বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ৩ নভেম্বর। করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে এবারের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে প্রচণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিশেষ করে এবারের নির্বাচন নানা দিক থেকেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ নির্বাচন শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নয়, একই দিনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ভাইস প্রেসিডেন্ট, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫টি আসন ও সিনেটের ৩৫টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হলেও পরিকল্পনা করে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এবারও ভোট দেয়া খুব কঠিন হবে না। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ভোট দেয়ার তিনটি উপায়ের কথা বলা হয়ে, যা প্রতিটি ভোটারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:
ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান: নভেম্বরের সূচনা মঙ্গলবার ভোটাররা স্কুল, লাইব্রেরী বা চার্চে স্থাপন করা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে পোলিং বুথের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু আগামী ৩ নভেম্বর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে ভিন্ন এক চিত্র দেখা দিতে পারে করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে। ভোটাররা মুখে মাস্ক পরে ৬ ফুট দূরে দূরে দাঁড়াবে। সবাই চাইবে তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে। ফলে ভোট দিতে সাধারণত যে সময়ের প্রয়োজন হয়, তা চেয়ে বেশি সময় লাগবে এবার।
ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে অভিন্ন কী থাকবে: অধিকাংশ নির্বাচনী এজেন্সি ভোট কেন্দ্রে বরাবর সামঞ্জস্যপূর্ণ ভোট গ্রহণ ব্যবস্থা রাখবে, যাতে ভোট দেয়ার জন্য ঠিক কোথায় যেতে হবে সে সম্পর্কে কেউ দ্বিধায় না পড়ে। কেউ যদি সবসময় নিকটস্থ হাইস্কুলে ভোট দিয়ে থাকেন, তাহলে এবারের নির্বাচনের দিনেরও ভোট কেন্দ্র স্থাপিত হবে ওই এলাকার জন্য। কিন্তু মহামারীর কারণে অথবা ভোট কর্মীদের সংখ্যাল্পতার কারণে ভোট কেন্দ্র যদি পরিবর্তিত হয়, তাহলে স্থানীয় নির্বাচনী এজেন্সির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী প্রশাসক নির্বাচনের তারিখের কয়েক সপ্তাহ আগে রেজিষ্টার্ড ভোটারদের কাছে একটি পোষ্টকার্ড পাঠিয়ে জানিয়ে দেবেন যে ভোট দেয়ার জন্য তাদেরকে কোথায় যেতে হবে। পরিচিতি সনাক্ত করার জন্য ভোটারদেরকে অবশ্যই তাদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। ভোটারদের একটি তালিকা থাকবে। কেউ যদি রেজিষ্টার্ড ভোটার না হয়ে থাকেন তাহলে ২০টি ষ্টেট ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নির্বাচনের দিনেই ভোটকেন্দ্রে ভোটার রেজিষ্ট্রেশনের সুবিধা রয়েছে।
তালিকায় নাম না থাকলে কীভাবে ভোট নেয়া হবে: আপনার প্রিসিঙ্কটে যদি ভোটার তালিকায় আপনার নাম না থাকে, অথবা আপনি যদি যথাযথ সনাক্তপত্র আনতে না পারেন, তাহলে আপনাকে সম্ভবত একটি অস্থায়ী ব্যালটে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। ভোট গণনার সর্বশেষ যে মেয়াদ থাকে সেই সময়ের মধ্যে অস্থায়ী ব্যালটও গণনা করা হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ভোটারকে স্থানীয় প্রধান নির্বাচনী অফিসে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র এনে দেখাতে হবে যে তিনি যেখানে বাস করেন সেখানে ভোট দেয়ার যোগ্য। আপনার যদি মনে হয় যে ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন হবে, অথবা আপনার কোন প্রতিবেশী ভোট দিয়ে দীর্ঘ লাইনের অভিজ্ঞতার কথা আপনাকে জানান, তাহলে আপনি সাথে একটি লন চেয়ার ও একটি ভালো বই বা আপনার ফোন সেটের চার্জ শেষ হয়ে গেলে একটি এক্সটার্নাল চার্জার সাথে আনতে পারেন। আপনি যদি ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সামান্য কিছু সময় আগে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হন, তাহলে খেয়াল রাখবেন যে, লাইনে দাঁড়ানো প্রতিটি ভোটারকে ভোট দানের সুযোগ দেয়া হবে, সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের ভোট গ্রহণ করা হবে।
যা করতে হবে: নিরাপদে ভোট দেয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। প্রস্তুতি নেয়ার আগে একটি নমুনা ব্যালট পেপারের উপর চোখ বুলিয়ে নিন। সাথে মাস্ক ও হ্যাণ্ড স্যানিটাজার রাখুন। সম্ভব হলে মধ্য-সকালে ভোট কেন্দ্রে যান, যখন ভোটারদের সারি ছোট থাকতে পারে। স্বল্প ভোটকর্মীর কারণে যদি আপনার বরাবরের ভোট কেন্দ্র যদি অন্য স্থানে নেয়া হয়, তাহলে স্থানীয় বোর্ড অফ ইলেকশন অফিসে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন। আপনার ষ্টেটে ভোট দেয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো সাথে নিয়ে যান।
আগাম ভোট দান: অধিকাংশ ষ্টেট এবং ওয়াশিংটন ডিসি ভোটারদেরকে নির্বাচনের দিনের আগেই একটি কেন্দ্রীয় স্থানে ভোটারদের ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়। কেন্দ্রীয় স্থান বলতে সিটি হল অথবা বোর্ড অফ ইলেকশন দফতর হতে পারে। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে আগাম ভোটদানের সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরো সুপরিস্থান যেমন স্টেডিয়ামসহ বড় বড় লীগ স্পোর্টস সুবিধা গ্রহণ করা হয়েছে।
সঠিক স্থানে যান: ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে আগাম ভোট প্রদান এবং নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, আগাম ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার ঠিকানা বা কোথায় বাস করেন তা বিবেচনা করা জরুরী নয়, বরং আপনি আপনার এলাকার বাইরে গিয়েও আগাম ভোট দিতে পারেন। নির্বাচনের দিন ভোটারকে তার নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্থানীয়ভাবে সনাক্তযোগ্য যেকোন পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোট দিতে হবে। আগাম ভোটের ক্ষেত্রে লাইন কত দীর্ঘ হবে তা নির্ভর করে আপনার এলাকায় ক’দিন পর্যন্ত আগাম ভোট নেয়া হবে তার উপর। অনেক স্টেটে আগাম ভোটার নেয়া হয় রোববার দিন এবং যারা চার্চে যান তারা একযোগে এসে ভোট প্রদান করেন। আপনি আগাম ভোট দেয়ার স্থানে যাওয়ার পর আগাম ভোট দান পদ্ধতি ও নির্বাচনের দিন ভোট দেয়ার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য দেখতে পাবেন না।
অনুপস্থিত ভোটারের ব্যালট: আপনি যদি ডাকযোগে অনুপস্থিত ভোটার হিসেবে ব্যালট পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন অথবা আপনি অনুপস্থিত ব্যালট পেয়ে থাকেন; কিন্তু কোনো কারণে ব্যক্তিগতভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে আপনার ভোটকেন্দ্রে আপনাকে সতর্কতার সাথে যাচাই করা হতে পারে। ভোটকর্মীরা তাদের কম্পিউটার ঘেঁটে নিশ্চিত হবেন যে, আপনি অনুপস্থিত ব্যালট লাভ করলেও সেটি ইতোমধ্যে জমা দেননি। এতে স্বাভাবিক সময়ের জন্য আপনার একটু বেশি সময় লাগতে পারে। আগাম ভোট হোক অথবা ভোটের দিনে ভোট দেয়ার ব্যাপার হোক, ভোটের স্থান, তারিখ, সময় জানার জন্য ওয়েবসাইট দেখে ুিনন। একটি বিষয় মনে রাখবেন যে আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে আগাম ভোট দিতে চেষ্টা করেও দীর্ঘ লাইন দেখে ভোট না দিয়ে ফিরে আসেন, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য নির্বাচনের দিন ভোট দেয়ার সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে।
ডাকযোগে ভোট প্রদান: ডাকযোগে ভোট প্রদানের অর্থ হলো বাড়ি থেকে ভোট দেয়া। আপনি হয়তো সবসময় ব্যক্তিগতভাবে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু ডাকযোগে ভোট দেয়া আপনার নতুন অভিজ্ঞতা হবে এবং এটি বেশ সহজ। অধিকাংশ ষ্টেটে প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো ইলেকশন বোর্ডকে আপনার কাছে ব্যালট পেপার পাঠানোর অনুরোধ। এক এক রাষ্ট্রে নিয়মে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি অনলাইনে ব্যালটের জন্য আবেদন করতে পারেন। গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্রের ছবি আপলোড করার প্রয়োজন হতে পারে। অথবা কাগজে লিখে আবেদন পাঠালে পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে। আপনার ব্যালট যাতে গণনা হয়, সেজন্য বিধি অনুসরণ করুন: ব্যালট ঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কিনা এবং ভোটার রেজিষ্ট্রেশনের সময় যে স্বাক্ষরের সঙ্গে মিল রেখে ব্যালটে স্বাক্ষর দিয়ে পাঠাতে হবে, যাতে স্বাক্ষর না থাকার কারণে ব্যালট গণনার বাইরে না রয়ে যায়। ব্যালট পাঠাতে বিলম্ব করা উচিত নয়।
Posted ৩:৪৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh