বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ স্পেশাল ইলেকশন আগামী ২ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার। কাউন্সিলমেম্বার রোরি ল্যান্স্যামনের পদত্যাগের পর এই আসনটি শূণ্য হয়। এই নির্বাচনে ভোটারগণ সরাসরি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে অথবা আগাম ও এ্যাবসেন্টি ব্যালটে ভোট প্রদানের সুযোগ পাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের নির্বাচনে এবার বাংলাদেশী আমেরিকান প্রার্থী ৪ জন এবং তাদের সবাই ডেমোক্র্যাট। এরা হলেন এটর্নি সোমা সাঈদ, মৌমিতা আহমেদ, ডঃ দীলিপ নাথ ও মুজিব রহমান।নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২১ সালের ২ নভেন্বর। তার আগে জুন মাসে অনুষ্ঠিত হবে প্রাইমারী। আগামী ২ ফেব্রুয়ারির বিশেষ নির্বাচনে যিনি জয়ী হবেন তিনি ২০২১ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকবেন। ২০২১ এর ২ নভেম্বরের নিয়মিত নির্বাচনে জয়লাভকারী নতুন করে আসীন হবেন ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিল মেম্বারপদে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নগরী নিউইয়র্ক। আর কুইন্স হচ্ছে দেশটির সর্ববৃহৎ কাউন্টি। এই কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ সাউথ এশিয়ান রেজিস্ট্রার্ড ভোটার রয়েছে ৩০ সহস্রাধিক। তন্মধ্যে বড় একটি সংখ্যক ভোটার হচ্ছে বাংলাদেশী। ফলে নানা কারণেই এই আসনের উপর রাজনীতিকদের রয়েছে কড়া নজর। কিউ গার্ডেনস হিলস, পমোনক, ইলেক্টচেস্টার, ফ্রেশ মেডোস, হিলক্রেস্ট, জ্যামাইকা এস্টেটস, ব্রায়ারউড, পার্কওয়ে ভিলেজ ও জ্যামাইকা হিলস নিয়ে গঠিত-ডিস্ট্রিক্ট-২৪ নির্বাচনী এলাকা।
এদিকে সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে। ‘র্যানকড চয়েস ভোটিং’ প্রক্রিয়ায় একজন ভোটার একই সাথে ৫ জন প্রার্থীকে ভোট দিবেন। এই প্রক্রিয়া অনুমোদন প্রাপ্ত হয়েছে ২০১৯ সালের নির্বাচনে। কুইন্সের এসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ ৪০ শতাংশ এশিয়ানের বসবাস। তন্মধ্যে ১৮ শতাংশ বাংলাদেশী। এটা বাংলাদেশী প্রার্থীদের জন্য একটি উর্বর এলাকা।স্পেশাল নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার বরাবর অত্যন্ত কম। গত ২৩ জানুয়াারি থেকে শুরু হয়েছে অগ্রিম ভোট প্রদান। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। অগ্রিম ভোট প্রদানের হার খুবই নগণ্য। সুতরাং এখানে বাংলাদেশী ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করতে পারলে তা ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে । সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ বিশেষ নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে সাউথ এশিয়ান ৬জন। তন্মধ্যে ৪জনই বাংলাদেশী। এরা হলেন এটর্নি সোমা সাঈদ, মৌমিতা আহমেদ, ডঃ দীলিপ নাথ ও মুজিব রহমান। এর মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত দু’প্রার্থী দিপ্তী শর্মা ও নীতা জেইন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার প্রচারণা। তাদের পেশা, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও ভিন্নতর। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এসব প্রার্থীদের পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটি। সিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমর্থনও পেয়েছেন কোন কোন প্রার্থী।
দেশীয় আঞ্চলিকতা এবং রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কেউ কেউ দাড়াচ্ছেন প্রার্থীদের পক্ষে। কোন কোন প্রার্থীর প্রচারণা সীমিত রয়েছে শুধুমাত্র নিজ কমিউনিটিতে। সিটির ডিস্ট্রিক্ট-২৪ নির্বাচনী এলাকায় শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সামান্যতম সুযোগও নেই। এই এলাকার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে অন্যান্য জাতি গোষ্ঠী ও কমিউনিটির মানুষের বসবাস। তাদের মাঝে নিজেদের প্রার্থীতা ও পরিচয় শক্ত ও সঠিকভাবে তুলে ধরার বিকল্প নেই। একটি আসনে বাংলাদেশী এবং ৪ জন প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় কমিউনিটিতে সৃষ্টি হয়েছে একধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতির। তারপরও অনেকে অনুদানের হাত বাড়িয়েছেন প্রার্থীদের প্রতি। প্রার্থীরা সংগৃহীত তহবিল সিটি প্রশাসনকে প্রদর্শন করে বড় ধরণের আর্থিক সহায়তা লাভ করেছেন। নিউইয়র্ক সিটির নিয়মানুসারে কোন প্রার্থী যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে থাকেন সিটি কর্তৃপক্ষ তার ৬ গুণ অর্থ প্রার্থীদেরকে প্রদান করেন নির্বাচনী প্রচারনার কাজে ব্যবহারের জন্য। এদিক থেকে আর্থিক দৈন্য দশাতে পড়তে হয় না প্রার্থীদেরকে। এবারের বিশেষ নির্বাচনে যিনি জয়ী হবেন তার মেয়াদকাল হবে একবছরেরও কম সময়। তারপরও প্রার্থীরা বিভিন্ন ইস্যু সামনে রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা।
তবে এ আসনে একজন শক্তিশালী সাবেক কাউন্সিলম্যানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যে ধরণের প্রচারণা বা প্রস্তুতি প্রয়োজন তা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। স্থানীয় নির্বাচনে যারা প্রার্থী হন তাদেরকে রাজনীতির ময়দানে থাকতে হয় সার্বক্ষণিক। বিভিন্ন ইস্যুতে দাঁড়াতে হয় কমিউনিটির মানুষের পাশে। বছর কয়েক আগে থেকেই হোম ওয়ার্ক করে সেভাবে নিতে হয় প্রস্তুতি। নির্বাচন হলো কৌশলের খেলা। শুধু ভোট ব্যাংকের হিসেব কষে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়না। এসব নির্বাচনে জয়ী হতে হলে নিজ মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং সামষ্টিক জনসমর্থন প্রয়োজন। বাংলাদেশী অভিবাসী সমাজে এখনো ঢেড় অভাব ঐক্যের। অভাব সঠিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের। অভাব উদার মন-মানসিকতা ও পারস্পরিক সহমর্মিতার। নূতন প্রজন্মের যারা এবার প্রার্থী হয়েছেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ক্ষীণ আশার আলো জাগিয়েছে বৈকি?
আমেরিকান রাজনীতিতে একবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে রাজনীতিকরা ধাপে ধাপে উপরের দিকে অগ্রসর হন। আর একবার বিফলকাম হলেই নির্বাচনের ময়দান ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন না তারা। নির্বাচনে জিততে হলে সকল ধর্ম-বর্ণ, জাতি ও কমিউনিটির ভোট এবং সমর্থন প্রয়োজন। এদেশে নির্বাচন হয় ইস্যু ভিত্তিক। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থীরাও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিবেশ, গৃহায়ন সহ নানাবিধ স্থানীয় উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তাদের নির্বাচনী ইস্যুতে। করোনা মহামারি নির্বাচনের আমেজ অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। তারপরও চলছে প্রচারণা। প্রার্থীরা ডাকযোগে বাসায় বাসায় পাঠাচ্ছেন তাদের প্রচারপত্র। যোগাযোগ করছেন টেলিফোনে। কোন কোন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে প্রত্যাশা ছিলো একক প্রার্থীর। এদিক থেকে অনেক ভোটার তাদের নিরাশার কথা জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিকে। সিটি কাউন্সিলের এ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা এলাকায় আলোচনা সমালোচনা অব্যাহত আছে। যেহেতু র্যাংকড চয়েস ভোটিং সেহেতু বাংলাদেশী ভোটাররা ৪ জন প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারবেন। তবে যে প্রার্থী নিজ কমিউনিটির বাইরে থেকে ভোট টানতে পারবেন তারপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে নিজ কমিউনিটির সমর্থকদের ভোট প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
অপরদিকে এই আসনে পুনরায় প্রার্থী হচ্ছেন রোরি ল্যান্সম্যানের পূর্বসূরি সাবেক কাউন্সিল মেম্বার জেমস জিনারো। যিনি ২০০২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিল মেম্বার ছিলেন। পরে তিনি গভর্নর অফিসে চাকুরী নিয়ে চলে যান। জেমস জিনারো এ নির্বাচনে একক প্রার্থী হওয়ায় তাকে হটানো কঠিন হবে অন্যান্য প্রার্থীর জন্য। এছাড়া ২০২০ সালে সেন্সাস অনুযায়ী সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টগুলোতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পুনর্বিন্যাস। ফলে ২০২১ এর নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন তাদের মেয়াদকালসীমিত হবে ২বছরের জন্য। এভাবে চলবে পরের নির্বাচন। ২০২৫ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় ৪ বছরের স্বাভাবিক মেয়াদকাল শুরু হবে সিটি কাউন্সিলে। ১৯৮৯ সালের নিউইয়র্ক সিটি চার্টার অনুযায়ী কার্যকর হেেচ্ছ এ পরিবর্তন।
এটর্নি সোমা সাঈদ
কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এ স্পেশাল নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন কুইন্স কাউন্টি ওমেন’স বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এটর্নি সোমা সাঈদ। নির্বাচনে তাকে সমর্থণ প্রদান করেছেন বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে যার ফলে বিভিন্ন সময়ে জনগণের শিক্ষা, চাকুরী, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গৃহায়ন প্রভৃতি মৌলিক অধিকার আদায়ে আলবেনীতে ছুটে যান তিনি ।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সোমা সাঈদ বারো বছর বয়সে যখন আমেরিকা আসেন। বসবাস শুরু করেন কুইন্সে। কুইন্সের মানুষের সাথে তাঁর গড়ে উঠে আত্মীক বন্ধন। নারী-পূরুষ, ধর্ম-বর্ণ কিংবা ছোট-বড় নির্বশেষে সকলের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন সোমা সাঈদ। এটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স কাউন্টি ওমেন’স বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। ২০০৮ সালের মন্দাকালীন সময়ে সোমা সাঈদ আন্দোলন করেন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সোচ্চার হন তিনি। এশিয়ান কমিউনিটিতেও সোমা সাঈদের পেশাগত ও সামাজিক যোগাযোগ রয়েছে। প্রচার-প্রচারণা ও সমর্থনের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছেন সোমা সাঈদ। স্থানীয় কমিউনিটিতে একধরণের গ্রহণ যোগ্যতাও রয়েছে তার।যে সকল স্থানীয় সংস্থা সমূহ ইতিমধ্যেই সোমা সাঈদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে তাদের মধ্যে ’কমিউনিটি এলায়েন্স গ্রুপ’ (সিএজি); ’সাউথ এশিয়ান পলিটিক্যাল এ্যাকশন কমিটি’ (এসএপিএসি); ‘মুসলিম কমিউনিটি ফোরাম’ (এমসিএফ); জ্যামাইকা-বাংলাদেশী ক্লাব ইউ.এস.এ; বাঙ্গালী ডেমোক্রেটিক ক্লাব উল্লেখযোগ্য। এছাড়া দাতব্য প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ‘বি.এ.সি.ডি.ওয়াই.এস’; সিলেট সদর সমিতি; টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউ.এস.এ ইনক্; প্রবাসী টাঙ্গাইল বাসী প্রভৃতি।
মৌমিতা আহমেদ
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান মৌমিতা আহমেদ। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন মৌমিতা। জয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী। মৌমিতা আহমেদ বলেন, এবারের ভোট অন্যান্য ভোটের মতো নয়। এই ভোটে ব্যতিক্রম হচ্ছে একসঙ্গে পাঁচজন প্রার্থীকে পছন্দ অনুযায়ী ক্রমানুসারে ভোট দেওয়া যাবে। বিশেষ নির্বাচন হওয়ার কারণে এই ভোট হচ্ছে র্যাঙ্কিং চয়েজের মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে একজন ভোটারকে পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কেবল বাংলাদেশি ভোট প্রত্যাশা করলেই হবে না। জয়ী হওয়ার জন্য অবশ্যই অন্যান্য কমিউনিটির ভোটও টানতে হবে। আমি ইতিমধ্যে বিভিন্ন কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন থেকে এবং বড় বড় জায়গা থেকে এনড্রোসমেন্ট পেয়েছি। আশা করছি, আমি জয়ী হব। তবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জেমস জিনারিওর সাথে।
মৌমিতার মতে, বাংলাদেশি যেসব প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে তার অবস্থান সবচেয়ে ভালো। তার একটি অবস্থান আছে সিটিতে এবং ন্যাশনালিও। তিনি এখানে ছোটবেলা থেকে মানুষ হয়েছেন। শুধু বাংলাদেশিরা নন, অন্যান্য কমিউনিটির মানুষও তাকে পছন্দ করে। এসব কারণে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী।
নির্বাচন থেকে সরে যেতে মৌমিতাকে হুমকি
নিউইয়র্কে বর্ণবাদী বিদ্বেষের কারণে কুইন্সের ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে বাংলাদেশি কাউন্সিলর প্রার্থী মৌমিতা আহমদকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশি আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। নিউইয়র্কার জার্নাল এ খবর দেয়। মৌমিতা অভিযোগ করেন, ওয়াল স্ট্রিটের বিলিয়নিয়ার রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার কাউন্সিল সদস্য জেনেরোর সাবেক চিফ অব স্টাফের নেতৃত্বে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে ইমেইল প্রেরণ করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে ট্রাম্প সমর্থক বিলিয়নিয়ার স্টিফেন রস, জ্যাক কাইয়ার, আইসাক এশ, জেফ ল্যাব ও জেমস জেনেরো নামের ধনকুবের প্রার্থী হয়েছেন। মৌমিতা নির্বাচনে স্বল্পমূল্যের আবাসন সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও অভিবাসী পরিবারের লাড়াইকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে মৌমিতা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান। ইতিমধ্যে ডেমোক্রেট উঠতি তারকা কংগ্রেস উইমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজের অনুসারী মৌমিতা কমিউনিটিতে একটি অবস্থান তৈরী করে নিয়েছেন।
ড. দিলীপ নাথ
ড. দিলীপ নাথ ২ ফেব্রুয়ারী সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডিস্ট্রিক ২৪ থেকে কাউন্সিলম্যান পদপ্রার্থী। চট্টগ্রামের সন্তান দিলীপ নাথ নিউ আমেরিকান ভোটার অ্যাসোসিয়েশন পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির সভাপতি। কমিউনিটি বোর্ডের ৮নং সদস্য ও সুনি ডাউন স্টেটের অন্তর্র্বতীকালীন সহসভাপতি এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। আগামী বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ডিস্ট্রিক্ট ২৪ আসনে সিটি কাউন্সিলম্যান পদে বিশেষ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ডেমোক্র্যাট দিলীপ নাথ ১৬ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। নির্বাচনে দিলীপ নাথের এটি লড়াই। এর আগে ২০০৫ সালে প্রথম নির্বাচনে জেমস জেনারোর কাছে হেরেছিলেন তিনি। দুজন আবার মুখোমুখি হচ্ছেন এবার। নির্বাচনে আসনটি পেতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন এই তিনটি মূল বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন দিলীপ। ডিস্ট্রিক্ট-২৬ কমিউনিটি এডুকেশন কাউন্সিলের সদস্য ও পিটিএর সাবেক সভাপতি দিলীপ বলেন, শিশুদের শিক্ষিত করা আমার প্রথম অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে একের পর এক পরিবর্তন অতিরিক্ত উদ্বেগ তৈরি করছে বাবা–মায়ের জন্য। ভয়ানক এই সময়ে নতুন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের সফল করতে প্রয়োজনীয় সব প্রযুক্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সজ্জিত করা উচিত। দিলীপ নাথ কুইন্সে আরও বেশি বিশেষায়িত উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে তুলতে কাজ করতে চান। তিনি সব পাবলিক পরিবহন বিনা মূল্যে করতে চান। দিলীপ নাথ পুরো ক্যারিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘মহামারি সময়কাল ছাড়াও আমরা স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে যথেষ্ট পরিমাণে সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির ব্যবহার করছি না।’
লোকজন যেন সঠিক সময়ে দ্রুত চিকিৎসা সেবা পান, সে ক্ষেত্রে তিনি টেলিহেলথ ক্লিনিকগুলোর সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্যসেবায় প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তিনি। এ দিকে দিলীপ নাথ কে সমর্থন দিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির একাধিক ডেমোক্রেটিক লিডার ও কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিলীপ নাথের সংসার। ১৬ বছর বয়সে আমেরিকায় এসে এখানে এমবিএ করেন। পিএইচডি করেছেন। পাবলিক সেক্টরে কাজ করছেন ২৫ বছর ধরে । বর্তমানে নিউইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মুজিব রহমান
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মূলধারার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের সক্রিয় সংগঠক মুজিব রহমান ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে সিটি কাউন্সিলের বিশেষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মুজিব রহমান ২০১৩ সালের নির্বাচনে লড়েছিলেন রোরির সঙ্গে। বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে সর্বাধিক ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন মুজিব রহমান। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা মুজিব রহমান ইউএস সেনসাস ব্যুরো, ইউএসবিএ ও আইআরএসে কর্মরত ছিলেন। মুজিব মূলধারার রাজনীতিতে একজন নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট হিসেবে সক্রিয়। মুজিব পারিবারিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি একনিষ্ঠ। মুজিব বাংলাদেশীদের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চ্চার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রকৃত বাংলাদেশী একজনকে সিটি কাউন্সিলে পাঠানো কমিউনিটির দায়িত্ব আর তাই ২ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে ব্রালটে প্রথমে তাকে চিন্হিত করে পরবর্তী প্রার্থীদের পছন্দ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুজিব রহমান। ২৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া আগাম ভোটে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়ে মুজিব বলেন, করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদে সবার উচিৎ আগাম ভোটে অংশ নেয়া উচিৎ।
Posted ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh