বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন যে টেক্সাস সীমান্ত থেকে সিটিতে প্রেরিত ইমিগ্রান্টদের নতুন প্রবাহ সামাল দিতে স্টেট ও ফেডারেল আর্থিক সহায়তা জরুরী হয়ে পড়েছে। সিটির ইমিগ্রেশন বিষয়ক অফিসের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সিটিতে নবাগত ইমিগ্রান্টদের সহায়তার জন্য বার্ষিক আনুমানিক এক বিলিয়ন ডলার আবশ্যক। গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর কর্তৃক একতরফাভাবে নিউইয়র্ক সিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া ইমিগ্রান্ট সংখ্যা গত সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজারে পৌছেছে। গত সোমবারেও চারটি বাস ভর্তি ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্ক সিটিতে পৌছেছে। এরিক অ্যাডামস সিটি হলে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন যে, আরো অধিক সংখ্যক ইমিগ্রান্ট ধারণ এবং তাদের ব্যয়ভার বহন করা সিটির জন্য দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে।
ইমিগ্রান্টদের জন্য ইতোমধ্যে সিটিকে বহু ধরনের কর্মসূচি হাতে নিতে হয়েছে, যার মধ্যে বিভিন্ন হোটেলে স্থাপিত ৬০টি জরুরী আশ্রয় কেন্দ্র, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এছাড়াও আরো কিছু আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যাতে ইমিগ্রান্টরা সরাসরি বিভিন্ন সেবা লাভ করতে পারে। সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতে এতো অধিক সংখ্যক ইমিগ্রান্টের আগমণ নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। বর্তমানে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে এসেছে, যাদের বেশির ভাগ ভেনিজুয়েলার নাগরিক। সিটি মেয়রও আরো অধিক সংখ্যক ইমিগ্রান্টের উপস্থিতি আশ্কংা করছেন, কারণ মহামারীকালে কার্যকর টাইটেল ৪২, যা যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের সীমান্ত অতিক্রমে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছিল, সেটির মেয়াদ অবসানে সীমান্তের ওপারে মেক্সিকোতে অপেক্ষমান বিদেশিদের সীমান্ত অতিক্রম করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না এবং টেক্সাস সরকার গত আট মাস ধরে সরকারি খরচে বাস ভাড়া করে সীমান্ত অতিক্রমকারী বিদেশিদের ডেমোক্রেট সিটিগুলোতে পাঠানো যে অব্যাহত রাখবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং স্যাঙ্কচ্যুয়ারি খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি তার ইমিগ্রান্টবাহী বাসগুলোর প্রধান গন্তব্য। সিটি বলছে যে এখন প্রতি সপ্তাহে এক হাজার ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্কে এসে পৌছতে পারে।
মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, ইমিগ্রান্টদের আশ্রয় ও অন্যান্য সেবা দিতে হলে সিটির তহবিল থেকে তা সম্ভব নয়, এজন্য প্রয়োজন স্টেট ও ফেডারেল তহবিল এবং আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ইমিগ্রান্টদের আশ্রয় ও সেবার কাজে আমাদের বার্ষিক এক বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন পড়বে। মেয়র এতদিন যাবত তার সিটির ইমিগ্রান্ট বান্ধব বৈশিষ্টের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করলেও গত সোমবার হতাশা ব্যক্ত করেছেন যে ফেডারেল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে সিটির ওপর যে প্রবল আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা সিটির নেই। তিনি বলেন, এটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলার দায়িত্ব শুধু নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, হিউস্টন বা এল পাসো’র নয়। কোনো শহরের পক্ষে এককভাবে জাতীয় সমস্যার ভার বহন করা সম্ভব নয়। গত সোমবার পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে পৌছা ইমিগ্রান্ট বহনকারী বাসগুলো এসেছে টেক্সাসের সীমান্ত শহর ডেল রিও থেকে, যে শহরটি স্যান অ্যান্টোনিও’র পশ্চিম এলাকা থেকে ১৫০ মাইল দূরে অবস্থিত। টেক্সাস সরকার বাসগুলো ভাড়া করে ইমিগ্রান্টদের নিউইয়র্ক সিটির উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সিটি হলের একজন মুখপাত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, নবাগত ইমিগ্রান্টদের মধ্যে ২১,৭০০ এসাইলাম আবেদন করেছেন এবং তারা সিটির আশ্রয়ে রয়েছেন। এর বাইরেও অনেকে ভিন্ন ভিন্ন আশ্রয়ে রয়েছেন। অনেক ইমিগ্রান্টের নিউইয়র্কে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব নেই, তারা যেকোনো কাজের জন্য সিটির ওপর নির্ভরশীল। নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য সিটি এযাবত কত ব্যয় করেছে মর্মে প্রশ্নের উত্তরে এরিক অ্যাডামস কোনো নির্দিষ্ট অংক উল্লেখ না করে বলেছেন যে, এ পরিমাণ শত শত মিলিয়ন। নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারের অফিস থেকে গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী তারা ধারণা করছেন যে বছর শেষে নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য ব্যয়ের পরিমাণ এক বিলিয়নে উন্নীত হবে। এর মধ্যে আশ্রয় ও সমাজসেবা খাতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার এবং মানবিক ও ত্রাণ কেন্দ্রের জন্য আরো ৪০০ মিলিয়ন ডলার। সিটি আশা করছে যে ফেডারেল সরকার এই অর্থ যোগান দেবে, কিন্ত এতে কোনো গ্যারান্টি নেই। মেয়র গত উইকএন্ডে কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ইমিগ্রান্টদের পেছনে যে ব্যয় হচ্ছে তা বরাদ্দ দেওয়া।
অবৈধ ইমিগ্রান্ট ঠেকাতে টেক্সাসের এল পাসো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা : অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এল পাসো সিটি মেয়র। কারণ প্রতিদিন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অপেক্ষায় দিন গুনছে। মেক্সিকো সীমান্তে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে তারা প্রতিনিয়ত এই সীমান্ত সিটিতে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিটির ডেমোক্রেট মেয়র অস্কার লিসার বলেন, এ ঘোষণায় ইমিগ্রান্ট সঙ্কট মোকাবেলায় সিটিেেক অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সম্পদ দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম যে মানুষের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা হবে। আমরা সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন ২ হাজার ৪০০-এর বেশি অভিবাসী এল পাসোতে প্রবেশ করে, যা তার আশ্রয় ক্ষমতার চেয়ে বেশি। যেমনভাবে তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, এতেও হাজার হাজার অভিবাসী এল পাসোর রাস্তায় ঘুমোচ্ছে। ফেডারেল স্বাস্থ্য আদেশ টাইটেল ৪২ এর মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। তার আগে এই জরুরি ঘোষণা দেন মেয়র। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কার্যকর করা টাইটেল ৪২ সীমান্তের ওপারে অভিবাসীদের দ্রুত ফিরে যাবার অনুমতি দেয়।
লিসার বলেন, আগামী সপ্তাহে যদি টাইটেল ৪২ আর কার্যকর না হয়, তবে কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন যে এল পাসো দিয়ে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের দৈনিক সংখ্যা ২ হাজার ৪০০ থেকে ৬ হাজারে বাড়তে পারে। এল পাসোর প্রতিনিধিত্বকারী ডেমোক্রেটিক সিনেটর সেসার জে ব্লাঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেছেন, সীমান্ত সম্প্রদায় ‘একটি অস্বাভাবিকরকম মানবিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য বিপুল সংখ্যক বিদেশি অভিবাসন প্রত্যাশী জড়ো হয়েছে টেক্সাসের এল পাসো সীমান্তে। এক হাজারের অধিক বিদেশি একযোগে উপস্থিত হয়েছে টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই সীমান্ত কেন্দ্রে, যা সাম্প্রতিককালে এক সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করতে প্রত্যাশী সবচেয়ে বড় গ্রুপ বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত রোববার তারা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এসব বিদেশির অধিকাংশই এসেছে নিকারাগুয়া থেকে। তারা ইউএস বর্ডার পেট্টল এজেন্টদের অনুরোধ জানাচ্ছে তাদেরকে এসাইলামের আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আগ্রহী এত অধিক সংখ্যক বিদেশি এর আগে কখনো এক সাথে ওই সীমান্ত ফটকে উপস্থিত হয়নি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এসব বিদেশি গত কয়েক দিনে ভিড় করেছে, যা হুট করে সামলানোর মতো অবস্থা ও সীমান্তে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের নেই। ফলে সঙ্গত কারণেই তাদেরকে এক সঙ্গীন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ সেখানে বছর জুড়ে প্রাত্যহিক ভিত্তিতে সীমিত সংখ্যক বিদেশির এসাইলাম আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন। এসাইলাম আবেদন করতে আগ্রহীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে একটি নন-প্রফিট সংস্থা এনানসিয়েশন হাউজ। এর ডাইরেক্টর রুবেন গর্সিয়া বলেন. ‘আগত মাইগ্রেন্ট সংখ্যা অধিক, তাদের তালিকাভূক্তি ও এসাইলাম আবেদন করতে ফেডারেল ইমিগ্রেশন অফিসাররা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। যারা রোববার সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, তাদের আবেদন প্রক্রিয়ার সোমবারেও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
বাসস্টেশনে পাশে এক অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন আলমারাজ সোসিডে ইসিদরো। তিনি বলেন, ঠিক এ মুহূর্তে পাঁচজন লোক আমার সঙ্গে আমার বাস্থানেই অবস্থান করছে এবং আরো তিনজনের শয়নের ব্যবস্থা করতে আমার ট্রাক খুলে দিয়েছি। এখন ঠান্ডার মওসুম। মাইগ্রেন্টদের খাবার বা গরম কাপড়চোপড় নেই। এ অবস্থার মধ্যেই তারা পড়ে আছে।’
ফেডারেল এজেন্সির হিসাব অনুযায়ী এল পাসো এলাকায় সাম্প্রতিককালে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই এলাকার সবগুলো ফটক দিয়ে অক্টোবর মাসে ৫৩ হাজার বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অন্য যেকোনো পয়েন্টের চেয়ে মাইগ্রেন্টের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে সবচেয়ে বেশি। পুরো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছে প্রায় ২৪ লাখ বিদেশি। নিকারাগুয়া থেকে এসেছেন ড্যানিয়ে সালাজার ও তার পুত্র লুইস আলেকজান্ডার কালেরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গত রোববার মেক্সিকো হয়ে হুয়ারেজ পৌছেন। তারা বলেন যে তাদেরকে অপহরণ করে বেশ ক’দিন আটকে রাখা হয়েছিল এবং মুক্ত হওয়ার পর তারা বাসের বহরে একটি বাসে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌছেছেন। হোমল্যান্ড সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো এন মায়োরকাস গত সোমবার পরিস্থিতি দেখতে এল পাসো পরিদশন করেছেন।
সীমান্তে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময়ে নিষেধাজ্ঞার অনেকগুলোই বহাল রয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ নিকারাগুয়ার কাউকে বহিস্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারে না। কারণ মেক্সিকো তাদেরকে গ্রহণ করবে না এবং বাইডেন প্রশাসন তাদের নিকারাগুয়ায় ফেরত পাঠাতেও পারে না।
সেজন্য অধিকাংশ নিকারাগুয়ানকে আটকে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের সন্ধান পাওয়ার ট্রেকিং ডিভাইস দিয়ে অথবা ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটকে রেখে তাদের এসাইলাম আবেদনের সুযোগ দিয়ে ছেড়ে দিতে। এ প্রক্রিয়ায় তাদের মাত্র কয়েকদিন আটকে রাখা হয়। হয়তো শেষ পর্যায়ে তারা ইমিগ্রেশন কোর্ট কর্তৃক ডিপোর্টেশনের আদেশ লাভ করবেন। কিন্তু এর মধ্যে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক মাস বা বছরের পর বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
Posted ১:২৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh