বাংলাদেশ রিপোর্টার : | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
বাইডেন প্রশাসন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্টেশন সীমিত করার ঘোষণা দেয়ার পর মেক্সিকো সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে আগ্রহী বিদেশিদের ভিড় প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। চলতি অক্টোবর মাসে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ বিদেশি সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। ২০২১ সালে মেক্সিকো সীমান্তে ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার পেট্টোলের (সিবিপি) হাতে যেসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে যারা একা বা পরিবারসহ নয়, তাদের প্রায় সকলকে সীমান্ত থেকেই মেক্সিকো পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘টাইটেল-৪২’ নামে এক স্বাস্থ্যবিধি। মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ বিধি কার্যকর করেছে কোভিড ১৯ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দূর করার উদ্দেশ্যে। তবে অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টাকারীদের এই সংখ্যা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। সদ্য সমাপ্ত আর্থিক বছরের প্রথম ৯ মাসে সিবিপি ১১ লাখ ৮০ হাজার ২০৪ জন বিদেশির অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে। তাদের কাউকে আটক করা হয়নি।
অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে এমন বিদেশিও রয়েছে, যারা বার বার সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। একা অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টাকারী বিদেশির সংখ্যা দুই তৃতীয়াং বলে সিবিপি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের জন্য যারা চেষ্টা করেছে, তাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে পূর্ববর্তী বছরের ৬২,৫৬০ জনকে সীমান্তে আটকের স্থলে ১১৭,৩৯৭ জনকে আটক করা হয়, যারা একা ছিল বা তাদের পরিবারের আর কোন সদস্য তাদের সঙ্গে ছিল না। এই সংখ্যা সীমান্ত অতিক্রমের প্রচেষ্টারত বিদেশিদের মোট সংখ্যার ৬৬ শতাংশ।
ট্রাম্প প্রশাসন অনুপ্রবেশকারী বিদেশিদের দ্রুত বহিস্কার বা ডিপোর্ট করার উদ্দেশ্যে ‘টাইটেল ৪২’ নামে একটি বিধি আওতায় কাষ্টমস এন্ড বর্ডার পেট্টোল যেসব বিদেশি একা তাদেরকে সীমান্ত থেকে হটিয়ে মেক্সিকোতে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে এবংব বাইডেন প্রশাসনের সময়েও তা কার্যকর রয়েছে। এই বিধি প্রয়োগ করার কারণে বাইডেন প্রশাসনের প্রথম পাঁচ মাসে বাইডেন প্রশাসন সফলভাবে ৬৪ শতাংশ বিদেশিকে সীমান্ত থেকেই বহিস্কার করতে সক্ষম হয়। এর ফলে পরবর্তী মাসগুলোতে সীমান্ত অতিক্রমের প্রচেষ্টা কিছুটা হ্রাস পেলেও জুলাই ও আগষ্ট মাসে তা আবারও বেড়ে যায় এবং শুধু জলাই মাসেই অনুপ্রবেশ করে দুই লাখের বেশি বিদেশি। তবে অভিবাবকহীন শিশু ও সপরিবারে সীমান্তে উপস্থিত হওয়া বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন আদালতে তাদের ডিপোর্ট করার প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জ করে মামলা ঠুকে দিয়েছে এবং এই সংখ্যা অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টাকারীদের মোট সংখ্যার ২৮ শতাংশের কম নয়।
‘টাইটেল ৪২’ ১৯৪৪ সালের ‘পাবলিক হেলথ সার্ভিসেস ল’র একটি উপ-ধারা, যা প্রয়োগ করে সরকার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত জরুরী অবস্থায় দেশে প্রবেশ করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এমন একটি জরুরী অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ইন্টারন্যাশনাল রেসক্যু কমিটির ইমিগ্রেশন বিষয়ক ডাইরেক্টর ওলগা বায়রিন জানান, বিগত কয়েক দশকে এই বিধির তেমন প্রয়োগ হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন কোভিড ১৯ বিস্তারের সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে ‘টাইটেল ৪২’ এর ব্যাখ্যাকে ব্যবহার করার আদেশ দেয়, যার ফলে সীমান্ত অতিক্রমের পর বিদেশিদের এসাইলাম বা রাজনৈতিক আবেদন করার সুযোগ না দিয়ে তাদেরকে দ্রুত বহিস্কার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে অথবা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে এসে এসাইলামের জন্য আবেদন করার অধিকার রয়েছে। ইউএস ডিষ্ট্রিক্ট জজ এমেট সুলিভান গত ১৬ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেছেন যে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের উদ্দেশ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রশাসন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেশনের মাধ্যমে যে ‘টাইটেল ৪২’ বাস্তবায়ন করেছে, সেটি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমকারী রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহনেচ্ছুদের আবেদন করা থেকে প্রতিহত করার কোন এখতিয়ার বাইডেন প্রশাসনকে দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবতই বলা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ মিলিয়ন অবৈধ ইমিগ্রান্ট রয়েছে, যাদের ব্যাপারে দীর্ঘদিন যাবত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে না। কিন্তু গতবছর ফাউন্ডেশন এগেইনস্ট ইনটলারেন্স এন্ড রেসিজম (এফএআরআর) বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ১৪ মিলিয়ন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট বসবাস করছে। এ সংখ্যা হয়তো আরো বৃদ্ধি পাবে। কারণ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারী আলেজান্দ্রো নিকোলাস মায়োরকাস বলেছেন যে, প্রশাসন ডিপোর্টেশনকে সীমাবদ্ধ করেছে, কারণ প্রশাসনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা আমাদের সীমান্ত ও আইন লংঘন করেছে, তাদেরকে আইনি মর্যাদা দিয়ে নাগরিকত্বের রদিকে এগিয়ে নেয়া এবং যারা অপরাধ সংঘটন করেছে তাদের আটক করা। তার এ ঘোষণা ডেমোক্রেটদের হতাশ ও রিপাবলিকানদের চরম ক্ষুব্ধ করেছে।
এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাইডেন প্রশাসন গত আগস্ট মাসে ৪৩ হাজার ইমিগ্রান্টকে ডিটেনশন থেকে মুক্ত করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে চার লাখের অধিক ইমিগ্রান্ট সীমান্তে পৌঁছেছে, যা জুলাই ও আগস্ট মাসে আগত সংখ্যার দ্বিগুণ।
চলতি অক্টোবর মাসেও সাড়ে তিন থেকে চার লাখ বিদেশি সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ধারণা করছে। মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে ১২৫,০০০ বিদেশি সীমান্তে পৌছবে এবং পানামা জানিয়েছে যে, ৬০ হাজারের মত হাইতিয়ান উত্তর দিকে আমেরিকান সীমান্তের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।
Posted ২:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh