনস ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং কাউন্সিলের স্পিকার, সংখ্যালঘু নেতা এবং র্যাঙ্ক-এন্ড-ফাইল মেম্বারদের সুপারিশের জন্য তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। সিটির জনসাধারণকে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে। তারা কোনো বিলম্ব এড়াতে কমিশনকে দ্রুত তহবিল দেওয়ার জন্য মেয়র অ্যাডামসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম
Posted ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh