বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির ৯টি স্পেশালাইজড স্কুলে ছাত্র ভর্তিত্রে জাতিগত বৈষম্যের যে অভিযোগ বিগত বছরগুলোতেও ছিল, এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ফলাফলের প্রেক্ষিতে নবনিয়ুক্ত স্কুল চ্যান্সেলর মেইশা রস পোর্টার সিবিএসনিউইয়র্ক এর হ্যাজেল শানচেজকে বলেছেন যে স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা অবসানের জন্য তিনি স্টেট এডুকেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। মেইশা বলেন, গত ২১ বছর যাবত নিউইয়র্ক সিটির শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আমি জানি যে, আমাদের স্পেশালাইজইড স্কুলগুলোতে আরও অধিক সংখ্যক ছাত্র ভর্তি হতে পারে, যদি তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়। এই স্কুলগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য যে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতেও প্রতিবছর একই চিত্র দেখা যাবে। ছাত্ররা যাতে ন্যায়সঙ্গত ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এই স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ পায় আমরা সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।
টেনথ গ্রেডের ছাত্রী ম্যালেনা ভেগা বলেছেন যে তিনি যখন এইটথ গ্রেডে ছিলেন তখন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং লাগর্ডিয়া হাইস্কুলে ভর্তির সুযোগ পান, কিন্তু ফলাফল অনুযায়ী তার আরও ভালো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। তার মতে, ‘ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই ত্রুটি রয়েছে এবং এটি অন্যায়। ছাত্ররা ইতোমধ্যে যা জানে তার উপর পরীক্ষা নেয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তারতম্য ঘটার কথা নয়। তবুও অনেক ছাত্র এই পরীক্ষার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে শুধু ভালো স্কোর করার জন্য।’
ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন জানিয়েছে যে এ বছর এইটথ গ্রেডের ২৩,৫০০ এর অধিক ছাত্র স্পেশালাইজড হাইস্কুলে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। গতবছরের চেয়ে এ সংখ্যা কিছু কম। পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ৪,২৬২ জন ছাত্রকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে ৫৩.৭ শতাংশ এশিয়ান। কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্রদের উত্তীর্ণের হার আবারও কমে গেছে। গত বছরের ১১ শতাংশের চেয়ে কমে এবার উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। স্টাইভেসেন্ট স্কুলে এবার ৭৪৯ জন ছাত্র ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৮ জন আফ্রিকান-আমেরিকান, ১ শতাংশের সামান্য বেশি।
অথচ নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রসংখ্যা ২৫ শতাংশের অধিক। এশিয়ান ছাত্ররা ছাড়া ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শ্বেতাঙ্গ ছাত্রসংখ্যা ২৭.৯ শতাংশ, ল্যাটিনো ৫.৪ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ৩,৬ শতাংশ। মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এ পরিস্থিতির উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্বেও মেয়র হিসেবে তার বিগত আট বছরের প্রশাসনে স্পেশালাইজড স্কুলগুলোতে ছাত্রভর্তির চিত্রে সামান্য প্রতিশ্রুতির সামান্য প্রতিফলনও তো ঘটেইনি, বরং ভর্তি চিত্রে দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্র ভর্তি আগের ভচরগুলোর তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে তিনটি স্কুল স্টাইভেসেন্ট, ব্রঙ্কস সায়েন্স ও ব্রুকলি টেক এ সংখ্যালঘু প্রান্তিক গোষ্ঠী থেকে আগত ছাত্রসংখ্যার আকাল চোখে পড়ার মতো।
এসব স্কুলে ভর্তির জন্য যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সেই পরীক্ষার ফলাফলে অনুত্তীর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্রদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে ‘স্পেশালাইজড হাইস্কুল এডমিশনস টেস্ট’ (ঝঐঝঅঞ) নামে যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সেটি তাতে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রান্তিক অবস্থায় থাকা অনেক ছাত্রের ভর্তির সুযোগ বন্ধ করার একটি উপায় ছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া এই বিশেষায়িত স্কুলগুলোর উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক, বিশেষ ধরনের কারিকলাম তৈরি, এডভান্সড ক্লাস পরিচালনার ক্ষেত্রে যে মনোযোগ ও সম্পদ ব্যয় করা হয় তা কার্যত বৈষম্য সৃষ্টির শামিল।
সিটির এলিট হাইস্কুল খ্যাত এই ৯টি স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তি হওয়ার একমাত্র উপায় ভর্তি পরীক্ষা, যা ক্রমেই অতি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। কিন্তু বাস্তবে সিটির মাত্র ২০ শতাংশ ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং উত্তীর্ণরা মেধা অনুযায়ী ৯টি স্কুলের যে কোন একটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে। নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো হওয়া সত্বেও স্পেশালাইজড স্কুলগুলোতে প্রতিবছর যে ছাত্র ভর্তি হয় তাদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্র সংখ্যা ১০ শতাংশের কম। এশিয়ান ছাত্ররাই স্পেশালাইজড স্কুলগুলোতে অধিক সংখ্যায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। সিটিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলে যায় এমন এশিয়ান ছাত্র সংখ্যা ১৬ শতাংশ হলেও স্পেশালাইজড স্কুলে তাদের সংখ্যা ৬২ শতাংশ। সিটির এশিয়ান ও শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটির লোকজন মনে করেন যে স্পেশালাইজড স্কুলগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করেছে। অনেকে মতে এই পদ্ধতি সংস্কার করার ধারণা অত্যন্ত অন্যায় ও অসঙ্গত হবে। তাদের যুক্তি হলো, এশিয়ান পরিবার ও ছাত্ররা আসে তাদের উদ্যোগের অংশ হিসেবে। তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয় সম্পন্ন, প্রথম অথবা দ্বিতীয় প্রজন্মের ইমিগ্রান্ট।
ভর্তি পরীক্ষার নামে সিটির স্পেশালাইজড স্কুলের বিরুদ্ধে সামাজিক বৈষম্য টিকিয়ে রাখার অভিযোগ ও স্কুলগুলোর বিশেষায়িত মর্যাদার অবসান ঘটানোর দাবীতে আন্দোলন চলছে দীর্ঘদিন থেকেই এবং আমেরিকার সর্ববৃহৎ সিভিল রাইটস গ্রুপ “ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপল (এনএএসিপি) ২০১২ সালে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছিল। মামলার অভিযোগ বিবরণীতে বলা হয়, নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের অর্ধেকেরও বেশি কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো হওয়া সত্বেও পূর্ববর্তী বছর (২০১১ সাল) স্পেশালাইজড স্কুলগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় স্টাইভ্যাসেন্ট স্কুলে মাত্র ১.২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ এবং ২.৪ শতাংশ ল্যাটিনো ছাত্র ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া আড়াই ঘন্টার প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় মাল্টিপল-চয়েস প্রশ্নের মধ্যে ত্রুটি ও বৈষম্য রয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার মেধাবী আফ্রিকান-আমেরিকান ও ল্যাটিনো ছাত্র অংশগ্রহণ করছে, কিন্তু তাদেরকে অনুত্তীর্ণ বলে ভর্তি করা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্রদের অভিভাবকদের সংগঠন প্যারেন্টস এডভোকেটিং ফল এক্সিলারেটেড লার্নিং এর পক্ষে রস পোর্টার নিউইয়র্ক স্টেট অফ এডুকেশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্পেশালাইজ স্কুলের জন্য ভর্তি পরীক্ষার অবসান ঘটাতে। তিনি বলেন, ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনকে অবশ্যই উত্তম কার্যক্রম দেখাতে হবে। বর্তমান ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতিতে ন্যূনতম সংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক ছাত্র ভর্তি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ প্যারেন্ট লিডারস ফর এডভান্সড কারিকুলাম এন্ড এডুকেশন এনওয়াইসি’র মউদ ম্যারন বলেছেন, ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন তাদের প্রচেষ্টাকে প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোর কাছে পৌছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা ক্ষমার অযোগ্য ত্রুটি।
Posted ৪:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh