মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
মহামারী থেকে উদ্ধার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত শনিবার হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে পাস হয়েছে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যয় বরাদ্দ সম্বলিত বিল পাস হয়েছে। বিলটি পাস হওয়ার ফলে আমেরিকান নাগরিক, স্থায়ী বাসিন্দা ও কর প্রদানকারী বৈধ ইমিগ্রান্ট মাথাপিছু ১,৪০০ ডলার হারে স্টিমুলাস চেক পৌঁছানোর কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। যদিও বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে সিনেটে অনুমোদিত হতে হবে। হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আশা করছেন যে সিনেটে বিলটি পাসে বিলম্ব ঘটবে না। কিন্তু সিনেটে বিলটি বিপাবলিকানদের বাধার সম্মুখীন হতে পারে। কারণ সিনেটে ডেমোক্রেটদের নামেমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এরই মাঝে ভার্জিনিয়ার ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর জো ম্যৗানসিন বিলটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট হিসেবে সপ্তাহে ৪০০ ডলারের পরিবর্তে ৩০০ ডলার করতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ কিছু ডেমোক্রেট সিনেটর চাইছেন যে বিলটি বাইপার্টিজান ভিত্তিতে পাস হোক। তবে এ সম্ভাবনা কম। অধিকাংশ রিপাবলিকান সিনেটর বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সিনেটে ডেক্রোক্রেট সিনেটর ৫০ জন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, যিনি পদাধিকার বলে সিনেটের চেয়ারম্যান, তার ভোট ডেমোক্রেটদের পক্ষে গেলে বিলটি পাস হতে পারে।
কিন্তু সিনেটর ম্যানসিনের মত অন্য কোনো ডেমোক্রেট সিনেটর যদি বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাহলে বিলটি পাস হবে না। সে অবস্থায় বিলটির অধিকতর সংশোধনের জন্য আবার হাউজে ফেরত পাঠানো হবে। তবে সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সকল পর্যায়ের মানুষ, এমনকি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দও বিলটি পাসের পক্ষে। বিলটি সিনেটের অনুমোদন লাভের পর ১৪ মার্চের আগে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য হোয়াইট হাউজে পাঠাতে হবে। রিপাবলিকানরা যদি বিলটি সমর্থন না করে তাহলে আগামী ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে আভাস দিয়েছে এসএসএনবিসি’র জরিপ।বিলটিতে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় কর্মচ্যুতদের মধ্যে এখনো তাদের বেকারত্ব ঘোচেনি, বা খন্ডকালীন কাজ করে কোনভাবে দিনাতিপাত করছেন, তাদের জন্য আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত সপ্তাহে ৪০০ ডলার হারে ফেডারেল আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট দেয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটিও এই বিলে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। হাউজে বিলটি পাস হয়েছে ২১৯-২১২ ভোটে। এর মধ্যে দু’জন ডেমোক্রেটিক রিপ্রেজেন্টেটিভ রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন কর্তৃক স্বাক্ষরিত হলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্টিমুলাস সুবিধা লাভ করবেন আট কোটির অধিক আমেরিকান ও বৈধ ইমিগ্রান্ট।
বিলটি পাসের ফলে যারা এককভাবে বার্ষিক ৭৫ হাজার ডলার ও যৌথভাবে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত আয় করেন তারা মাথাপিছু ১,৪০০ ডলার, যৌথভাবে ২,৮০০ ডলার এবং নির্ভরশীল সহ পরিবার সর্বোচ্চ ৫,৬০০ ডলার হারে লাভ করবেন। যারা বার্ষিক এককভাবে ১ লাখ ডলারের বেশি ও যৌথভাবে ২ লাখ ডলারের বেশি আয় করেন তারা স্টিমুলাসের সুবিধা পাবেন না। এই হিসাব করা হবে ২০১৯ ও ২০২০ সালের আয়ের ভিত্তিতে যে কারা স্টিমুলাস চেক পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। এই বিলে স্টিমুলাসের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীলদের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে। আমেরিকান এনটারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের এক রিপোর্ট অনুযায়ী সুবিধাভোগী গ্রুপের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ লোক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন, যারা প্রধানত কলেজ ছাত্র, প্রতিবন্ধী বয়স্ক ব্যক্তি এবং বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরা। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চেক পাঠানো শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রিপাবলিকানদের ভোট ছাড়াই ডেমোক্র্যাটরা প্রণোদনা প্যাকেজটি দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে বিলটি সিনেটে উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এখানেই ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুণ করার বাইডেনের পরিকল্পনাটি বাদ পড়তে পারে। মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে এটিকে বাইডেনের উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর বিলটি বিস্তৃতভাবে জনপ্রিয়। কারণ স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটে অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে আমেরিকানরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাউজের বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান জন ইয়ারমুথ বলেন, আমরা সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কার্যত প্রত্যেকেই বুঝতে পারে এটি কতটা সংকটপূর্ণ অবস্থা। এখনই মহামারীটি বন্ধ করার কিংবা আমাদের পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য নয়; বরং আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি সরবরাহ করতে হবে। যদিও এজন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে।আগের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতার মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় আগামী ১৪ মার্চ থেকে লাখ লাখ মানুষ বেকারত্ব সুবিধা হারাতে চলেছে। এজন্য সিনেটে অনুমোদন নিয়ে বিলটি বাইডেনের ডেস্কে পৌঁছানোর তাড়া রয়েছে। যদিও বিলটি সিনেটে রিপাবলিকানদের সমর্থনের কোনো লক্ষণ নেই। তারা প্রণোদনা পরিমাণ, সরকারি ঋণ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি নিয়ে সমালোচনা করছেন। উত্তর ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান প্রতিনিধি প্যাট্রিক ম্যাকহেনরি বলেছেন, কেউ তর্ক করছে না যে সংকট উত্তরণের জন্য কিছু করার দরকার নেই। আমরা যা বলছি, তা এই প্রণোদনা প্যাকেজকে লক্ষ্য করে।
সিনেটকে দ্রুত করোনা বিল পাশ করানোর আহ্বান বাইডেনের
করোনা মহামারির কারণে দুর্বল হওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও মার্কিনিদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে নগদ অর্থ পাঠানোর জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের রিলিফ প্যাকেজ বিল প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে। এখন সময় নষ্ট না করে বিলটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য উচ্চকক্ষ সিনেটকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জো বাইডেন এই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। আমরা এখনই পদক্ষেপ নিলে চূড়ান্তভাবে এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে পারব। আমাদের অর্থনীতি আবারও সচল হবে। হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এই দুর্যোগ থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। আমরা সবাইকে টিকা দেওয়া থেকে মাত্র এক পা দূরে আছি। মার্কিনিদের পকেটে ১৪০০ ডলার দেওয়া থেকে এক পা দূরে আছি। এসব সম্ভব হবে সিনেটের ভোটের মাধ্যমে। এ সময় তিনি প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
লাভবান হবেন বাংলাদেশি আমেরিকানরা
অবশেষে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার ‘করোনা তহবিল’ বিলটি পাস হয়েছে। এতে লাভবান হবেন সাড়ে ৮ কোটি মার্কিন নাগরিক ছাড়াও ১০ লাখ বাংলাদেশি আমেরিকান। বিলটি পাস হওয়ায় বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের কম (স্বামী-স্ত্রীর দেড় লাখ ডলার) আয়ের মার্কিন নাগরিকরা মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাবেন। আর বেকাররা সপ্তাহে ৪০০ ডলার করে ফেডারেল ভাতা পাবেন আগস্ট পর্যন্ত। উল্লেখ্য, ফেডারেল ন্যূনতম মজুরি ২০০৭ সালে প্রতি ঘণ্টা ৭ দশমিক ২৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এরপর আর বাড়ানো হয়নি। এ অবস্থায় নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন স্টেটের ২৫টিরও অধিক সিটি ও স্টেট তার ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টা বাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে পাস হওয়া পর্বতসম এই বিলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাইডেন। ২১৯-২১২ ভোটে পাস হওয়া এ বিলে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দুই কংগ্রেসম্যানও বিরোধিতায় ছিলেন। তারা বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলসি আশা করছেন যে, সময়ের দাবি অনুযায়ী সিনেটও বিলটি পাস করবে। সারা যুক্তরাষ্ট্রে ভয়ংকর একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে, অনেক মানুষ দু’বেলা খাবার পাচ্ছে না। শিশুর অধিকাংশই পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে দিনাতিপাত করছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্য হতে পারে না।
Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh